নিকুল কুমার মণ্ডল বাংলাদেশের একজন সফল অভিনেতা।কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার পর থেকে অভিনেতা নিকুল কুমার মণ্ডল যেনো নতুন পরিচয়ে আবির্ভূত হয়েছেন।দীর্ঘ ১৭ বছরের অভিনয় জীবনে তিনি প্রায় ৪০০ নাটক এবং দিপঙ্কর দীপন পরিচালিত ঢাকা এ্যাটাকসহ বেশ কয়েকটি সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন।বর্তমানে অভিনয় জগতে নিকুল কুমার মণ্ডল যেনো এক সুপরিচিত নাম।
নিকুল মাগুরা জেলার চরশ্রীরাম গ্রামে বাবা নিশিকান্ত মণ্ডল এবং মা শ্রীমতি বাঁকা রাণীর ঘরে জন্মগ্রহন করেন।অভিনয় জীবনের শুরুটা বেশ কণ্টকাকীর্ণ হলেও বর্তমানে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবেই।মঞ্চনাটক,যাত্রা-পালা ও নাচ-গানের মধ্য দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু হলেও প্রথম ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের সুযোগ পান গোপাল ভাঁড় নাটকে।তারপর থেকে নিকুল কুমার মণ্ডলকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
রিক্সাওয়ালা,ড্রাইভার,পিয়ন,নেশাখোর,পাগল,মাস্তান,বস,নায়ক ইত্যাদি একের পর এক নানান চরিত্র দিয়ে জয় করে নিয়েছেন হাজারো দর্শকের মন।কিছুদিন আগেও ঔপন্যাসিক পরিতোষ বাড়ৈর নরক নন্দিনী অবলম্বনে পরিচালক সোয়াইবুর রহমান রাসেল এর নির্মিতব্য চলচ্চিত্র নন্দিনীতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।কিন্তু মেয়ে স্নেহার জন্মের পরপরই হঠাৎ করেই যেনো অভিনেতা নিকুল কুমার মণ্ডল রূপ নিলেন পরিচালক নিকুল কুমার মণ্ডলে।
সম্প্রতি,তার জীবনের প্রথম পরিচালিত নাটক নুরুলের শেষের কবিতা এন টিভির পর্দায় প্রচারিত হয়েছে।নুরুলের শেষের কবিতা নির্মাণের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালনা জগতে নিকুল কুমার মণ্ডলের অভিষেক ঘটে।নাটকটি লিখেছেন লিমন আহমেদ।লিমন আহমেদের এই গল্পে একজন কবির নীরব প্রেম ও বিরহ তুলে ধরা হয়েছে।খুবই সুন্দর একটি গল্পের অসাধারণ একটি নাটক।বর্তমান ট্রেন্ডে যা চলছে একদমই তার উল্টো।গতানুগতিক গল্পের বাইরে এ যেনো দুঃখ-কষ্ট-বেদনা মাখা এক অন্যরকম গল্পের সমাহার।
গল্পটি এমন যে,কবিতা অনেকদিন পর এলাকায় ফিরে আসে৷স্বামীর সঙ্গে সে কলকাতায়ই থাকতো৷কিন্তু হঠাৎ কেনো যে সে ফিরে এলো তা কেউ জানে না৷তবে তার শুকনো মলিন মুখ দেখে অনেকেই কষ্ট পায়।অনেকে আবার নানারকম গল্পও ছড়ায়৷এদিকে কবিতার প্রত্যাবর্তনে উল্লাস বয়ে যায় মহল্লার কবি সংঘে৷এ সংঘের সভাপতি কবি নুরুল একসময় ভালোবাসতো এই কবিতাকেই৷কবিতার ফেরার খবর পেয়ে নুরুল তাকে দেখার জন্য তার বাড়ি চলে যায়৷কিন্তু কবিতার দেখা মিলে না৷বারবার চেষ্টা করেও নুরুল ব্যর্থ হয়৷
একটা সময় পর তাদের কবিতায় দেখা মিলে৷কবিতার জবাব আসে পালটা কবিতায়৷কিন্তু কবিতা আর আসে না।নুরুলের কবিতার জবাব আসলেও মানুষ কবিতার কোনো দেখা পায় না নুরুল।বিষয়টি রহস্যের জন্ম দিতে থাকে নুরুলের মনে৷সে আরও অবাক হয় কবিতার লেখা কবিতাজুড়ে শুধু বিষাদমাখা শব্দ আর হাহাকার দেখে৷হঠাৎ একদিন কবি নুরুল হক জানতে পায় কবিতা ব্রেইন ক্যান্সারে আক্রান্ত।এরপরই নাটকটির মোড় ঘুরে যায়।জন্ম দেয় কিছু না বলা অনুভূতির।
এই কবি চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঊনপঞ্চাশের বাতাস খ্যাত তারকা ইমতিয়াজ বর্ষণ।তার প্রেমিকার চরিত্রে দেখা গেছে লাক্স তারকা অভিনেত্রী নাজিয়া হক অর্ষাকে।এবং নাটকটির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন ট্রান্সজেন্ডার হোচিমিন ইসলাম।চরিত্র অনুযায়ী সবার অভিনয় খুব ভালোভাবেই বের করে এনেছেন নির্মাতা নিকুল কুমার মণ্ডল।নাটকটির জন্য একটি গান লিখেছেন জনপ্রিয় গীতিকবি জাহিদ আকবর।
সুমন কল্যাণের সংগীতে অনুরুদ্ধ সুরের সুরে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন দেবলীনা সুর।নাটকের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন এপি শুভ।এবং এর ডিওপি হিসেবে ছিলেন সুমন হোসাইন।অসাধারণ একটি গান ও এ.কে.এম শামছুদ্দোহার কবিতা আবৃত্তি নাটকটিকে দিয়েছে ভালো লাগার এক নতুন মাত্রা।এছাড়াও নাটকটির বিভিন্ন পার্শ্বচরিত্রে আরো অভিনয় করেছেন শহীদুল্লাহ সবুজ,মিলি বাশার,হিল্লোল সরকার,জাহিদ হিমেল,মাসুম বাশার,আনন্দ খালেদ,জুয়েল মিয়া প্রমুখ।
নিকুল কুমার মণ্ডল তার প্রথম পরিচালিত এই নাটকটি প্রসঙ্গে বলেন,আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার এ নাটকের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে।অনেক ভালো একটি টিম পেয়েছি বলেই আমাকে এই নাটকটির কাজ শেষ করতে কোনো বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি।তাই,আমি তাদের প্রত্যেকের প্রতি আন্তরিকভাবে খুবই কৃতজ্ঞ।