মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ার রাউৎগাঁও ইউপি ফানাই নদীর উপর বেইলি সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।তিনমাসে ছয় বার বিকল হয়েছে সেতুটি।ভেঙে গেছে সেতুর ট্র্যানজাম।খুলে গেছে স্টিলের পাটাতন।জোড়াতালি দিয়ে কয়েকবার সংস্কার করা হলেও নতুন করে সেতু নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।ফলে ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন চলছে যানবাহন।যে কোনো সময় ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা,ঘটে যেতে বড় রকমের কিছু এমন শঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জিয়া উদ্দিন বলেন,সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।গত তিন মাসে ৬ বারের বেশি সময় সেতুটি বিকল হয়ে গেছে।আমরা সংস্কার করে কোনোমতে চালু রেখেছি।ভারী ও পণ্য বোঝাই যান চলাচল নিষিদ্ধ করে কুলাউড়া রবিরবাজার সড়কের প্রবেশমুখে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেখেছি।কিন্তু কেউ তোয়াক্কা করছেন না।
সওজ সূত্রে জানা যায়,কুলাউড়া-রবিরবাজার সড়কটি নতুন করে সংস্কার করেছে মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথবিভাগ।এরপর থেকে এ রুটে যানচলাচল বেড়ে যায়।উপজেলার পৃথিমপাশা,কর্মধা,টিলাগাঁও,হাজীপুর ওশরীফপুর ইউপি দেড় লাখ মানুষ এ পথ দিয়ে চলাচল করেন।সড়কের রাউৎগাঁও অংশে ফানাই নদীর ওপরথাকা পুরোনো ৪৫ মিটার দৈর্ঘ্যর বেইলি সেতুটির ট্র্যানজাম,পাটাতন ভেঙে প্রায়ই বিকল হয়ে যায়।
চলতি বছরের মার্চ ও জুলাই মাসে সেতুটির ট্র্যানজাম ভেঙে যাওয়ায় ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল।সম্প্রতি সেতুর ওপরের অংশে থাকা স্টিলের ৩টি পাটাতন খুলে যায়।গত ১০ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত যানচলাচল বন্ধ রেখে সংস্কার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ।সংস্কারের কয়েক ঘণ্টা পরই আবারও দুইটি পাটাতন খুলে যায়।খুলে যাওয়া পাটাতনের মাঝে ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি ফাঁকা হয়ে যায়।তখন থেকে ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন।
সিএনজি অটোরিকশা চালক আরব আলী বলেন,সড়কটি নতুন করে সংস্কার করার পর উপজেলাবাসী সহজে যাতায়াত করেন।তবে ফানাই বেইলি সেতুটি অনেক পুরোনো ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।সেতুটি বেশ কয়েকবার বিকলহলে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে।সড়ক ও জনপথ বিভাগ কোনো রকম জোড়াতালি যান চলাচলের ব্যবস্থা করে।
পৃথিমপাশা ইউপি বাসিন্দা সৈয়দ আশফাক তানভীর বলেন,কুলাউড়া-রবিরবাজার-টিলাগাঁও সড়কটিদীর্ঘদিন ধরে বেহাল ছিল।সড়কটি সম্প্রতি নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে।কিন্তু ফানাই বেইলি সেতুটি নতুন করেনির্মাণ করা হয়নি।সওজ কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করে সচল রেখেছে।ভারী যানবাহনচলাচল নিষেধ থাকলেও প্রতিদিন বালু ও পণ্যবোঝাই ট্রাক যাতায়াত করে।
দীর্ঘদিনের পুরোনো সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণহওয়ায় যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।পৃথিমপাশার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কমরেড আবদুল লতিফ বলেন,ফানাই বেইলি সেতুটি প্রায় তিন দশকেরওবেশি পুরোনো।সেতুটির অবস্থা খুবই নাজুক।যেকোনো সময় সেতুটিতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।সেতুটি দ্রুত নির্মাণ করা উচিত।
রাউৎগাঁও ইউপি পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল জামাল বলেন,সেতুটি গত দুই বছরে আটবার ভেঙে যায়।সেতুটির নিচের অংশ অনেকটাই দেবে গেছে।কিছুদিন আগে সংস্কার করা হলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে স্টিলের পাটাতন আবার খুলে যায়।সেগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষের।সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ।
সড়ক ও জনপথ কুলাউড়া কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী সুভাষ পুরকায়স্থ বলেন,গত ১০ সেপ্টেম্বর সেতু দিয়েযান চলাচল বন্ধ রেখে সংস্কার করা হয়েছিল।কিন্তু গাড়ি চালকেরা বাঁধা না মেনে ওই দিন সন্ধ্যা থেকে সেতু দিয়েযান চলাচল শুরু করলে স্টিল পাটাতনের ঝালাই ছুটে যায়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জিয়া উদ্দিন বলেন,জরুরি ভিত্তিতে একাধিকবার নতুন সেতু নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।কিন্তু অনুমোদন পাচ্ছি না।এ ছাড়া সেতুর সংস্কারে বিশেষ বরাদ্দ না পাওয়ায় কিছু করতে পারছি না।নতুন সেতুর অনুমোদন পাওয়ার জন্য আমি স্থানীয় সাংসদের মাধ্যমেও ডিও লেটার পাঠিয়েছি।প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মোঃ আবু জাফর রাজুর মাধ্যমে অনুমোদন পাওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছি।