বাংলাদেশে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে টিকটক । টিকটক কে অনেক সমাজ সচেতন ব্যক্তি জাতি বিনাশী মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন । “ফ্রি ফায়ার” ও “পাবজি” এর মতো করে এখনই উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের বিপদগামী ও মানসিকভাবে অসুস্থ করে তোলা “টিকটক”, “লাইকি” ও “বিগো” এর মতো অ্যাপসগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে আদালত। আমি মনে করি আদালত সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে।
আমি এখন পর্যন্ত এগুলোর পজিটিভ কিছু খুঁজে পাইনি। এসব অ্যাপস কীভাবে যে এই উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে ও তরুণ-তরুণীদের মস্তিষ্ক বিকৃত করে সৃজনীশক্তি নষ্ট করে দিয়ে উগ্র ও বিপদগামী করছে; তা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়! মানুষ দিন দিন এক বিকৃত, বেহায়া, উগ্র আর অসুস্থ সমাজের দিকে ধাবিত হচ্ছি বলে মনে হচ্ছে।
আমার কাছে এগুলো ক্রাইম ছাড়া আর কিছুই না,অন্যের জিনিস চুরি করা প্রায়।বেশিরভাগ ভিডিওই মনে হয়েছে আজাইরা কন্টেন্ট, লেইম চিন্তা-ধারা,অপসংস্কৃতি,নোংরার বহিঃপ্রকাশ ।
টিকটক কি?
টিকটক স্মার্টফোনের একটি অ্যাপ। টিকটকের স্লোগান হলো ‘তোমার দিন বানাও : আসল মানুষ, আসল ভিডিও’ (মেক ইওর ডে : রিয়েল পিপল, গ মিউজিক্যাল. লি নামে অ্যাপ তৈরি করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ২০১৬ সালে চীনে ডুইন নামের অ্যাপ ছাড়ে বাইটড্যান্স। ২০১৮ সালে মিউজিক্যাল.লি ও ডুইন এক করে নতুন নামে ছাড়া হয় টিকটক। টিকটকের ৪১ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়স ১৬ থেকে ২৪ বছর। যে কেউ চাইলেই টিকটক এপস ইনস্টল করে একাউন্ট খুলে সহজেই ভিডিও আপলোড করতে পারেন। টিকটকে এপ্রুভাল সিস্টেম / ফিল্টার নেই যে কোন ভিডিও আপলোড করা যাবেনা এমন কোন নিয়ন্ত্রনও নেই।
বাংলাদেশে টিকটক ব্যবহারের ভয়াবহত!
টিকটক, লাইকি অ্যাপ যুবসমাজের জন্য ক্ষতির কারণ। এসব অ্যাপ ব্যবহার করে স্কুল-কলেজের ছাত্রী, এমনকি যুবতী গৃহবধূকে টার্গেট করা হয়। তাদেরকে ফুসলিয়ে পাচার করা হয় অন্য দেশে। সেখানে নিয়ে তাদেরকে বিক্রি করা হয় অথবা জোরপূর্বক দেহব্যবসায় নিয়োজিত করা হয়। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ র্যাব এসব অ্যাপ বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যাপ বন্ধ করে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, ভিপিএন ব্যবহার করে এসব সাইটে প্রবেশ করতে পারবেন ব্যবহারকারীরা। ফলে এই অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ না করে দিয়ে উন্নত মনিটরিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ খবর দিয়েছে তুরস্কের অনলাইন টিআরটি ওয়ার্ল্ড:
এতে বলা হয়েছে- বাংলাদেশে যৌনতার উদ্দেশ্যে পাচার নতুন কিছু নয়। এক দশকে ১২ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি বালিকা ও নারীকে যৌনতা বিষয়ক চক্র পাচার করেছে ভারতে। কিন্তু টিকটকের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে পাচারের ঘটনা প্রথম জানা গেছে। এই চক্রের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মে মাসের শেষের দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২২ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি যুবতীর ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। তাকে ভারতের ব্যাঙ্গালুরু শহরে নির্যাতন ও যৌন হয়রানি করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাংলাদেশের রিফাদুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় ও তার অন্য ৫ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে ভারতীয় পুলিশ। তারা সবাই ওই যুবতীর ভিডিও ধারণের সঙ্গে জড়িত।
এর কয়েকদিন পরেই আরেক বাংলাদেশি নারীকে ভারতে পাচার করার পর তিনি পালান। ৭৭দিন পরে তিনি দেশে ফিরে এসে দেশের পাচার প্রতিরোধ ও নির্যাতন বিরোধী আইনের অধীনে মামলা করেন ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকটক নিষিদ্ধকরণ :
ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও পাকিস্তান সহ বিভিন্ন দেশে বন্ধ রয়েছে টিকটক। কর্তৃপক্ষ পর্নোগ্রাফি, অসামঞ্জস্য কন্টেন্ট এবং ধর্ম অবমাননাকর কন্টেন্টের জন্য ২০১৮ সালের জুলাইয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে ইন্দোনেশিয়ায় নিষিদ্ধ করে টিকটক। কিন্তু এই অ্যাপের পক্ষ থেকে সেখানে কন্টেন্ট সেন্সর করতে ২০ জন স্টাফকে মোতায়েন করা হবে- এমন ঘোষণা দেয়ার পর নিষেধাজ্ঞার ৮ দিন পরে তুলে নেয়া হয়।
পাকিস্তানেও টিকটক অস্থায়ী সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। টিকটক তাদের অ্যাপ থেকে আপত্তিকর কন্টেন্ট মুছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। অন্যদিকে ২০২০ সালের ২৯ শে জুন থেকে ভারতে টিকটক বন্ধ আছে। বর্তমান প্রজন্ম ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অসুস্থ সংস্কৃতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে এই টিকটক এর ব্যবহার চিরতরে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা ।