1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
দেশি বিদেশী পর্যটকদের নজর কেড়েছে সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
বাংলাদেশ । শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দেশি বিদেশী পর্যটকদের নজর কেড়েছে সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

মোঃ আতিকুর রহমান:
  • প্রকাশিত: রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১
  • ১২৩৩ বার পড়েছে

পাহাড়, বন, লেক, নদী বেষ্টিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রান্তিক এক জনপদ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনুপম নিদর্শন ঝর্ণা বা পাহাড়। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা ফেলে ঝর্ণা জলে ভিজতে কার না ভালো লাগে। রূপ লাবণ্যের বাংলাদেশে পাহাড়-নদী সবুজে শ্যামলের সৌন্দর্য হাতছানি দিয়ে ডাকে ভ্রমণ পিপাসুদের। দরকার শুধু একটু সময়ের। মনকে দু’দণ্ড শান্তি দিতেই প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ভীড় করে অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমিখ্যাত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায়। তাহিরপুর উপজেলাটি ভাটি এলাকা হিসাবে পরিচিত হলেও প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌর্ন্দযে ভরপুর। এটিকে সুনামগঞ্জ জেলার প্রানকেন্দ্রও বলা হয়। এই উপজেলাটিতে রয়েছে তিনটি শুল্ক ষ্টেশন ,যে ষ্টেশনগুলো দিয়ে প্রতিদিন ভারত থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসে হাজার হাজার মে.টন কয়লা ও চুনাপাথর।বড় বড় ট্রাকে করে ভারত থেকে কয়লা, চুনাপাথর এনে এখানে নামানো হয়। কয়লা ভর্তি ট্রাকগুলো যখন হাজার ফিট উচ্চতার মেঘালয় পাহাড়ের আকাঁবাকাঁ পথ দিয়ে নিচে নেমে আসে তখন আপনার মনে হবে এই বুঝি উল্টে গেলো। ট্রাক উঠা নামার দৃশ্যগুলো সত্যিই দেখার মত। প্রতিদিন সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাবসায়ীরা ছুটে আসেন এই এলাকায়। এই উপজেলা থেকে সরকার প্রতি বছর কয়েক’শো কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকেন।

অপরদিকে তাহিরপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশি বিদেশী পর্যনটকদের নজর কেড়েছে। প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের পদভারে মুখরিত হয় উপজেলাটি। এক কাথায় পর্যটকদের ভ্রমণকে আনন্দদায়ক ও সার্থক করে তুলতে পারে এই তাহিরপুর। সুনামগঞ্জ জেলা সদর থেকে ২৫/৩০ কি. মি. দূরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কুলঘেষা সীমান্ত জনপদ ও হাওরাঞ্চলখ্যাত তাহিরপুর।উপজেলার সীমান্তবর্তী ভারতের খাসিয়া, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতির দৃশ্য যেন ছবির মতো পটে আঁকা। প্রকৃতি যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে! কী বৃষ্টি কী রোদ, সকল বাধা উপেক্ষা করেই ছুটছেন সবাই। সারা বছরই এই পর্যটন স্পটগুলো শিক্ষার্থী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি, দেশ-বিদেশের সৌন্দর্য পিপাসু ও প্রকৃতি প্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত থাকে। তবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় দৃষ্টি নন্দন স্থানগুলো মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

