নীলফামারীর সৈয়দপুরে দুই কোটি টাকা ব্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থাপিত শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাবগুলো কোন কাজেই আসছেনা। প্রয়োজনীয় তদারকির অভাব ও দক্ষ প্রশিক্ষক নিয়োগ না দেওয়ায় ল্যাবগুলোর এই করুণ দশা। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক নেই। যেগুলোতে কম্পিউটার ল্যাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক আছে তাঁদেরও অনেকেই কম্পিউটার বিষয়ে পারদর্শী নন। তাঁরা প্রতিষ্ঠানের অনলাইন কিংবা কম্পিউটারের কাজও বাইরে কম্পিউটার দোকান থেকে করেন।
অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ল্যাপটপ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। এতে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত ল্যাবগুলো থেকে প্রশিক্ষিত জনবল তৈরী হতে পারছেনা। এমনটাই অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সৈয়দপুর উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, আইসিটি অধিদপ্তর থেকে উপজেলায় ১১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়।
মাধ্যমিক শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ কর্মসূচীর (সেসিপ) আওতায় ৫ টি আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব করা হয়েছে। প্রতিটি ল্যাবে লেনভো ব্রান্ডের ১৭ থেকে ২২ টি ল্যাপটপ ও তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত উপকরণ দেওয়া হয়। এসব ল্যাবে ব্যায় হয় প্রায় দুইকোটি টাকা। সরেজমিন খালিশা বেলপুকুর স্কুল এন্ড কলেজ ও সিপাইগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, কক্ষের ভিতরে লেখা শেখ ডিজিটাল রাসেল কম্পিউটার ল্যাব, ভেতরে কোনো কম্পিউটার নেই। কিছু অব্যবহৃত মালপত্র ও পুরাতন বই-খাতা রাখা আছে। কম্পিউটারের প্রাকটিক্যাল ক্লাস কোথায় হয়? এমন প্রশ্নের ফলে ওই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেনীর কয়েকজন ছাত্র অবাক হয়ে জানায়, একদিনও ল্যাবে তাদের ব্যবহারিক ক্লাস হয়নি। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও একই রকম। শিক্ষার্থীরা জানেনা ল্যাবের কার্যক্রম সম্পর্কে। ব্যাবহার তো দূরের কথা।
সিপাইগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম ফারুক জানান, ১৭ টি ল্যাপটপের মধ্য ৩ টি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষকরা সেটি শিক্ষক কমনরুম হিসেবেও ব্যবহার করছে। খালিশা স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ মোঃ আমিরুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুত সমস্যার কারণে ল্যাব চালাতে ভোগান্তি পোহাতে হয়, ইন্টারনেট সংযোগ সঠিকভাবে না পাওয়ায় বিদ্যুৎ থাকলেও কাজ করা যায়না। এ ছাড়া কম্পিউটার ল্যাবে পর্যাপ্ত ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ না থাকায়ও সমস্যা হয়। তিনি বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল কম্পিটার ল্যাবে দেওয়া ২২ টি ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠানে দেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই অকেজো। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু মেরামত করা হয়নি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী আছে ১০০ থেকে ২০০ জন। একসঙ্গে এসব শিক্ষার্থীর ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া কষ্টকর। পৃথকভাবেও সম্ভব হয়না। নানা জটিলতায় ল্যাব এসিস্ট্যান্টও নিয়োগ দেয়া হয়নি। যে কারণে ল্যাবের কার্যক্রম তত্বাবধান করাও দূরহ। তবে অভিজ্ঞ মহলের মন্তব্য হলো, সদিচ্ছা থাকলে সীমিত সামর্থ্য দিয়েও ভালো কাজ করা যায়। কম্পিউটার ল্যাবগুলো সচল রেখে আধুনিক ও গুরুত্বপূর্ণ এই প্রযুক্তি শিক্ষা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সাধারণ শিক্ষার সাথে ডিজিটাল জ্ঞানে দক্ষ করে তালা সম্ভব। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালনে অবহেলার কারণে সরকারের যুগোপযোগী এ কার্যক্রমের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সৈয়দপুরের শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোর দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা।
তারা এক্ষেত্রে অচলাবস্থা দূর করতে শিক্ষা অফিসসহ জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও সরকার দলীয় নেতৃবৃন্দের সদিচ্ছা ও কার্যকর তৎপরতা প্রত্যাশা করেছেন। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সঠিক ও সময়োপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির উন্নতি সাধনে আত্মনিয়োগ করতে পারে। তাহলেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহানা ইয়াসমিন বলেন, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব চালু রাখার জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। ক্লাস্টার করে করে দায়িত্বশীলরা এখন ল্যাবগুলোতে যাচ্ছেন। সমস্যাগুলো সমাধানের সার্বিক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। অনতিবিলম্বে এক্ষেত্রে সব সমস্যা দূর হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।