টাঙ্গাইল পৌরসভার কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচ বছর আগে স্ত্রী সৈয়দ আমেনা পিংকিকে হত্যা এবং লাশ গুমের অভিযোগে টাঙ্গাইল থানায় মামলা হয়েছে।মামলায় মোর্শেদ ছাড়াও তার প্রথম স্ত্রী সোমা ওরফে মনা,মুন্সি তারেক পটন ও তার স্ত্রী লিনা,পারভেজ খান রনি,সোহেল ওরফে বাবু,অনন্ত সুত্রধর,রাফসান ও আয়নাল মিয়াকে আসামী করা হয়েছে।এছাড়াও মামলায় নাম না জানা আরো ৪ থেকে ৫ জনকে আসামী করা হয়।
আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলাটি করা হয়।বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।মীর মোশারফ জানান,এই হত্যা মামলায় মোর্শেদকে শোন অ্যারেস্ট দেখানোর জন্য বৃহস্পতিবার আদালতে আবেদন করা হবে।মোর্শেদকে ১৯ আগস্ট একটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ওই দিনই তার বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে দুইটি পিস্তল,ম্যাগজিন ও গুলি উদ্ধার করা হয়।বর্তমানে এ নেতা অস্ত্র ও চাঁদাবাজি মামলায় টাঙ্গাইল কারাগারে আছেন।পুলিশ জানায়,মোর্শেদের দ্বিতীয় স্ত্রী আমেনার বাবা সৈয়দ শরিফ উদ্দিন বাদি হয়ে ২৪ আগস্ট টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।
শরিফ উদ্দিন অভিযোগ করেন,২০১২ সালের জুন মাসে তার মেয়ে আমেনাকে মোর্শেদ অপহরণ করে বিয়ে করেন।তাদের ছয় বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।দুই স্ত্রী থাকায় মোর্শেদের পরিবারে মাঝেমধ্যে ঝগড়ার সৃষ্টি হয়।এর জেরে ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে ওই এলাকার এক বাসায় দাওয়াতের কথা বলে মোর্শেদ আমেনাকে নিয়ে যান।সেখানে নিয়ে অন্য আসামীদের সহযোগীতায় মোর্শেদ আমেনাকে হত্যা করে লাশ গুম করেন।
মোর্শেদের ভয়ে তিনি মামলা করতে সাহস পাননি।পরে মোর্শেদ চলতি বছরের ১৯ আগস্ট গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে মামলা দায়ের করেন।আদালত এ হত্যার বিষয়ে থানায় কোন মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছিল কিনা তার প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য টাঙ্গাইল সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।কোন মামলা বা জিডি হয়নি বলে টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন আদালতে প্রতিবেদন দেন।
পরে আদালত মামলাটি নথিভুক্ত করার জন্য টাঙ্গাইল থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।সদর থানার ওসি মীর মোশারফ হোসেন জানান,এই হত্যা মামলায় মোর্শেদকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর তদন্তের প্রয়োজনে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চাওয়া হতে পারে।এছাড়া হত্যায় জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গত,মোর্শেদ টাঙ্গাইল শহর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।পরে জেলা যুবলীগের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।বর্তমানে দলীয় পদ না থাকলেও শহর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অংশ নিতে দেখা যেত তাকে।পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোর্শেদের বিরুদ্ধে করা ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা মামলা ২০১৩ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে দুই যুবলীগ নেতা হত্যা,ব্যবসায়ী তুহিন হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের এক ডজন মামলা হয়েছে বিভিন্ন সময়।গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে মোর্শেদ টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।