এবার শেরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আইজউদ্দিন মোল্লার পরিবারের পক্ষ থেকে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।৩০ আগস্ট সোমবার দুপুরে শহরের চাপাতলী এলাকার জেলা পরিষদ নিসর্গ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন,শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আইজউদ্দিন মোল্লার বড় ছেলে প্রজন্ম একাত্তরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোঃ আজিজুর রহমান।
শহীদ আইজউদ্দিন সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া বানিয়াপাড়া গ্রামের মৃত মমিন মোল্লার ছেলে।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আজিজুর রহমান বলেন,সদর উপজেলার আন্ধারিয়া বানিয়াপাড়া গ্রামে তাঁদের বাড়িটি ছিল পাক বাহিনীর মূল লক্ষ্য।১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর সকালে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে ওই গ্রামে একটি সম্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয়।ওই সম্মুখ যুদ্ধে তাঁর বাবা আইজউদ্দিন মোল্লা শহীদ হন এবং অনেকে আহত হন।
পাকবাহিনী ওই গ্রাম ত্যাগ করার সময় তাঁদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খাড় করে দিয়ে যায়।সেই ঘটনার বহু সাক্ষ্যপ্রমাণ ও দলিলাদি তাঁদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।তারই প্রেক্ষিতে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান তাঁদেরকে শহীদ পরিবার হিসাবে স্বীকৃতি এবং তাঁর (আজিজুর) মাকে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর করা একটি সনদপত্র,দুই হাজার টাকা ভাতা,ঘর নির্মাণের জন্য ঢেউটিন ও কিছু নির্মাণ সামগ্রী প্রদান করেন।
পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর জাতির পিতার স্বাক্ষরিত সনদ,সাক্ষ্যপ্রমাণ ও তাঁদের নিকট রক্ষিত বিভিন্ন দলিলাদি পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে ২০১২ সনের ৩ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তাঁর বাবার নামে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ প্রদান করা হয়।সুতরাং গত ২৯ আগস্ট রোববার সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ আব্দুল মতিন সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর (আজিজুর রহমান) বাবা শহীদ আইজউদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা নন বলে যে দাবি করেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা,ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
মূলত তাঁর বড় বোনের সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্বের ঘটনার জের ধরে একটি স্বার্থান্বেষীমহল ষড়যন্ত্র মূলকভাবে তাঁদের পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।এসব অপপ্রচারের জন্য ওই স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে তিনি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।আজিজুর রহমান আরো বলেন,তিনি ও তাঁর ভাই নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প দেখিে সংবাদ সম্মেলনে আজিজুর রহমান আরো বলেন,আন্ধারিয়া বানিয়াপাড়া গ্রামের মুক্তিযুদ্ধস্থলে মহান জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী এমপি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ক্যাপ্টেন এ.বি তাজুল ইসলাম নামফলক উন্মোচন করেন।কর্ণেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক,তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ জাকির হোসেন,তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান,তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন,তৎকালীন পুলিশ সুপার মোঃ মেহেদুল করিম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব,সাবেক মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু বক্কর সিদ্দিক,
সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্ণেল আরিফ,বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবির রুমান,সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সানোয়ার হোসেন ছানু,মুক্তিযুদ্ধকালীন কোম্পানী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা গিয়াস উদ্দিন,বীর মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেন,কামারিয়া ইউনিয়নের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ, কামারিয়া ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিরাজ আলী,জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক,জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুন্নাহার কামালসহ অনেকেই একাধিকবার নামফলকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
তিনি বলেন,স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে যারা এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এটি উদ্দেশ্যমূলক।আমরা সেই সকল স্বার্থান্বেষী মহলের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।আমরা নামে বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প দেখিয়ে কোনও সুযোগ-সুবিধা আদায় করিনি।আমরা কোন মানুষের কাছ থেকে চাকুরী,বদলী ও বিদেশে নেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাত করিনি।আমাদের পরিবারকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য সম্পূর্ণ মিথ্যা,বানোয়াট ও ভিত্তিহীন তথ্য উপস্থাপন করেছে।
উল্লেখ্য,গত ২৯ আগস্ট রোববার সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে কামারিয়া ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ আব্দুল মতিন দাবি করেন,আইজউদ্দিন মোল্লা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা নন।প্রকৃতপক্ষে তিনি (আইজউদ্দিন) ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক সূর্যদী গণহত্যায় বাড়ির পিছন দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আখ খেতের ভেতর আইজ উদ্দিন নিহত হন।
আইজউদ্দিনের দুই ছেলে আজিজুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমান তাঁদের বাবার নামে একটি মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র সংগ্রহ করে নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি পরিচয় দিয়ে সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আদায় করছেন।