ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল উপজেলার ৪টি বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এ কারণে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান সহ নানা ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা এবং দাবি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরাইল উপজেলায় বে- সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০টির মধ্যে ওই ৪টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি নিয়ে মামলা রয়েছে। সরাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়,উপজেলায় বে- সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২০টির মধ্যে যে ৪টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা রয়েছে। সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়।
সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.আনোয়ার হোসেন বলেন,তাঁর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে মামলা রয়েছে। অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ সাদী বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির পুরো মেয়াদ মামলা-মোকদ্দমায় কেটেছে। তিনি বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটি নিয়ে ও স্কুলের দোকান নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে।
অরুয়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আসিফ ইকবাল বলেন,প্রধান শিক্ষক ও সাবেক সভাপতি দূর্নীতি প্রমানিত হলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড কমিটি বাতিল করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিলে প্রধান শিক্ষক অ্যাডহক কমিটি গঠনেও সময় ক্ষেপন করার সুবাদে কুতুবউদ্দিন ভুইয়া হাইকোর্টে রিট করেন। পরবর্তীতে প্রায় দেড় বছর আগে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও অদ্যবদী পর্যন্ত কোন ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন নি। তাছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রায় দুই বছর পূর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সাহের উদ্দিন গং কর্তৃক দাখিলকৃত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনিয়ম প্রমাণিত তদন্ত প্রতিবেদন প্রধান শিক্ষক ও কমিটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর সুপারিশ সহ দাখিল করেন যার বিচার কার্যক্রম পক্রিয়াধীন আছেন বলে এ আসিফ ইকবাল বলেন, এ অভিযোগ নিয়ে তদন্ত হলে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নামে মামলা করে।
এ ব্যপারে জানতে চাওয়া হলে, সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুল হক মৃদুল বলেন, অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক অফিস তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিলে তৎকালীন নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তার নামে মামলা করে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ৩টি ছাড়াও আরও ১শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও দোকান নিয়ে মামলা রয়েছে। শাহবাজপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন,তাঁর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির পুরো মেয়াদ শেষ হলে নির্বাচন বিষয়ে মামলা হয়। মহামান্য আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক স্কুল পরিচালনা করা হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘অভিভাবক সদস্য আবু সায়েদ টুনু মামলাটি করিয়েছেন।’ আবু সায়েদ টুনু বলেন, ‘মামলার বিষয়ে জানি। তবে ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হলে,ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন স্থগিত করা হলে আদালতে মামলা হয়। দেওড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.আয়ুবুর রহমান বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বলেন মামলাটি উদ্দেশ্যমূলক তবে শেষ পর্যায়ে আছে।
সরাইল অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক নাম না বলার শর্তে বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটির কিছু পদ এখন লাভজনক হয়ে পড়েছে। তাই পদ ধরে রাখতে অনেকেই আদালত মুখী হচ্ছেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহিদ খালেদ জামিল খান বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটি কার্যকর না থাকলে বিদ্যালয়ে অনেক সমস্যা হয়। শিক্ষার মান ধরে রাখা সম্ভব হয় না।আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, সেগুলোতে বোর্ডের অনুমতিক্রমে অ্যাডহক কমিটি করে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। তিনি অরুয়াইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যপারে বলেন, বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদ জমা দিলে তারা মামলা করে।