শষ্য ভান্ডার খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁ। চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় প্রতিটি ফসলের মাঠ জুড়েই এখন সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত। শীতের শিশির ভেজা সকালে কুয়াশার চাদরে ঘেরা বিস্তীর্ন প্রতিটি মাঠ যেন হলুদ বর্ণে ঘেরা এক স্বপ্নীল পৃথিবী। সরিষার সবুজ গাছের হলুদ ফুলে শীতের সোনাঝড়া রোদে ঝিকিমিকি করছে।এ এক অপরুপ সৌন্দর্যে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি। যেদিকে তাকায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁ-ধাঁলো বর্ণীল সমারোহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে শরিষা ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহআর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পন এ অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনো মুগ্ধকর এক মূহুর্ত। ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে। এই মৌসুমে সরিষার ভালো ফলনের আশায় জেলার কৃষকেরা রাতদিন
পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমন ধানের বাম্পার ফলন পেয়েছে নওগাঁর কৃষক। রবিশস্য মৌসুমে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার প্রাকৃতিক দূর্যোগ হানা না দেওয়ায় ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার পাশাপাশি আলু, গম ও ভোট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করছেন জেলা কৃষি অফিস ও কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় ৩২হাজার একশত হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবার জেলায় ৩৩হাজার ৬শত ৪০হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার থেকে এক হাজার ৫শত ৪০হেক্টর বেশি। শুরুতে সরিষা ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষিদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরী সহযোগিতার কারণে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় এ জেলায় বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।
জেলার আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক আজাদ সরদার বলেন, আমি এ বছর ৫বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কিছু বীজ পেলেও আমি নিজে বাঁকিটা কিনে জমিতে বপণ করেছি। সরিষা গাছে প্রচুর পরিমান ফুল ধরায় মনে হচ্ছে এবার সরিষার আশানুরুপ ফলন পাব। দাম ভাল হলে গত বারের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে পুরোদমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারবো।
এই উপজেলার শাহাগোলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন,আমি চলতি মৌসুমে প্রায় ২বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কোন প্রকার দূর্যোগ ও রোগবালাই না থাকায় এবছর সরিষার বাম্পার ফলন পাব বলে আমি আশা করছি। মান্দা উপজেলার কশব মধ্য পাড়া গ্রামের কৃষক বয়েন উদ্দিন শাহ বলেন, আমি সরিষার আবাদ করেছি এক বিঘা মাটিতে। আবহাওয়া ভালো দেখাচ্ছে ভরসা করা যায় আল্লাহ দিলে আবাদ ভালো হবে। এখন বাজারে সরিষার দাম ভালো আছে। আশা করা যাচ্ছে এবার সরিষার আবাদ ভালো হবে আর বাজারে সরিষার দামও পাব ভালো।
নওগাঁ সদর উপজেলার দুবলহাটি ইউনিয়নের হাঁড়িয়াগাছীগ্রামের কৃষাণী জায়রা বেগম বলেন, বাবা আমি মেয়ে মানুষ লোক লাগিয়ে এবার ১৫ কাঠা জমিতে সরিষার আবাদ করেছি ফসল দেখে মনে হচ্ছে ভালো ফলন হবে। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ যায়যায়দিনকে বলেন, এবার জেলার ৩২ হাজার একশত হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে এক হাজার ৫শত ৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছে কৃষকরা। যেহেতু তেলের দাম বেশি সরিষা চাষে কৃষকরা আগ্রহী। সরিষা সহজে হয়।
এবারের আবহাওয়া ফেবারেবোল শেষের দিকে বৃষ্টি হয়নি মাটির জোর তাড়াতাড়ি আসছে। তিনি আরো বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবছর বেশি পরিমান সরিষা চাষ হয়েছে। যথা সময়ে জমি চাষ যোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হলে এ জেলায় সরিষা আবাদে বাম্পার ফলনের সম্ভবনা হবে বলে তিনি মনে করেন।