মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দেয়া ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি অর্থের বিনিময়ে স্বচ্ছল ব্যক্তিদেরও সরকারি খরচে ঘর তুলে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন ঘর প্রাপ্তির পর সারা দেশে এসব প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি অনিয়ম লুপাটের অভিযোগ উঠেছে শ্রীমঙ্গলেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
প্রকল্পের শুরুতে প্রতিটি ঘরের ভিটার মাটি ভরাট না করেই শুরুহয় নির্মান কাজ, ডিজাইন, নির্মাণ ব্যায়, ওয়ার্ক ইষ্টিমিট গোপন করে নিজেদের মনগড়া ভাবে ডিজাইন ঠিক রেখে ইট সিমেন্ট’র পরিমাণ কম দিয়ে শুরু করেন প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ঘর তৈরীর কাজ। পরবর্তীতে নিম্নমানের ঢেউটিন, দরজা জানালায় নিম্নমানের ষ্টিল রড,ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরের বরাদ্দকৃত অর্থের প্রায় অর্ধেক টাকা আত্বসাতের টার্গেট নিয়ে ঘরের নির্মাণ কাজ গুটিয়ে আনেন সংশ্লিষ্টরা। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল অধিকাংশ পরিবারের মাঝে টাকার বিনিময়ে বিতরণ করা হয়েছে বহু ঘর। এ ঘটনা ঘটে শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশিদ্রোন ইউপি ও সদর ইউপি মহাজিরাবাদ বেগুনবাড়ি প্রকল্পে। প্রতিটি ঘর পেতে প্রত্যেক সুবিধাভোগীকে খরচ করতে হয়েছে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা।
নিম্মমানের উপকরণ দিয়ে নির্মাণ করায় একাধিক ঘর দেবে যায় এবং ড্রিল গাতুনীতে উলটে আসে দেয়ালের অংশ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২০-২০২১ ইং অর্থ বছরে শ্রীমংগলে ৩০০ গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেয়ার উদ্যোগ নেয় উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে অধিকাংশ ঘরই নবগঠিত ৩নং সদর ইউপি ও কালাপুর ইউনিয়নে বরাদ্দ দেয়া হয়। সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায় একই পরিবারে স্বামী, স্ত্রী ২ টি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। অথচ তাদের মুসলিমবাগ গাং পাড়ায় নিজস্ব বাড়ি রয়েছে জাকির মিয়ার ও হালিমা বেগমের পিতৃ ভিটাও রয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের সে বাড়িতে ভাড়াটিয়া দিয়ে নিজে ভাড়া থাকেন। তিনি দীর্ঘদিন মুসলিমবাগ ভাড়া থাকেন ঘর পাওয়ার পর ও ভাড়াটিয়া হিসেবেই আছেন।
তাকে ভূমিহীন দেখিয়ে ঘর দেয়া হয়েছে ২টি। জাকির মিয়ার স্ত্রী বলেন, “আমার স্বামী এখানে ভ্যান চালায়। আমরা ২টি ঘর পেয়েছি। এই ঘরের ইট, বালু, সিমেন্ট পরিবহনের জন্য আমাকে ২০ হাজার টাকা খরচ দিতে বলা হয়েছে। আমি দেইনি,কিন্তু সকলের নিকট হতে ২০ থেকে ১০ হাজার আদায়ের প্রেক্ষিতে তাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকায় ব্যবসা করেন এমন একাধিক লোক ও টাকার বিনিময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। তারা স্বচ্ছল হওয়ার পর ও তাদের নামে একটি ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। অপরদিকে এলাকাবাসীর সূত্রে এ প্রতিবেদক জানতে পারেন যে জাকির মিয়ার বরাদ্দকৃত ঘর ভাড়া দিবেন বলে তিনি ভাড়াটিয়া খুঁজছেন, এরই সূত্র ধরে নিজের পরিচয় গোপন রেখে জাকির মিয়ার সাথে ভাড়াটিয়া সেজে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে জাকির মিয়া ২টি ঘর ভাড়া দিবেন বলে প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন । এরই সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে থলের বেড়াল ।
আশ্রয়ন প্রকল্পের সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ১৬টি ঘর মাটিতে দেবে গেছে, তাই পাহাড় কেটে নতুন করে মাটি দিয়ে চারিদিকে মাটি ভরাট করে দরমুজ মারা হচ্ছে। দেয়ালে একাধিক ফাটল, ফ্লরিংএ ফাঁটল দেখা দিয়েছে। ঘর তৈরিতে নিম্মমানের জিনিস পত্র ব্যবহার করা হয়েছে। যার একাধিক ভিডিও ফুটেজ এবং ভুমিহীন ও গৃহহীন হিসাবে সম্প্রতি নতুন ঘর পাওয়া উপকারভোগী পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য এই প্রতিবেদক এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট গচ্ছিত আছে ।
তবে প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতি অনিয়ম লুপাটের অভিযোগের বিষয়ে শ্রীমংগল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলতে চাইলে এ প্রতিবেদক গত দুইদিন যাবৎ বার বার নজরুল ইসলামের ব্যাবহৃত মুঠোফোনে কল দিলে তার ফোন প্রতিবারই ব্যস্ত দেখিয়েছে। পরে অপর এক গনমাধ্যম কর্মীর মোবাইল দিয়ে ফোন করে উক্ত দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ওনার উপজেলায় নির্মাণ করা ঘর তৈরিতে কোন রকম অনিয়ম হয়নি।
এব্যাপারে জানতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও), (কমলগঞ্জ –শ্রীমঙ্গল) মোঃ আসাদুজ্জামান এর ব্যবহৃত ০১৭০৭ ২####৯ নাম্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি । আরো অবাক করা বিষয় আসাদুজ্জামান গত ১৩ বছর যাবত একই স্থানে বহাল তবিয়তে চাকুরী করে আসছেন।কিভাবে কি করে একই স্থানে ১৩ বছর চাকুরীরত অবস্থায় আছেন সে বিষয়টিও কেউ মুখ না খুললেও প্রতিবেদনে বেড়িয়ে আসে।