প্রকৃতির রাজপুত্র খ্যাত মেঘালয় পাদদেশস্থ তাহিরপুর প্রাকৃতিক সম্পদ, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর। দেশী-বিদেশী পর্যটক ও সাধারণ দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হচ্ছে এখানকার নৈসর্গিক সৌন্দর্যে। প্রতিনিয়ত প্রকৃতিপ্রেমিদের ভীড়ে মুখরিত হচ্ছে রূপ-লাবণ্যে ঘেরা ভাটি-বাংলার রূপবৈচিত্রময় এই জনপদ। এখানে রয়েছে এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রামসার সাইট ওয়ার্ল্ড হেরিটেজখ্যাত বিশাল জলরাশির টাঙ্গুয়ার হাওর। নীলাভ টাঙ্গুয়ার নয়নাভিরাম দৃশ্য বিশাল হিজল, করচ বাগান। এখানে দর্শনার্থীরা আপন মনে ঘুরছেন মিতালীর সাথে। টাঙ্গুয়ার স্বচ্ছ জলে আপনি হারিয়ে যাবেন অন্য এক জগতে। শীতকালে সুদুর সাইবেরিয়া থেকে ঝাকে ঝাকে অতিথি পাখি উড়ে এসে আশ্রয় নেয় এই টাঙ্গুয়ার হাওড়ে। অতিথি পাখিদের অভয়াশ্রম নামে পরিচিত এই হাওড়টির পাড়ে রয়েছে ৮৮টি গ্রাম। টাঙ্গুয়ার হাওড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাওড় তীরবর্তী গুলাবাড়ি গ্রামের পাশেই নির্মান করা হয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার । ওয়াচ টাওয়ারের উপর দাঁড়ালে দেখা যাবে নান্দনিক সব দৃশ্যপট। ছয়কুড়ি কান্দা আর নয় কুড়ি বিলের সমন্বয়ে প্রকৃতির এক অপরুপ নির্মান এই টাঙ্গুয়ার হাওড়। হাওড়পাড়ে অবস্থিত ৮৮টি গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকা এই হাওড়ের উপর নির্ভরশীল। সুনামগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা ও নেত্রকোনা জেলার একটি উপজেলা নিয়ে হাওড়টির বিস্তৃতি। তবে হাওড়ের ৬০ভাগসহ মুল অংশটির অবস্থান তাহিরপুর উপজেলায়।

টাঙ্গুয়ার হাওয়ের কিছু অদূরেই আরেক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মেঘালয়ের কোল বেয়ে নেমে আসা লাকমাছড়া ঝর্ণা। এখানে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে পারবেন স্রোতের অনুকুলে মিতালীর সাথে। এর পাশেই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ট্যাকেরঘাট সীমান্ত এলাকায় রয়েছে নীল রঙ্গে রূপায়িত শহীদ সিরাজ লেক যা নীলাদ্রি লেক নামেও পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ে এই স্থানেই পাকিস্তানীদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন সিরাজ নামীয় এক সূর্যিসন্তান। উনার নামেই লেকটির নামকরন করা হয়েছে শহীদ সিরাজ লেক। এই লেকের অদূরেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরবিক্রম সিরাজসহ নাম না জানা কয়েকজন শহীদের সমাধি। এই লেককে বলা হয় পৃথিবীর একটুকরো স্বর্গ।

আর একটু সামনে এগুলেই চোখে পড়বে প্রায় ৩শ ফুট সুউচ্চ নয়নাভিরাম বারেকটিলা, পাহাড়ি আঁকাবাকা উঁচু পথ বেয়ে উপরে উঠলে চোখে পড়ে ঘন সবুজের সমাহার সারিসারি ফলজ,বনজ ও ঔষধী গাছের সমন্বয়ে প্রকৃতির আরেক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সবুজ বনায়ন বারেক টিলা। টিলার ওপর একটু পর পরই রয়েছে আদিবাসীদের ঘড়। আদিবাসী বসতির মাঝে মাঝে রয়েছে বাঙালি বসতি । রয়েছে আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি । এখানকার আদিবাসীরা আপনাকে গ্রাম ও পাহাড় ঘুড়ে দেখাতে সাহায্য করবে। এরা খুব পরিশ্রমি ও অতিথিপরায়ন। এদের ভাঙা ভাঙা কন্ঠে বাংলা বলার ভঙ্গিটা আপনাকে আর্কষণ না করে পারে না। পাহাড়ের উপর বাংলাদেশ বর্ডার র্গাড জওয়ানদের টহলের জন্য রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। যা পর্যটকদের আরও কাছে টানে। ওয়াচ টাওয়ারের কাছে দাড়ালে যে কাউকে মুগ্ধ করবে ভারতের মেঘালয়ের দৃষ্টিনন্দন সারি সারি খাসিয়া পাহাড়, মনে হবে এখানে দাঁড়িয়ে রূপসী বাংলাকে দেখছেন। বারেক টিলার উপর থেকে দক্ষিন পশ্চিম দিকে তাকালে মনে হয় তাহিরপুর উপজেলাটি নিজের হাতের মুঠোয়। এ যেন বাংলার আইফেল টাওয়ার।

টিলা পাশ দিয়ে বয়ে গেছে রূপের রানীখ্যাত যাদুকাটা নদী যার রূপে মুগ্ধ হচ্ছেন এখানে আসা দর্শনার্থীরা। ভারতের আসাম রাজ্যের গুমাঘাট ষ্টেইট এলাকা থেকে মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ২৩ কি.মি. দৈর্ঘের স্রোতস্বিনী যাদুকাটা নদী, এই যাদুকাটা নদীর তীরে এসে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে। যেমন ঠান্ডা তার পানি তেমনি স্বচ্ছ। যাদুকাটা নদীর বুকে প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলে বালি-পাথর আর শ্রমিকের জীবন যুদ্ধের জাদুর খেলা। যেন শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা আবহমান গ্রাম বাংলার মানুষের জীবন যুদ্ধের এক ইতি কথা। যেখানে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিক যাদুকাটা নদী থেকে বালি আর নুড়িপাথর আহরনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। আর সেই নুড়িপাথর ও বালু বড় বড় স্টিল বডি নৌকা ও কার্গোতে করে চলে যায় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে । যাদুকাটা নদীর পানি এতোটাই স্বচ্ছ যে নুড়ি আর বালির খেলা দেখা যায়।

টিলা থেকে নেমে একটু উত্তর দিকে এগিয়ে গেলেই চোখে পড়বে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর শিমুল বাগান। ২০০২ সালে বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মানিগাঁও গ্রামের পাশে ৯৮ বিঘা অনাবাদী জমি কিনে এ বাগানটি করেন। এ যেন এক শিমুলের প্রান্তর, এখানে রয়েছে সারি সারি শিমুল ও লেবু গাছ।ঋতুর রাজা বসন্তের আগমনে মৃদুমন্দ বাতাসে প্রকৃতির রূপ লাব্যনে সজ্জিত শিমুল বাগান যেনো পূর্ণতা পেতে শুরু করে। বাগানে সারিবদ্ধভাবে সাজানো তিন হাজারের বেশি শিমুল গাছে তখন সবুজের আবৃত ভেদ করে প্রতিটি গাছের ডালে প্রতিটি কলি ফুটতে শুরু করে। বর্তমানে সবুজের সমাহার আর বসন্তকালে রক্তিম শিমুলের সমাহার, বসন্তে শিমুলের পাপড়ি মেলে থাকা রক্তিম আভায় আর পাখির কিচির মিচির ডাকে সৌখিন হৃদয়ের ঘুম ভাঙ্গে।

পাহাড়ি নদী যাদুকাটা পাড় হয়ে লাউড়রগড়ের ২কি.মি অদূরে গেলে দেখতে পাওয়া যায় ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফর সঙ্গী হযরত শাহ আরেফীন(র.)’র আস্তানা। লাউড়গড়ের পার্শবর্তি নবগ্রামে রয়েছে শ্রী অদ্বৈত্য মহাপ্রভুর আস্তানা। দুই ধর্মের দুই সাধক মহা পুরুষের ভক্তরা বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে দুই ধর্মের মিলন মেলা বসায়।এছাড়াও এখানে প্রতিদিন দেশ-বিদেশ থেকে শত শত আউলিয়া ভক্তরা এসে সমবেত হন। চলে দিবা রাত্রি আবহমান গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী বাউল, জারিশারি,মোর্শিদি, ভাটিয়ালিসহ সিলেটের মরমি সাধক হাসন রাজা ও বাউল আব্দুল করিমের গান। যে গান মনে করিয়ে দেয় আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের কথা।

উল্লেখ্য যে, এই প্রাচীন নবগ্রামেই গড়ে উঠেছিলো পৌরাণিক যুগের সমৃদ্ধশালী লাউড় রাজ্যের রাজধানী। বর্তমানে হলহলিয়ায় রয়েছে প্রাচীন লাউড় রাজ্যের ধ্বংসাবশেষ হাওলি জমিদারবাড়ি, এটাই লাউড় রাজ্যের সর্বশেষ রাজা বিজয় সিংহের রাজবাড়ি ছিলো। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক অনবদ্য কাব্য তৈরী করেছে প্রকৃতির এই স্বর্গরাজ্যে।

অন্যদিকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়তলায় রয়েছে ভারত বাংলাদেশের সমন্বয়ে গঠিত বর্ডার হাট, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় রয়েছে চেংবিল, দোয়ারাবাজার উপজেলায় রয়েছে-বাঁশতলা, হকনগর শহীদ স্মৃতিসৌধ, জুমগাঁও আদিবাসীসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। ছাতক উপজেলায় রয়েছে-শুল্ক স্টেশন, লাল পাহাড়সহ ছোট ছোট পাহাড়, সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। নয়নাভিরাম, নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ করে মানুষকে। অনেকেই ঐসব স্থানে গিয়ে তুলছেন সেল্ফি আর অনেকেই একান্তে বসে আছেন, অনেকেই বসিয়েছেন আড্ডা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD