হাইকোর্টের নির্দেশ সত্বেও প্রধান শিক্ষককে কাজে যোগদানে বাধা প্রদান করেছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। প্রতিবাদ করায় গালিগালাজে লাঞ্ছিত করাসহ চেয়ারের আঘাতে আহত করা হয়েছে। মামলা করায় হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, পারিবারিক একটা ঘটনায় মামলার প্রেক্ষিতে আমি সাময়িকভাবে বরখাস্ত ছিলাম। এসময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন। মহামান্য হাইকোর্ট থেকে যোগদানের রায় পেয়ে নিয়মানুযায়ী দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য চিঠি দেই। গত ১৪ জুন থেকে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াতও করছি। কিন্তু তবুও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব ছাড়ছেনা।
এমতাবস্থায় গত ২০ জুলাই সকাল আনুমানিক ১০ টায় শিক্ষক কমনরুমে পৌছামাত্রই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন ও সভাপতি রফিকুল ইসলাম সোনার (৫৮) সহ অভিভাবক সদস্য মো. আতাউর রহমান (৪২), মো. মিল্লাত হোসেন (৩২), মো. আব্দুস সালেক (৬০), মোছা. নাসিমা আক্তার (২২), মো. হাসানুর রহমান (৪২), মো. মোস্তাকিম বাবু (৫০) দলবদ্ধভাবে এসে আমার উপর চড়াও হয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
প্রতিবাদ করায় আতাউর রহমান চেয়ার তুলে আমার মাথায় আঘাত করে। আমি হতচকিত হয়ে সরার চেষ্টা করলেও সেই আঘাত মুখের নিচের ঠোটে লেগে কেটে যায়। নাসিমা আক্তার আমার পড়নের পাঞ্জাবী ও ভেতরের গেঞ্জি ধরে টেনে ছিড়ে ফেলে। মিল্লাত হোসেন ও আব্দুস সালেক এলোপাথাড়ি কিলঘুসি মারতে থাকে। এতে আমি মাটিতে পড়ে গেলে নাসিমা, হাসানুর, মোস্তাকিম ও রফিকুল সোনার লাথি মারে। পরে সবাই মিলে আমাকে টেন হিচড়ে জোরপূর্বক কমনরুম থেকে বের করে দেয়।
এর কিছুক্ষণ পর বিষয়টি মিমাংসার জন্য কৌশলে আমাকে নাসিমা আক্তারের বাবা আব্দুস সালেক সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর দলুয়া চৌধুরীপাড়ার বাড়িতে ডেকে নিয়ে একটি ঘরে আটকিয়ে ওই লাঞ্ছনাকারীরা সকলে আবারও মারধর করে। এসময় আমার সাথে আসা আমার ভাগিনা জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আমাকে উদ্ধার করে ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে আমার ঠোটে ৭ টি সেলাই দিতে হয়েছে।
পরের দিন এব্যাপারে সৈয়দপুর থানায় উল্লেখিতদের আসামী করে এজাহার দায়ের করি। মামলা নং ১৬, তারিখ -২১/৭/২০২২ ইং। এরপর থেকে আসামীরা মামলা তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এমনকি প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। একদিকে হাইকোর্টের আদেশ অবমাননা করেছেন। অন্যদিকে বেআইনীভাবে আমাকে মারপিট করেও তারা অন্যায়ভাবে হয়রানী করছে। ফলে আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
কারণ ইতোপূর্বে ওই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি ষড়যন্ত্র করে আমার একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়কে কেন্দ্র করে মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে একেবারে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। যা হাইকোর্টের রায়ে রহিত হলেও তাদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। তাই তারা আইনকে উপেক্ষা করে গায়ের জোরে আমাকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে প্রধান শিক্ষকের পদটি কুক্ষিগত করে নিয়োগ বাণিজ্য করতে চাচ্ছে। এজন্যই তারা হিংস্র হয়ে উঠেছে। হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে তারা আমাকে মেরে ফেলাসহ যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই আমি এই অন্যায়ের প্রতিকার দাবী করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সভাপতি সহ কমিটির কতিপয় সদস্য স্কুলের টাকা ব্যক্তিগতভাবে সম্পূর্ণ বেআইনী ও অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে মেরে খেতে চায়। এর সাথে একমত না হওয়ায় তারা আমাকে অপসারণের ষড়যন্ত্র শুরু করে।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন মোবাইলে বলেন, প্রধান শিক্ষক কখনই আমার কাছে আসেনি। কাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিবো। তাছাড়া এটা কমিটির কাজ। আমার বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যে অভিযোগ করেছেন। স্কুলে তাকে লাঞ্ছিত করার মত কিছুই ঘটেনি। নাসিমার বাবা আব্দুস সালেকের বাসার ঘটনা তাদের পার্সোনাল মেটার। সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবোনা।
স্কুলের সভাপতি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতিy ও স্মৃতি আর্ট প্রেসের সত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম সোনারের সাথে
যোগাযোগ করেও তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।