বাপ্পী রাম রায়: ‘এদ্যান করি খায়া না পাইলে হামরা কয়দিন বাঁচমো? হামাক কোন নেম্বর (মেম্বার), চেয়ারমেন (চেয়ারম্যান) কিচ্ছু দেয়না। চাইট্টে খাবার না পাইলে তো হামরা মরি যামো’ এভাবেই শত অভিযোগ আর অভিমান নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চাচিয়া মীরগঞ্জ গ্রামের অতিশিপর বৃদ্ধা দিলজান বেওয়া ও সারফান। দু’জনেই বিধবা।
করোনাভাইরাস কি তা জানেন না তারা। এর ভয়াবহতা কি তাও তাদের জানা নেই। শুধু জানে পেটে তিনবেলা ভাত জোটেনা তাদের। আহারই যেন তাদের একমাত্র চাওয়া। আহার পেলেই হবেন খুশি তারা।
অসহায় বৃদ্ধা দিলজানের স্বামী ইদু শেখ দেশ স্বাধীনের আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন । দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছিল তার পরিবার। বছর কয়েক আগে দু’টো ছেলেই দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এখন একমাত্র মেয়েটি তাকে দেখভাল করছেন। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়েছেন দিলজান বেওয়া। হাঁটার শক্তি না থাকায় বিছানায় শুয়ে বসে দিন কাটছে তার। ক্রমান্বয়ে বাকশক্তি লোপ পাচ্ছে তার। অসুস্থতা ও চিকিৎসাহীনতার পাশাপাশি খাদ্যাভাব হয়ে দাঁড়িয়েছে তার নিত্য সাথী।
অপরদিকে, একই গ্রামের অসহায় সারফান বেওয়ার স্বামী আজগর আলীও বছর পঞ্চাশেক আগে মারা যান। তিন ছেলে নিয়ে অতিকষ্টে দিন চলছিল তার। তিন ছেলেই বিয়েসাদি করে আলাদা হওয়ায় সারফানকে দেখছে না কেউই। নিরুপায় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছেন তিনি। কিন্তু বয়সের ভারে এখন তিনি ঠিকভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতে কিংবা হাঁটতেও পারেন না। শুধু গ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তার ভিক্ষাবৃত্তি।
সাম্প্রতিক নোভেল করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ আর বাড়িতে যেতে দিচ্ছে না তাকে। ভিক্ষায় যেতে না পেরে অতিকষ্টে দিন কাটছে তার।
এ অবস্থায় চাচিয়া মীরগঞ্জ গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ এই দুই নারীর দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। তিনবেলা পেট পুরে খেতে খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নানের সাথে কথা হলে, তিনি বলেন, আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩/৪টি স্লিপ পেয়েছি, কাকে ছেড়ে, কাকে দেব? সবাই তো হতদরিদ্র। তাই আমি ওই ৩/৪টি স্লিপ নেইনি।
ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তাদেরকে পাঠিয়ে দিলে সহায়তা দেয়া হবে।