 
																
								
                                    
									
                                 
							
							 
                    কি আর কমু গো বাজান যেই দিন থেকে গরম শুরু হইলো সেদিন থেকেই মশার ভনভনানি আর মাছির প্যানপ্যানানি সহ্য করা যাচ্ছে না। ব্যবসা-বানিজ্য বাদ দিয়ে মশা তাড়াতেই ব্যস্ত থাকতে হয়- কথাগুলো বলছিলেন নগরপাড়া বাজারের ফোচকা চটপটির দোকানী জানে আলম মিয়া।” গোটা রূপগঞ্জসহ কায়েতপাড়া ইউনিয়নের আওতাভুক্ত প্রতিটি ওয়ার্ডে মশার উপদ্রবের কারণে সাধারণ মানুষ রয়েছে চরম ভোগান্তিতে। দিন দিন বেড়ে চলছে এ সমস্যা। উপজেলার কায়েতপাড়া ইুনিয়নর বাসিন্দারা জানান,আমরা শুধু সর্বক্ষেত্রেই অবহেলিত।

এখানে বছরের পর বছর হয়না কোনো উন্নয়মূলক কাজ। ২১ বছর বালু নদের ব্রিজ ও রামপুরা ভুলতা সড়কের কাজ আটকে আছে কোনো অদৃশ্য লাল সুতায়। বালুনদের পচা পানির সমস্যার সমাধান হয়নি ৩০ বছরেও। চনপাড়া ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ২ যুগেরও বেশি সময়। যেন কারো নজরেই পড়ে না। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সরকারের টনক নড়বে। মশার ওষুধ ছিটানো তা তো জন্মের পরে চোখেই দেখেননি এ এলাকার মানুষ। তাইতো দুঃখ করে তারা বলেন, কপালে আছে ভোগান্তি, জগত আমাদের করবে কি?

শীত মৌসুম অতিক্রমের সাথে মশায় অতিষ্ট রূপগঞ্জের মানুষ। সন্ধ্যা নামলে মশার উৎপাতে দিনের বেলাতেও রেহাই মেলে না। মশার ওষুধ দিলেও কাজে আসছে না। শীতের তীব্রতা কমার সাথে সাথে উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলেই বেড়েছে মশার উপদ্রব। উপজেলার খামারপাড়া এলাকার গৃহিনী নাজনীন সুলতানা বলেন, ছেলেমেয়েরা পড়তে বসলে মশার কামড়ে হাত-পা, মুখে রক্ত বিন্দু জমে থাকে। রান্নাঘরে কাজ করতে গেলে কানের মধ্যে ভোঁ ভোঁ করে মশা। মশা মারতে কয়েল, স্প্রে, বৈদ্যুতিক ব্যাট কোন কিছু ব্যবহার করে রক্ষা পাচ্ছে না ্ অঞ্চলের মানুষ।
মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে রূপগঞ্জের কয়েক লাখ মানুষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। এদিকে বিষাক্ত কয়েল জ্বালিয়ে, ধূপ পুড়িয়ে, অ্যারোসল স্প্রে করে কিংবা মশা মারার বৈদ্যুতিক ব্যাট ব্যবহার করেও মশার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছে না মানুষ। মশার কয়েল বিক্রেতা নগরপাড়া বাজারের দোকানদার ফজুল মিয়া জানান, এখন কয়েল ভালই বেচাকেনা হচ্ছে। জানি কয়েলের ধোঁয়য় মানুষের ক্ষতি হয়। তবুও সবায় বিক্রি করছে তাই আমিও বেছি।
ুরাতে তো বটেই; দিনেও মশার যন্ত্রণা থেকে রেহাই মিলছে না তাদের। পুরো রূপগঞ্জই যেন মশার দখলে! শীত শেষে আবহাওয়া উষ্ণ হয়ে ওঠায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জলাশয় ও জমে থাকা ময়লার স্তূপে মশার প্রজনন বেড়ে গেছে। ফলে এলাকাবাসীর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বাজারগুলোতেও মশার উৎপাত ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে উপজেলার শতাধিক কাচা বাজার ও এর আশপাশ এবং ড্রেনগুলো অপরিষ্কার থাকায় স্থানগুলো মশার চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বাজার সংলগ্ন রাস্তার পাশে, মহসড়কের পাশে, খেলার মাঠ, খালের পাড়ে, নদীর তীরে, পুকুরপাড়সহ বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ময়লার স্তূপ। সেগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় মশা তৈরির কারখানায় পরিনত হয়েছে । কয়েকটি জায়গায় ডাস্টবিন থাকলেও তার যথাযথ ব্যবহার নেই।
ফলে যত্রতত্র ময়লা ও আবর্জনার স্তূপ থেকে মশার প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসীরা ক্ষুব্ধ। অনেকে মনে করেন, নদীর পানি শোধনের ব্যবস্থা করলে, তিন দিন পরপর ড্রেনগুলোতে ওষুধ ছিটানোসহ স্প্রে করতে পারলে মশা কমে যাবে। এজন্য মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের আলাদা একটা বাজেট থাকা উচিত।
ডা. মেহেদী হাসান বলেন, এডিস মশাই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকাÑ এ তিনটি রোগ ছড়ায়। এতে হাত-পা বা শরীরের অন্য যে কোনো অঙ্গ ফুলে যায়। তাই এসব রোগ ছড়ানোর আগেই দ্রুত মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
রাতে নয়, দিনের বেলাতেই মশারি লাগে। মুাপাড়া সরকারী কলেজ শিক্ষার্থীরা সৌরভ মিয়া জানান, মশা তাদের ভোগাচ্ছে। পড়ার টেবিলে বসেও ঠিকমত পড়তে পারছে না তারা। গরম শুরু হতে না হতেই মশার প্রকোপ শুরু হয়েছে। গোলাকান্দাইলের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন,“আমি ভাড়া বাসায় থাকি। প্রতিদিন বিকালে অফিস শেষে বাসায় এসে কয়েল জালিয়ে রাখতে হয়। এই বাসার পাশে পানি জমে থাকায় মশা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে সন্ধ্যার পর বারান্দায় দাঁড়ানোই মুশকিল। তার ওপর গত বছর চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে তাতে এ বছর আমরা বেশ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। বাড়ীওয়ালাকে অনেকবার বলার পরও বাসার পাশের জলাবদ্ধতা দূর করেননি।
ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, দিনের বেলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দোকানে কয়েল জ্বালিয়েও মশার দংশন থেকে পরিত্রাণ মিলছে না। দিনের বেলায় তার নিজ ঘরে মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। উপজেলার চানখালি, নয়ামাটি, বালুরপাড় ফকিরখালি এলাকার বাসিন্দারা এমন কথা বলেছেন। তারা বলেন, দিন কিংবা রাত কখনই মশার হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছি না।
অ্যারোসল, ইলেকট্রিক ব্যাট, কয়েলে কাজ হচ্ছে না। দুপুরের পর থেকে ঘরে মশার কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। তাতেও ঠিকমতো মশা যায় না। কায়েতাড়া থেকেও মশা নিধনে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।এব্যাপারে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, এখন মৌসুম পরিবর্তন হচ্ছে বলে একটু মশা বাড়ছে। যদি নিজেরা সচেতন হন এবং বাড়ির আঙিনা পরিচ্ছন্ন ও ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকে তাহলে মশার উপদ্রব অনেকটা কমে আসবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. আইভী ফেরদৌস বলেন, মশা ও মাছি অনেক ভয়াবহ রোগের প্রভাব বিস্তার করে। যথাসম্ভব মশা ও মাছির কামড় থেকে বাঁচার চেষ্ঠা করতে হবে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব কয়েল, স্প্রে ও নানাধরনের বিষাক্ত দাহ্য পদার্থের ব্যবহার কমাতে হবে। কারণ, এসব দাহ্য পদার্থের ধোঁয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে ক্যন্সারসহ নানা জটিল রোগের সৃষ্টি করে যা জনস্বাস্থ্যকে হুমকিতে ফেলে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান বলেন, গ্রামাঞ্চলে সাধারণত মশার উপদ্রব কম থাকে। তাই ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। তবে শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এব্যাপারে রূপগঞ্জের এমপি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতিক বলেন, ওষুধ ছিটানো হচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পচা পানির সমস্যার সমাধান না করতে পারলে মশা নির্মূল হবে না। ####