বিভন্ন সময়ে চাকুরী দেওয়ার নামে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি নতুন নয়। সময়ের সাথে সাথে প্রতারকরা প্রতারণার কৌশল পরিবর্তন করে চাকুরী প্রত্যাশী সহজ সরল লোকদের চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে নেয়। এধরনের প্রতারণার স্বীকার ০২জন ভূক্তভোগী র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লায় স্ব-শরীরে হাজির হয়ে পৃথক পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন।
যার মধ্যে জনৈক ভূক্তভোগী মোঃ শাহজাহান ও রফিক উল্লেখ করেন, একটি প্রতারক চক্র তাদেরকে সেনাবাহিনীতে চাকুরীর লোভনীয় প্রস্তাব করেন।ভূক্তভোগী শাহজাহান ও রফিক এর নিকট থেকে জানা যায়, ভূক্তভোগীরা চাকুরীর প্রয়োজনের বিষয়টি তারা তাদের প্রতিবেশী হোসেনকে জানালে হোসেন তাদেরকে রিপনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং রিপন বড় স্যারের মাধ্যমে চাকুরী পাওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। গত জুলাই ২০২১ইং তারিখে রিপন তাদেরকে বড় স্যার এর সাথে স্বাক্ষাৎ করানোর জন্য ঢাকায় নিয়ে যায় তখন বড় স্যার একজনকে ম্যাচ ওয়েটার এবং অন্যজনকে এমইএস পদে চাকুরি প্রদানে আশ্বাস দেয় ।
সেখানে প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোঃ গোলাম কবির@মেজর শামীম (৫৫) শাহজাহানকে কথিত ডাক্তারী পরীক্ষা করায়। সেপ্টেম্বর ২০২১ইং মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে বায়োডাটা ও আনুসাঙ্গীক নথিপত্র প্রস্তুত করে নভেম্বর ২০২১ইং মাসে পুলিশ ভেরিফিকেশন এর জন্য পাঠায়। পরবর্তীতে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয়ে গেলে ডিসেম্বর ২০২১ইং তারিখে নিয়োগপত্র ও প্রাথমিকভাবে যোগদান ও পরবর্তীতে এসএমএস এর মাধ্যমে ২৭ফেব্রুয়ারির ২০২২ তারিখে যোগদানের জন্য এসএমএস করে।
যোগদানের একদিন পূর্বে চক্রটি তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়ে আত্মগোপনে চলে যায়।ভূক্তভোগীরা নির্ধারিত স্থানে যোগদান করতে গেলে ভূক্তভোগীরা প্রতারনার বিষয়টি বুঝতে পারে। অপর ভূক্তভোগী জনৈক মোঃ জাকির হোসেন উল্লেখ করেন, একটি প্রতারক চক্র আমাকে বীমা উন্নয়ন নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ এর সহকারী পরিচালক পদে চাকুরী দিবে বলে ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করলে আমি তার কথামত অক্টোবর ও নভেম্বর ২০২১ মাসে ধাপে ধাপে নগদ ০৫ লক্ষ টাকা প্রদান করি। এছাড়াও তার দেয়া বিকাশ নাম্বারে আরও ০২ লক্ষ ৭০ হাজার টাকাসহ মোট ০৭ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা প্রদান করি।
উক্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাই এবং প্রতারকদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র্যাব-১১, সিপিসি-২ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং মাঠ পর্যায়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। মাঠ পর্যায়ে গোয়েন্দা নজরদারীর সূত্র ধরে গত ০৮ মার্চ ২০২২ইং তারিখ দূপুরে কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিন থানার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে চক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য মোঃরিপনমিয়া(৩২), পিতা-রুহুল আমিন, সাং-কৃষ্ণপুর, পোষ্ট-নালঘরবাজার, থানা-চৌদ্দগ্রাম,জেলা-কুমিল্লাএবং মোঃ হোসেনমিয়া (২৮), পিতা-মৃতআনামিয়া, সাং-মান্দারিয়া, পোষ্ট-উত্তরপদুয়া, থানা-চৌদ্দগ্রাম, জেলা-কুমিল্লাদ্বয়কে গ্রেফতারকরতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে রিপনএবং হোসেনএর দেয়া তথ্যেরভিত্তিতেঢাকারদক্ষিণখানএলাকায়অভিযানপরিচালনাকরেপ্রতারক চক্রেরমূলহোতামোঃ গোলাম কবির@মেজর শামীম(৫৫), পিতা-মৃত ইয়াছিন মোল্লা, সাং-ফুলতলা, পোষ্ট-ফুলতলা, থানা-বেতাগী,জেলা-বরগুনাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় এবংতার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চক্রের অন্যতম সদস্য তানভীর আহমেদ রাজু(২৮), পিতা-শাহাদাৎ হোসেনসাহেবআলী, সাং-গংগাধরদী, পোষ্ট-শরিফাবাদ, থানা-ভাংগা, জেলা-ফরিদপুর,; মোঃহুমায়ুনকবির(৪৭)
পিতা-মৃত মোঃসিদ্দিকমিয়া, সাং-মধ্যভাদুর, পোষ্ট-ভাদুর, থানা-রামগঞ্জ, জেলা-লহ্মীপুরএবং মোঃ মোখলেছুররহমান@মুকুল(৪৭), পিতা-মোহাম্মদ আলী, সাং-চর হাঁটবাড়ি, পোষ্ট-কুঠিরহাঁট, থানা-শরিষাবাড়ি, জেলা-জামালপুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। অভিযানে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ০১টি র্যাব ইউনির্ফম, ০১টি শার্ট, ০১ জোড়া বুট, খলিল নামীয় ০১টি ন্যাম প্লেট, ০১টি পিস্তল কভার, বিভিন্ন পত্রিকায় চাকুরীর বিজ্ঞাপন,প্রতারনার কাজে ব্যবহৃত সীম,বিভিন্ন লোকের জীবন বৃতান্ত (বায়োডাটা), ০১টি পুলিশের আইন বিষয়ক বই, ০২টি কম্পিউটার, ০১টি প্রিন্টারসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সেনাবাহিনীর লোগো সম্বলিত ডিও পেপার উদ্ধার করা হয়।
এই প্রতারক চক্রটি চারটি দলে বিভক্ত হয়ে প্রতারণার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে। প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোঃ গোলাম কবির@মেজর শামীম(৫৫) প্রথমে বিভিন্ন সময়ে পত্র পত্রিকায় চাকুরীর বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার পর এসব বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে তা রিপন, হোসেন ও হুমায়ুনকে প্রদান করে। রিপন, হোসেন, হুমায়ুন ঐ সমস্ত বিজ্ঞাপন অনুযায়ী চাকুরী প্রত্যাশী ব্যক্তিদের খুজে বের করে। সে ক্ষেত্রে সল্প শিক্ষিত গ্রামের নিরীহ, সহজ সরল ছেলেদের টার্গেট করে। টার্গেট মিলানো শেষে রিপন, হোসেন ও হুমায়ুন চাকুরী প্রত্যাশীদের ঢাকায় নিয়ে আসে। বড় স্যার তথা প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোঃ গোলাম কবির@মেজর শামীম(৫৫)/করিম/গাফফার পরিচয়ে তাদের ইন্টারভিউ নেয়।
