২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শুরু হয় আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতি। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত অন্য কোন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কার্যক্রম চোখে পড়েনি এই ক্যাম্পাসে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সিন্ডিকেট সভায় রাজনীতি ও ধূমপানমুক্ত রাখতে ছাত্র-ছাত্রীদের অঙ্গীকারনামা নেয়ার বিষয়ে মত দেয়া হয়। এরপর সিন্ডিকেটের সিন্ধান্ত অনুযায়ী অঙ্গীকারনামা নেয়া হলেও ছাত্র রাজনীতি থেমে নেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ৫১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৮ মে লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সভাপতি ও গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী মো. রেজাউল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি হয়। এরপর ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ১৬১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও নতুন কোন কমিটি পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
অন্যান্য সংগঠনের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একই সময়ে বিএনপির ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রদলের কমিটি থাকলেও তারা ছাত্রলীগ কর্তৃক সাংগঠনিক কার্যক্রম করতে গেলে বাঁধার সম্মুখীন হয়। এমনকি তাদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। একই সুর জামায়েত ইসলামী বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, বামপন্থী ধারার রাজনীতির সাথে যুক্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর।
এ ব্যাপারে কুমিল্লা জেলার সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সংগঠক ফারজানা আক্তার বলেন, সাংগঠনিক গতি আনতে কোভিডের আগে আমরা পাঠচক্র করতে চেষ্টা করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ছাত্রলীগের দাপটে অনেকে চাইলেও আমাদের সাথে যুক্ত হতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্ত জায়গায় আমরা অবশ্যই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাই। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের চাপে আমরা সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারছি না।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, তিন বার অবৈধভাবে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায়। সেক্ষেত্রে দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতার দাপটে তাদের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে সহ অবস্থানের ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীরা নিরাপত্তার স্বার্থে সেভাবে ক্যাম্পাসে মুভ করছে না। আমরা আমাদের সময়ে সবকিছু মেনে ক্যাম্পাসে মুভ করবো।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, যারা প্রগতিশীল ছাত্র রাজনীতি করতে চায় তাদের আমরা কোন বাঁধা দিব না। প্রগতিশীল কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠ রাজনীতি চর্চা করতে চায় এবং শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পৃক্ততা থাকে তাহলে তারা রাজনীতি করতে পারবে না কেন ? তবে যারা ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল করতে চেষ্টা করা করে তাহলে আমরা তাদের বাধা দিব।
“রাজনীতি না করার অঙ্গীকার নেয়া হলেও রাজনীতিতে কেন সরব কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়?” এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এ বিষয়টা আমি শুনেছি কিন্তু নিশ্চিত নই। আমি যতদূর জানি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে তেমন কিছু নেই। আমি পুরো ব্যাপারটা জেনে তারপর মন্তব্য করতে পারবো।