এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা গ্রহণের অভিযোগ করে অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদের প্রার্থী আরজু আরার স্বামী আজিজুল হক বলেন, মাদরাসার সভাপতি জি এম কবির মিঠু ও ভারপ্রাপ্ত সুপার জিয়াউল হক আমার কাছে ১৫ লাখ টাকা চেয়েছিল। এত টাকা দিতে পারিনি বলে অযোগ্য হলেও ভারপ্রাপ্ত সুপারের আত্মীয় আল মিজানুর রহমান উজ্জল নামে প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছে। নিশ্চয়ই সে বেশি টাকা দিয়েছে। এব্যাপারে ছেলের নিয়োগের কথা স্বীকার করে আবু বক্কর বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে খরচ তো আছেই। তবে মাদরাসার সুপার জিয়াউল হক আমার আত্মীয় হওয়ায় বেশি টাকা লাগেনি। টাকা ছাড়া কি আর নিয়োগ হয়। তাই বিভিন্ন খরচ বাবদ কিছু টাকা তো দিতেই হয়েছে।
একইভাবে অভিযোগ করেন, মাদরাসাটির সাবেক সহকারী শিক্ষক বদর উদ্দিন বজো মুন্সির ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমার ভাই আনিছুল ইসলামকে সুপার পদে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী প্রায় ২ বছর আগেই ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন সভাপতি ও সুপার। কিন্তু আমার ভাইয়ের অন্যত্র নিয়োগ হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলেও তারা টাকা দেয়নি। তার বদলে আমাদের অন্য কেউ চাইলে তাকে নিয়োগ দেয়া হবে বলে আস্বস্ত করে। এতে আমি নৈশ প্রহরী পদে এবং আমার ভাবী মাহমুদা হিসাব রক্ষক এবং ছোট ভাই আবু জার কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদন করি। কিন্তু তারা আরও টাকা দাবী করে। তা দিতে না পারায় আমাদের নেয়া হয়নি। বরং যারা আরও বেশি টাকা দিয়েছে তাদেরকেই নিয়োগ দিয়েছে। তিনি বলেন, আমার জানা মতে কিছু কিছু পদে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকাও নিয়েছে।
নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আহসান আদেলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। তবে হোয়াটস আপে জানান, নিয়োগ বাণিজ্য করে থাকলে তা সভাপতির বিষয়। এক্ষেত্রে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। কেননা আমি নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানিনা। নিয়োগ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত সুপার ও নিয়োগ কমিটি। জি এম কবির মিঠু উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব হলেও আমার মনোনীত প্রতিনিধি নন। সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন বলেন, পোড়ারহাট মাদরাসার নিয়োগ নিয়ে কিছুই জানিনা। তবে গত শুক্রবার জানতে পারি যে, ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা আছে এবং সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তাই নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সভাপতি নিয়োগ দেন এমপি। তাই তার মনোনীত ব্যক্তিরা সভাপতি হয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করলে তা তাদেরই দায়।
উল্লেখ্য, ইাতোপূর্বে জি এম কবির মিঠু উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি হিসেবেও নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রযেছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন ছমির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানে ৪ টি পদে নিয়োগ দিতে গিয়ে বিশাল অংকের টাকার বাণিজ্য করায় স্থানীয় লোকজন পরীক্ষা গ্রহণের দিন তাকে লাঞ্চিত করেছে। পরে তিনি ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছেন। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজ ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। তাই জি এম কবির মিঠু আগাম সতর্কতা অবলম্বন করে এবার আগেই মিডিয়াসহ বিভিন্ন বিভাগকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে নিয়োগ বাণিজ্যকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেছে এবং সফলও হয়েছেন। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সেজন্য আড়ালের খবর ক্রমেই বেরিয়ে আসছে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন এলাকাবাসী। এমপি আহসান আদেলুর রহমানের মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে জাপা নেতারা এভাবে নিয়োগের নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় তোলপাড় চলছে।