দেখতে বুঝা যায় এ যেন এক উৎসব। জমির বুকে ভেকু বড় দাতের কামোর মেরে মাঠিতে, পাশের জমিতে বোরো ধানের ছাড়া রোপণ। কৃষক ফসল ফলাতে ছাড়া রোপণে ব্যস্ত। ফসলি জমিতে অন্য দিকে মাটি কাটা মহোৎসব। সরাইল- নাসিরনগর সড়কে দাড়িয়ে অনেকে বলতে শুনেছি এমন করে।স্থানীয় প্রশাসনের নির্লিপ্ত ভ‚মিকার কারণে মাটি কাটার মহোৎসবে নেমেছে ইটভাটার মালিকরা। একই সাথে নগদ অর্থের লোভে জমি মালিকরা মাটি বিক্রির অশুভ প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। সনাতন পদ্ধতিতে নয়, ভেকু মেশিন দিয়ে কাটা হচ্ছে জমির মাটি। মুর্হুতেই সাবাড় হয়ে যাচ্ছে কালিকচ্ছ আকাশী বিলের দিগন্তজুড়া ফসলের মাট।ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলায় ফসলি জমির মাটি কাটা চলছে দেদারছে। তিনটি স্পট থেকে জমি কেটে মাঠি নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এতে শত শত বিঘা ফসল জমির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে উর্বরতা হারিয়ে অনাবাদি হয়ে পড়ছে আবাদি জমি। ফসল ফলন যেমন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে তেমনি অন্যান্য জমিতে চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষক।রোববার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, সরাইল উপজেলা কালিকচ্ছ আকাশী বিলে এলাকায় তিনটি স্পট থেকে ফসলি জমি থেকে ভিকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।
এতে জমির বিভিন্ন স্থানে ৭-৮ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।স্থানীয় সূত্র জানায়,সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নে ধরন্তী কালিকচ্ছ আকাশী বিলেতিনটি স্থানে ভেকু মেশিনের মাধ্যমে ট্রাক দিয়ে ফসলি জমির মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জমির মালিকরা না বুঝেই তা ইটভাটার মালিকদের কাছে বিক্রি করছেন।এতে জমির উর্বরতা শক্তি কমতে শুরু করলেও এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের করা হচ্ছে না সতর্ক। নেয়া হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। ভুক্তভোগীরা স্থানীয়ভাবে বাঁধা দিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের উল্টো হুমকির শিকার হয়েছেন বলে কৃষক হেলাল মিয়া জানান। এ ভিকুর মাটি কাটার কারণে ট্রাক্টরে দোলায় আমরা চাষ করতে পারি না জমিতে।
মাটি ব্যবসায়ী কয়েক জন ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমার মতো সরাইল উপজেলায় ১০-১২ জন ব্যবসায়ী ফসলি জমির মাটি কেটে নিচ্ছেন, আগে তাদের বন্ধ করতে বলেন তারপরই আমি বন্ধ করব। গভীর করে মাটি কেটে নেয়ায় পাশের জমির ক্ষতির কথাও স্বীকার করেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইটভাটা মালিক জানান, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা মানে ওই কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হওয়া। তিনি বলেন, সরাইলে এখন চলমান প্রায় ২০ থেকে ২৫টি ইটভাটা রয়েছে। আর এসব ভাটার ইট তৈরি করার জন্য সরাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলি জমির মাটিই সংগ্রহ করা হচ্ছে। কূষির সাথে সম্পর্ক এমন কয়েক জন এমন করে বলেন,সরাইলে যেভাবে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০-১২ বছর পর কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে। জমির মূল উর্বরতা শক্তি থাকে মাটির উপরিভাগে। আর এ মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিলে তার উর্বরতা শক্তি সঞ্চয় করতে সময় লাগে ১০-১২ বছর।
সরাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.রায়হান পারভেজ রনি জানান, সরকারি নিয়ম না মেনেই সরাইল উপজেলায় অনেক ইটভাটা তৈরি হয়েছে। আর এসব ভাটার জন্য মাটির প্রয়োজন। তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের জমির টপ সয়েল তারা নিচ্ছে। আমাদের পরামর্শ দেওয়াআর এ টপ সয়েল নেওয়া বন্ধ করার ক্ষমতা নাই।সরাইল উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) ফারহানা নাসরিন বলেন, ফসিল জমি থেকে কেউ মাটি কাটে,তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এ ব্যাপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.আরিফুল হক মূদুল বলেন, ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র নেয়ার কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে