বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন চট্টগ্রাম কিন্তু ঢাকার পরে পৃথিবীর সবচাইতে দূষিত নগরী এই রকম একটা দূষিত নগরীতে একটা প্রাকৃতিক সবুজের আধার কে ধ্বংস করে কোনো স্থাপনা হওয়ার বিষয়ে কোনো ধরনের যৌক্তিকতা থাকতে পারেনা। আর যদি সে সবুজের আধারটা হয়ে থাকে মাস্টার প্লানে চিহ্নিত একটা হেরিটেজ সাইট। তাহলে কথাই নাই। সিআরবি শুধু মাস্টার প্ল্যানে চিহ্নিত তা না এটা মাস্টার প্লানে হ্যারিটেজ সাইট হিসেবে চিহ্নিত।উন্মুক্ত স্থান মাঠ এমন জায়গার শ্রেণী পরিবর্তন করার বিষয়ে ২০০০ সালের ৩৬ নম্বর আইনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে। জায়গাটা হ্যারিটেজ হিসাবে চিহ্নিত হলে আর কথাই নাই। এটা সম্পূর্ণ ভাবে বেআইনি। এখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করারও কোন সুযোগ নাই।
চট্টগ্রাম হাসপাতাল লাগবে কি লাগবে না সেটা ভিন্ন। হাসপাতাল লাগলে মাঠ খোলা উদ্যান হ্যারিটেজ ধ্বংস করে হাসপাতাল করতে হবে এটা কোন যুক্তি হতে পারে না। যে সমস্ত মানুষের জন্য এই হাসপাতাল সে ধরনের আরো হাসপাতাল এখানে আছে। এই হাসপাতাল সাধারণ মানুষের কোন কাজে আসবে না। এই হাসপাতাল বিভিন্ন জায়গায় পড়ে যখানে খাস জমি বা পতিত জমি আছে তারা সেখানে হাসপাতাল করুক কোনো বাধা নেই। এইখানে হাসপাতাল করার কোন ধরনের আইনগত ভিত্তি এবং কোন কারণ থাকতে পারে না। দেশের জনগণ চায় না এই ধরনের জায়গায় হাসপাতাল করার কোন যুক্তি নাই। পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত নগরীর মধ্যে দুই নম্বরে থাকা একটা নগরীতে সবুজ ঐতিহ্য ধ্বংস করে হাসপাতাল কোনোভাবেই হতে পারে না।
আমাদের স্বার্থান্নেষী গোষ্ঠির চরিত্র হচ্ছে আর কোনভাবে না পারলে রাজনীতিকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা। এখানেও তাই হচ্ছে। কিন্তু আমি চট্টগ্রামবাসীকে অভিনন্দন জানাতে চাই এই জন্য তারা কিন্তু সকল রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তাদের নগরী কে বাঁচাতে তাদের নাগরিক সুবিধা যেটা হাতে গোনা তারমধ্যে একটা কে বাঁচাতে সকল রাজনৈতিক পরিচয়ের উর্ধ্বে উঠে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সিআরবি আমাদের রক্ষা করতেই হবে।
রাজনৈতিক সরকারকে তার ন্যূনতম জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে গেলে জনগণের মতের বিপক্ষে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেকোনো একটা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যখন জনমত তৈরি হয় আমরা আশা করব প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। আপনাদেরকে অবহিত করতে চাই যদি শেষপর্যন্ত তারা তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থা এই প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছে তখন আমরা অনুমোদন চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হব। আমি আশা করি জনগণের আন্দোলন অনেক বেশি শক্তিশালী সেটার কারণে বাধ্য হয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এবং যে বেসরকারি সংস্থা এখানে প্রকল্প করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত আছে তারা সরে যাবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বর্তমানে এই বিষয়ে।উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন নাই কাজেই এখন বিষয়টি আদালতে জানানোর কোনো সুযোগ নেই। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা প্রথমে একটা চিঠি দিয়েছিলাম এখন আমি নিজের চোখে দেখে গেলাম। এখন আরো জোরালো করে যুক্তি গুলো তুলে ধরে আবার প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদেরকে নোটিশ দিব।
তাদের বলবো তারা যেন এই প্রকল্পের ধারণা থেকে সরে আসে তিনি আরো বলেন, সরকারের সকল সেবা সংস্থা সিডিএ পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ আইন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিআরবিতে যে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তা চট্টগ্রামবাসী প্রতিরোধ করতে ইতিমধ্যেই দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছে। যা বিগত ৯ মাস ধরে চলমান আছে। আমরা পরিবেশ আইনবিদ সমিতির বেলার পক্ষ থেকে এই আন্দোলনের শুরু থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে রেখেছি। ইউনাইটেড হাসপাতাল নামে যে প্রাইভেট হাসপাতাল নির্মানের কথা বলা হচ্ছে এই ধরনের হাসপাতাল চট্টগ্রামে অনেক রয়েছে। কিন্তু জনগণের সম্পত্তি বিধিবহির্ভূতভাবে ইজারা দিয়ে যে প্রাইভেট হাসপাতালটি কি আদৌ সর্বসাধারণের কোন কল্যাণে আসবে? সরকার চাইলে যেকোনো স্থানে হাসপাতাল নির্মাণ করতে পারে।
কিন্তু পাবলিক স্বার্থ জড়িত আছে এইরকম স্থানে আইন ভঙ্গ করে এবং প্রচলিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে এই হাসপাতাল নির্মাণ করা যাবে না। আমরা সমস্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে রেখেছি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য সিডিএ পরিবেশ অধিদপ্তর অথবা অন্য কোনো সেবা সংস্থা অনুমোদন দিলে আমরা এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাইকোর্টে রিট মামলা করবো। আমরা আশা করছি এর আগেই চট্টগ্রামবাসী আন্দোলনের মাধ্যমে এই উদ্যোগকে প্রতিহত করবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে যথাযথ আন্তরিকতার সাথে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান শহীদ আব্দুর রব সমাধি এবং পুরো সিআরবি এলাকা পরিদর্শন করেন। সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন কালে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সাংবাদিক বেলা চট্টগ্রামের নেটওয়ার্ মেম্বার আলীউর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক কাজী আবুল মনসুর, বেলা চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান কল্লোল, ফারমিন ইলাহী ইরা, মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাসিনা আকতার টুনু, খেলাঘরের সংগঠক বনবিহারী চক্রবর্তী,লেখক-আবৃত্তিশিল্পী দিলরুবা খানম,প্রাক্তন ছাত্র নেতা এম শাহাদাৎ নবী খোকা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও সাহিত্য চর্চার সভাপতি এম.নুরুল হুদা চৌধুরী, যুবলীগ নেতা মোরশেদ আলম, যুবনেতা সাজ্জাদ হোসাইন জাফর, ফটো সাংবাদিক আসিফ ইকবাল প্রমুখ ।