1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
হারিয়ে যাচ্ছে ‘ধুনট’ ও ‘ধুনারি’ পেশা ও এই পেশার ঐহিত্য
বাংলাদেশ । বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

হারিয়ে যাচ্ছে ‘ধুনট’ ও ‘ধুনারি’ পেশা ও এই পেশার ঐহিত্য

আবু সাঈদ দেওয়ান সৌরভ:
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২২
  • ৬৪২ বার পড়েছে

প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধময়। সোনার বাংলার প্রতিটি ঐতিহ্য ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের জীবন ও জীবিকার গল্পকথা। তেমনই একটি ইতহাস ও ঐতিহ্য বহন করা বিলুপ্ত প্রায় যন্ত্র হচ্ছে ‘ধুনট’ ও পেশা ‘ধুনারি’। আমাদের নতুন প্রজম্ম ‘ধুনট’ ও ‘ধুনারির’ কর্মযজ্ঞ দেখা তো দূরে থাক, হয়ত অনেকে এর নামও শুনেনি। প্রযুক্তির কল্যানে হারিয়ে যাচ্ছে এই পেশা, পেশার মানুষ এবং তাদের কর্মযজ্ঞ।

প্রাচীনকাল থেকেই ‘ধুনারিরা’ শীতের আগাম বার্তাবাহক হিসাবেই পরিচিত ছিলো। কাঠের তৈরি এক প্রকার ধনুকের মতো যন্ত্র দ্বারা তুলা পরিষ্কার ও ফাঁপানোরা কাজ করার কারিগরকে “ ধুনারি ” বলা হয়ে থাকে। তুলা পরিষ্কার ও ফাঁপানোরা পাশাপাশি তারা লেপ-তোষক বানানোর কাজও করতেন। কাঠের তৈরি যন্ত্রটির নাম ‘ধুনট’। ধুনটে রক্ষিত শক্ত রশি ও কাঠের হাতলের ক্রমাগত দ্রুততম মহাযজ্ঞে তুলাকে পরিশোধন ও ফাঁপিয়ে তুলে আর লালসালু কাপড় দিয়ে খোল বানিয়ে তৈরি করা হতো লেপ-তোশক।

শীত আসার আগেই শুরু হতো তাদের কর্মযজ্ঞ। গ্রামে-মহল্লার ওঠানে বসতো তাদের কর্মযজ্ঞের খেলা। ঘরের পুরনো তুলার বালিশ, লেপ-তোশক যখন চুপসে যেত, তখন ধুনারিদের নিপুন হাতের শৈল্পিক কর্মযজ্ঞে তুলা-ধুনা করে পুনরায় ফাঁপিয়ে তুলে আগের চেয়ে অরো বেশি আরামদায়ক করে রুপ দিতেন। আর এই কাজটি শীত মৌসুম শুরুর আগেই করা হতো। কারণ দীর্ঘদিন ধরে পরে থাকা লেপ ও অন্যান্য নিত্য ব্যবহারের তুলার সামগ্রীকে পরিশোধনের সুযোগ হতো নতুন করে। শীত মৌসুম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখা যেত এই শ্রেণীর পেশার মানুষদের। আমাদের বাল্যকাল থেকে দেখেছি গ্রাম-গঞ্জের বাড়িতে-বাড়িতে ঘুরে ধুনারি তুলা-ধুনা করতেন।

ইতিহাসবিদদের ধারণা অনুযায়ী মধ্যযুগ হতেই এ পেশার আবির্ভাব হয়। তৎকালীন পাক-ভারত উপমহাদেশে তুর্কি ও মুঘল শাসকরা তুলা দ্বারা তৈরি লেপ-তোশক, বালিশ ও আরামদায়ক দ্রব্য ব্যবহার করতো। তাদের হাত ধরেই এই পাক-ভারত যুগ হয়ে বাংলাদেশে ধুনারি পেশার ও তাদের কর্মযজ্ঞের প্রচলন ঘটে। সেই সাথে জন্ম হয় ‘ধুনারি’ নামে একটি নতুন পেশার।

কালের বির্বতনে ও আধুনিকতার ছোয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে লেপ-তোশক, পাশাপাশি হারিয়ে যাচ্ছে এই গুলো তৈরির সাথে জড়িত সরঞ্জাম ও এই পেশার মানুষ গুলো। লেপ-তোশকের পরিবর্তে আমাদের ঘরে জায়গা করে নিয়েছে দেশি-বিদেশী কম্বল। এখনো লেপ তৈরি হয়। তবে আগের মতো দেখা মিলে না ধুনারিদের। কারণ এখন তুলার কাজ কমে গেছে।

আধুনিক কারখানার ঝুট নামের কাপড়ের বিশেষ অংশ গুলো দখল করে নিয়েছে তুলার স্থান। তুলা দিয়ে অল্প কিছ তৈরি হলেও সেগুলো প্রস্তুত হয় মেশিনের সহায়তায়। আধুনিকতার ছোয়ায় ও কালের বির্বতনে এক সময় ‘ধুনারি’ পেশা লোককথার গল্প বা ইতিহাস হয়ে যাবে। ‘ধুনট’ যন্ত্রটিও হয়ত একদিন জায়গা হবে জাদুঘরে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD