সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ১নং শ্রীপুর (উত্তর) ইউনিয়নের একমাত্র উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি গত তিন মাস ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র ভরসাস্থলটিতে চিকিৎসক না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারন মানুষ।উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে কাগজে কলমে গত ১৫ বছর ধরে একজন এমবিবিএস চিকিৎসক থাকলেও বাস্তবে কোনোদিন তার দেখা মেলেনি।একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার দিয়েই হাওরপাড়ের মানুষের চিকিৎসাসেবা চলে আসছে।
কিন্তু গত ৭ই জুন এখানে থাকা উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসারও অনত্র বদলি হয়ে চলে যাওয়ার পর মিতুন সরকার নামে অপর একজন উপ-সহকারী চিকিৎসক আসেন।যোগদানের এক সপ্তাহ পরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কিছু না বলে তিনিও চলে যান।ফলে এই করোনাকালীন সময়ে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন হাওরপাড়ের সহজ সরল মানুষ।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়,শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ৪টি গুরুত্বপূর্ণ পদ যথাক্রমে একজন মেডিকেল অফিসার,একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার,একজন মেডিকেল ফার্মাসিস্ট,একজন অফিস সহকারী থাকার কথা।কিন্তু গত ১৫ বছর যাবৎ একজন এমবিবিএস ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার ছাড়া বাকি দুইটি পদই শূন্য রয়েছে।
বাস্তবত কাগজে কলমে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে একজন এমবিবিএস ও একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার চিকিৎসক নিয়োগ হলেও এমবিবিএস চিকিৎসক কর্মস্থলে না এসে চিকিৎসাসেবা দেন উপজেলা সদর হাসপাতালে।আবার বেতন ভাতা নিচ্ছেন এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামেই।গত ৭ বছর ধরে হাওরপাড়ের মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে গেছেন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার জয়দেব চন্দ্র হাওলাদার।কিন্তু গত তিন মাস পূর্বে অন্য একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে বদলি হয়ে তিনি চলে যাওয়ার পর থেকেই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,শ্রীপুর (উত্তর) ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুতলা ভবনটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।ভবনের সামনেই রোগীদের ভীড়।ডাক্তার কোথায় জানতে চাইলে রোগীরা বলেন,সকাল থেকে এসে এখানে বসে আছি কিন্তু এখনো চিকিৎসক আসেনি।এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,গত তিন মাস ধরে এখানে চিকিৎসক নেই।একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার নিয়োগ হলেও তিনি এক সপ্তাহ পর রোগীদের চিকিৎসাসেবা না দিয়েই চলে যান।
শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান খসরুল আলম জানান,ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করতে গত ৭ বছর আগে এখানে দুতলা বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।হাসপাতালের সরঞ্জামাদিসহ ভবনটিতে বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।এতো রকমের ব্যবস্থা থাকার পরও কেন যেন চিকিৎসকরা এখানে এসে থাকতে চান না।গত তিন মাস ধরে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি তালাবদ্ধ থাকায় এই করোনার মধ্যে এখানকার রোগীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ আবু আহাম্মেদ শাফি জানান,করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারনে সারা দেশে চিকিৎসক সংকট চলছে।শ্রীপুর উত্তর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. জুনাইদ আহমদ রনি বর্তমানে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।যার কারণে তিনি আপাতত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না।
সুনামগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শামস উদ্দিন জানান,গত তিন মাস আগে মিতুন সরকার নামে একজন উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার এখানে যোগদান করেন।কিন্তু এক সপ্তাহ পর তিনি কাউকে কিছু না বলেই এখান থেকে চলে যান।বিষয়টি আমি প্রতিবেদন আকারে মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করেছি।
অতি দ্রুতই এই উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে লোক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি।উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেই ঠিকমতো এমবিবিএস ডাক্তার নেই,তাহলে এখানে কিভাবে দেবো।তবে অতি দ্রুতই একটি বড় এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ সার্কুলার আসবে।চেষ্টা করবো এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে একজন এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ দেওয়ার ।