পরবর্তীতে কবির তথা মেজর শামীমের পরিকল্পনা অনুযায়ী নাটকীয় ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়। অতপর তাদের বায়োডাটা ও অন্যান্য নথিপত্র তৈরীর বিষয়টি করে আসামী মুকুল।চক্রের অন্য সদস্য খলিল ও আসামী রাজু পুলিশ ভেরিফিকেশনের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট জেলায় চাকুরী প্রত্যাশীদের প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রেরণ করে।পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে চাকুরী প্রত্যাশীরা তাদেরকে সম্পূর্ণরুপে বিশ্বাস করা শুরু করে এবং চুক্তি অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করে। পরবর্তীতে প্রক্রীয়া শেষ অংশে আসামী মুকুল সংশ্লিষ্ট চাকুরীর সংস্থার নিয়োগপত্র তৈরী করে চাকুরী প্রত্যাশীদের নিকট রিপন, হোসেন ও হুমায়ুনের মাধ্যমে কথিত নিয়োগপত্র প্রেরণ করে। খলিল ও রাজু নির্ধারিত যোগদানের তারিখ ঘনিয়ে আসলে সংশ্লিষ্ট সংস্থ্রা সাময়িক বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে নতুন যোগদানের তারিখ এসএমএস এর মাধ্যমে প্রদান করত তবে এ ক্ষেত্রে তাদের পরিচয় হতো সংশ্লিষ্ট সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, প্রতারক চক্রের মূলহোতা মোঃ গোলাম কবির@মেজর শামীম(৫৫) ১৯৮২ সালের জুন মাসে সেনাবাহিনীতে সিভিল বাচুর্চি হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করে এবং১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসে চাকুরী শেষ করে। সে দীর্ঘদিন সেনানিবাসে চাকুরী করার সুবাদে সেনা বাহিনীর অফিসারদের বিভিন্ন কাজকর্ম/কথাবার্তা/চলাফেরা সম্পর্কেপ্রাথমিক ধারণা পায় এবং এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে সে সেনানিবাসের বাহিরে নিজেকে একজন সেনাবাহিনীর মেজর হিসেবে পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলো এবং ২০১১ সালে এই প্রতারণার জন্য তার নামে একটি মামলা হলে সে জেল হাযতে যায়। চক্রের অন্যতম সদস্য মোঃ রিপন মিয়া(৩২) একজন দিন মজুর সে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজ করে থাকে।
এক সময় সে ফুলের চারা বিক্রির সুবাদে সেনানিবাসে প্রবেশ করে এবং চক্রের মূলহোতা মোঃ গোলাম কবিরএর সাথে দেখা হয় এবং কবিরের সাথে তার ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরী হয়।চক্রের সদস্য হোসেন মূলত একজন রাজ মিস্ত্রি এবং রিপন হচ্ছে রাজ মিস্ত্রি হেলপার দুইজনেই একই সাথে কাজ করার সুবাধে তাদের ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরী হয়চক্রের সদস্য খলিল বাংলাদেশ পুলিশের একজন এএসআই। সে এক সময় র্যাবে কর্মরত ছিলো। দুজনের বাড়ী একই এলাকায় হওয়ার কারণে রাজুর সাথে খলিলের সম্পর্ক হয়।
খলিল প্রায়ই ঢাকায় রাজুর মেসে এসে থাকতো এবং খলিলের সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে বিধায় রাজু বিভিন্ন ধরণের প্রতারণাসহ অপকর্মে লিপ্ত থাকতো। খলিল বর্তমানে একই অপকর্মে মুন্সিগঞ্জ জেল হাজতে রয়েছে বলে জানা যায়। মুকুল মূলত একজন কম্পিউটার দোকানদার। গাজীপুরের টঙ্গীতে তার একটি কম্পিউটার দোকান রয়েছে। চক্রের মূলহোতা মোঃ গোলাম কবির@মেজর শামীম(৫৫) টঙ্গীতে বসবাসের সুবাধে মুকুলের সাথে পরিচয় হয়।চক্রের আরেক আসামী মোঃহুমায়ুনকবির(৪৭), এমওডিসি হিসাবে রাজেন্দ্রপুরে ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যান্ত কর্মরতছিল। রাজেন্দ্রপুর কর্মরত থাকা অবস্থায় চক্রেরমুল হোতা মোঃ গোলাম কবির@মেজর শামীম(৫৫)এর সাথে পরিচয় হয়।