গত কয়েক দিনের প্রচ- গরমে ঘরে ঘরে বাড়ছে জ্বর-সর্দি ও কাশির রোগী। আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই স্থানীয় ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। এতে অনেকেই সুস্থ হয়েও উঠছেন। কেউ কেউ হাসপাতালের বহির্বিভাগে গিয়েও চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে আক্রান্তদের মধ্যে করোনা পরীক্ষা করেতে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে।
উপজেলার প্রতিটি বাসা-বাড়িতেই রয়েছে জ্বর ও সর্দিতে আক্রান্ত রোগী। তবে, জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির ঈদের পর ভর্তি হওয়া অধিকাংশ রোগীই জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত হয়ে এসেছেন। সিট না পেয়ে অনেকে মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি ষাটোর্ধ্ব রাজ্জাক মিয়া জানান, জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে সোমবার হাসপাতালে এসেছেন। তার পাশের সিটে ভর্তি হওয়া।
বেগম জানান, জ্বর, সর্দি, গলাব্যথা নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। রূপগঞ্জে নাপা প্যারাসিটামলসহ ঠান্ডাকাশি জ¦র ও শ^াষ কষ্টের ওষুধের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ওষুধ না পেয়ে ভোগান্তিতে আছেন রোগীরা। অন্যদিকে ওষুধের যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে ফার্মেসীগুলো। উপজেলার ফার্মেসীগুলোতে ওষুধ না পেয়ে দুরদুরান্তে ছুটছেন মানুষ। এতে পরিবহন সঙ্কটের পাশাপাশি করোনায় আক্রান্তের ভয়ও পাচ্ছেন ভোক্তভুগিরা। তারপরও স্বজনদের রক্ষার্থে ছুটছেন মানুষ।
প্রচ- দাপদাহে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঘরে ঘরে সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক ডা. জানান, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩৫-৪০ জন জ্বরে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের বেশির ভাগই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এটি সিজেনাল ফ্লু। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের শরীরের তাপমাত্রা ১০২-১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করে।
করোনার ভয়ে অনেকেই বিষয়টি গোপন রাখছেন। নমুনা দিতেও আগ্রহ নেই অনেকের। উপজেলার ওষুধের দোকানগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত কয়েক দিনে ওষুধ বিক্রি হয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
সরজমিনে দেখা যায়, মুড়াপাড়া বাজারের একটি ওষুধের দোকানে আব্দুর রউফ মিয়া গিয়ে জিজ্ঞেস করছেন, নাপা এক্সটেন্ড, ফেক্সো, উইনডাল প্লাস আছে কি না। দোকানীর উত্তর নাই নাই। কেন নাই জানতে চাইলে বলেন, ওষুধ আসে না। কেন আসে না জানতে চাইলে ওই দোকানী বলেন, কোম্পানী থেকেই ওষুধ আসে না। সবখানেই সঙ্কট রয়েছে। আমাদের কিছু করার নেই।
ডাঃ মেহেদী হাসান বলেন, এখন বর্ষাকাল। বছরের এ সময়টায় সর্দিকাশির জনিত রোগে আক্রান্ত হয় বেশি মানুষ। তাছাড়া করোনা মহামারী তো রয়েছেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, রোগী আসছে প্রতিনিয়ত। সর্দিকাশি জ¦রের রোগিই বেশি।
রূপগঞ্জের প্রায় প্রতিটি ঘরেই ঠা-া-জ্বর দেখা দিয়েছে। ডাক্তারের কাছে না গিয়ে বাড়িতে সেবা নেয়ায় বাজার থেকে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার ব্যবসায়ী রানা হামিদ জানান, বাড়ির সবার ঠা-া লেগেছে। সাথে জ্বরও আছে। তাই প্যারাসিটামল কিনতে এসেছিলাম। কোনো ফার্মেসিতে পাইনি। লোকনাথ ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা আব্দুর রহমান নামে একজন জানান, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্যোগময় সময়ে যদি ওষুধ পাওয়া না যায় তাহলে কষ্ট পাওয়া ছাড়া আর কিছুই না।
জয়া মেডিকেল হল ফার্মেসির মালিক জাহিদ হোসেন জানান, বিভিন্ন কোম্পানির প্যারাসিটামল আছে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ ছাড়া অন্যগুলো মানুষ খাচ্ছে না। এ কারণেই ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। মা ফার্মেসির মালিক ডাক্তার আক্তার জানান, রূপগঞ্জে লাইসেন্সধারী ২ শতাধিক ফার্মেসি রয়েছে। এছাড়া লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি আছে আরও চার শতাধিক। খোঁজ নিলে দেখা যাবে কমবেশি সব দোকানেই এই ওষুধের সংকট চলছে। কোম্পানি না দিলে আমরা বিক্রি করবো কীভাবে। কোম্পানির লোকের কাছে চাইলে বলে সাপ্লাই নেই।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আইভী ফেরদৌস জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণে এ সময়ে জ্বরের রোগী একটু বাড়বে। জ্বর হলেই করোনা হয়েছে, তা নয়। তবে করোনার উপসর্গগুলোও একই। হাসপাতালে ওষুধের সংকট নেই। ডাক্তার ও জনবলের সংকট রয়েছে। সরকারি প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধের সরবরাহ রয়েছে। কোনো সংকট নেই। তবে করোনার অন্যান্য উপসর্গ থাকলে অবশ্যই তিনি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। করোনা ছাড়াও এ সময়টায় মানুষের ডেঙ্গু, সর্দি, কাশি, জ¦র লেগেই থাকে। আতঙ্কিত হলে চলবে না। সচেতন হতে হবে। শাক সবজি দেশি ফল মুল বেশি করে খেতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। টিকা গ্রহন করতে হবে। মাস্ক ব্যবহার করার কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে