দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় পুরোদমে চারিদিকে শুরু হয়েছে ধান কাটাই-মাড়াই কাজ। মিল চাতালসহ বাড়ির ওঠানে জায়গা না থাকায় আঞ্চলিক মহাসড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়ক দখল করে চাষিরা বোরো ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ করছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন ছোট-বড় যানবাহনের চালক ও পথচারীরা। প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
চলাচলকারিদের অভিযোগ, সড়কে মেশিনে ধান মাড়াইয়ের কারণে একে তো সরু হচ্ছে অপরদিকে মেশিন থেকে বের হওয়া ক্ষুদ্র ময়লায় অন্ধকার হয়ে থাকে। ফলে সে ময়লা চোখে পড়লে প্রচণ্ড যন্ত্রণায় ভুগতে হয় চালকসহ যাত্রী ও পথচারীদের। এতেই ঘটছে দুর্ঘটনা। সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশেই শ্যালোচালিত মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করা হচ্ছে। মাড়াই শেষে সড়কের ওপরেই সেগুলো শুকানো হচ্ছে। অনেকে ধান বাড়ি নিয়ে গেলেও খড় শুকানোর জন্য সড়কের ওপরই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। শুকানো শেষ হলে সড়কের পাশেই সেগুলো স্তুপ আকারে রাখা হয়েছে।
উপজেলা খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর নারায়ণপুর গ্রামের ফুলবাড়ী-বিরামপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের দেখা যায়, আঞ্চলিক এ সড়কটি যেন এক ধান মাড়াইয়ের উঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকরা পাশেই শ্যালোচালিত ইঞ্জিন দিয়ে মাড়াই করছেন এসব ধান। মাড়াই শেষে অনেকে ধান বাড়ি নিয়ে গেলেও খড় সড়কের ওপরেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন শুকানোর জন্য। শুকানোর পর সড়কের পাশেই খড় স্তুপ করে রেখেছেন অনেকে। এ ছাড়া কেউ কেউ ভুট্টাও শুকাচ্ছেন সড়কে। এর মধ্য দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলছে ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, থ্রিহুলার, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান, ট্রাক্টরসহ অন্যান্য যানবাহন।
ফুলবাড়ী-বিরামপুর-হাকিমপুর সড়কে চলাচলকারি অটোরিকশা চালক রশিদুল ইসলামসহ আরও অনেকে বলছেন, ব্যস্ততম এই সড়কজুড়ে ধানমাড়াইয়ের কাজ করছেন কৃষকরা। ধান মাড়াইয়ের পর খড় বিছানো হয় সড়কের ওপর। আর এ সড়কে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন অনেক চালক। এদিকে সড়কে যারা ধান মাড়াই বা শুকানোর কাজ করছেন তাদেরও নিরাপত্তা নেই। যেকোনো সময় বড় কোনো যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদেরকেও মেরে দিতে পারে।
রহমত আলী ও জগেশ চন্দ্র রায় নামের পথচারী বলেন, কয়েক দিন আগে সড়কে বিছানো খড়ে পিছলে পড়ে আহত হয়েছেন কয়েকজন মোটরসাইকেল চালক। এছাড়াও একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়েছিল। ব্যস্ততম সড়কগুলোতে ধান-ভুট্টা মাড়াই ও শুকানোর কাজ বন্ধ করা দরকার।
ফুলবাড়ী-রংপুর মহাসড়কের পথচারী ফয়জার আলী বলেন, সবচেয়ে বেশি ফুলবাড়ী-রংপুর মহাসড়কের ধান-ভুট্টা মাড়াই ও শুকানোর কাজ করা হয়। প্রতিবছর এ সড়কে অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটে প্রাণ হারায় অনেকে। কৃষকরা ধানমাড়াই শেষে খড় সড়কে ফেলে রাখেন শুকানোর জন্য। বৃষ্টি হলে ওই খড় সড়কে কর্দমাক্ত হওয়ার পরেও সেগুলো সরানো হয় না। পরে পচে গিয়ে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে প্রায়ই দেখা যায়।
ট্রাকচালক আব্বাস উদ্দিন বলেন, সড়কের দুই পাশে খড়, ধান শুকানো ও মাড়াইয়ের কারণে রাস্তা সরু হয়ে যায়। এতে সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলে ঘটে বিপত্তি। এসময় নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায় গাড়ি। ফলে ঘটে প্রাণহানী দুর্ঘটনা। এসব অভিযোগের বিষয়ে ফুলবাড়ী-বিরামপুর সড়কে ধানমাড়াইকারী শফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাবিনা বেগম বলছেন, আমরা অল্প সময়ের জন্য রাস্তায় ধানমাড়াই করে থাকি। এতে যানবাহনের সাময়িক একটু ক্ষতি হলেও আমাদের অন্য কোনো উপায় নেই। কারণ আমাদের চাতাল কিংবা বাড়ির বড় উঠান নেই। বাধ্য হয়ে আমরাও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই সড়কে এ কাজগুলো করে থাকি।
উপজেলার বেতদিঘী ইউনিয়নের চিন্তামন গ্রামের কৃষক চান মিয়া বলেন, আমি ৪ একর জমিতে ধান আবাদ করেছি। অনেক ধানসহ খড় বাড়ির উঠানে শুকানো সম্ভব হয় না। এ জন্য গ্রামীণ সড়কে এসেছি। জানি সড়ক দিয়ে চলাচলকারী সবারই কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। খুব দ্রুতই ধান-খড় সড়ক থেকে সরিয়ে বাড়িতে নেওয়া হবে।
একই ইউনিয়নের দামারমোড় গ্রামের গৃহিণী তছলিমা খাতুন বলেন, আশপাশে ধান-খড় শুকানোর মতো কোনো মাঠ নেই। কয়েক বছর আগে বাড়ির উঠান বড় থাকলেও ভাগাভাগির কারণে উঠান ছোট হয়ে গেছে। তাই জমি থেকে ধান কেটে আনার পর মাড়াই ও শুকানোর যাবতীয় কাজ সড়কেই করা হচ্ছে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের (নিসচা) ফুলবাড়ী শাখার সাধারণ সম্পাদক মানিক মণ্ডল বলেন, সবারই যে উঠান নেই, বিষয়টি এমন নয়। অনেকের উঠান থাকা সত্ত্বেও সহজে রৌদ্রে মাড়াই করতে সড়কে নিয়ে আসেন। সড়কে চলাচলকারীদের ঝুঁকি এড়াতে ধান মাড়াই কিংবা খড় শুকানোর কাজ বন্ধে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, সড়ক দখল করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বেআইনি। জনস্বার্থে দ্রুত অভিযান চালিয়ে এসব বন্ধ করা হবে।