নীলফামারী সৈয়দপুরে যৌতুকের জন্য এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্বামী, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী, দেবর-ননদ। বুধবার (১৭ নভেম্বর) সকালে সংঘটিত এ ঘটনায় পুলিশ লাশ উদ্ধার এবং স্বামী তহিদুল ইসলাম (২৮) ও শাশুড়ি তহুরা বেগমকে (৪৮) আটক করেছে। তারা উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নের বাড়াইশালপাড়া আদর্শ গুচ্ছ গ্রামের আফজালের ছেলে ও স্ত্রী।
নিহত গৃহবধুর নাম মুক্তা বেগম (২৫)। সে একই উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কিসামত উত্তরপাড়ার মোস্তফার মেয়ে। মুক্তা বেগমের মা মোরশেদা জানায়, ৯ বছর আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের পর থেকেই জামাই ও তার বাবা মা যৌতুক দাবি করে আসছে। ইতোমধ্যে অনেক টাকা দেয়া হয়েছে। একটি ছেলেও হয়েছে। তবুও তারা আরও যৌতুক দাবি করছে।
অতিরিক্ত দাবীকৃত যৌতুক না দেয়ায় এ নিয়ে প্রায়ই তারা আমার মেয়েকে পারিবারিকভাবে নানা অত্যাচার করে আসছে। এমনকি দেবর ননদসহ খালা ও নানী শ্বাশুড়ীও শারীরিক নির্যাতন করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকালে মুক্তা বেগমকে বেদম মারপিট করে এক পর্যায়ে বসার পিড়া দিয়ে বুকে ও পিঠে আঘাত করলে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এতে অবস্থা বেগতিক দেখে পরিবারের লোকজন প্রথমে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঘরের চালের কাঠের বাতার সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে চিৎকার করে প্রচার করে যে মুক্তা আত্মহত্যা করেছে। এতে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে তাদের সহযোগীতায় হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। তখন পরিবারের লোকজন মুক্তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে।
এরপর সকাল ৯টার দিকে খবর পেয়ে মুক্তার মা বাবা হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে জানতে পারে তাদের মেয়ে মুক্তাকে মৃত অবস্থায় আানা হয়েছিল। তাই লাশ নিয়ে গেছে। এতে তারা মেয়ের বাড়িতে যায়।
তখন মেয়ের ছোট ছেলে জানায়, তার মাকে বাবা পিড়া দিয়ে পিটিয়েছে। ওড়না গলায় বেধে চালের সাথে ঝুলিয়েছে। এসময় তারা মৃত মেয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে পুলিশকে খবর দেয়।
১১ টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সেই সাথে হত্যার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে স্বামী ও শ্বাশুড়িকে ধরে নিয়ে আসে। শ্বশুর দেবর ও খালা শ্বাশুড়ী পলাতক রয়েছে।
থানায় উপস্থিত হয়ে গৃহবধূর ছেলে মোমিন (৫) নানির কোলে বসে পুলিশকে জানায়, আমার মা কে বাবা পিড়া দিয়ে মারছে আর গলায় ওড়না দিয়ে বাধছে। আমি এগিয়ে গেলে আমাকেও মারছে। এসময় সে তার পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখায় সে।
সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসনাত খান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে নিহতের শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। তাছাড়া নিহতের একমাত্র সন্তান বলেছে তার মাকে পিড়া দিয়ে পিটিয়ে মারা হয়েছে। এঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।