শহীদ মিনার ভেঙ্গে যাওয়া কোন ব্যাপার না। এটা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথার দরকার নেই। বরাদ্দ পেলে সংষ্কার করা হবে। ততদিন ভাঙ্গা পড়ে থাকলে সমস্যা কি? এমনই মন্তব্য করেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের রথেরপুকুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমাস সুলতানা। মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনার একবছর যাবত ভেঙে চৌচির হয়ে অযত্ন অবহেলা নোংরা অবস্থায় পড়ে থাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তার মতে এই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যতিত অন্য কারো নাক গলানোর কিছু নেই।
আগামীকাল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হবে কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভাঙা শহীদ মিনার আজকেই পরিষ্কার করে সে ব্যবস্থা করা হবে। আর সম্ভব না হলে দিবসটি পালন করা হবেনা। তাতে অসুবিধা কি? একইভাবে মন্তব্য করেছেন স্কুলটির দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) ও প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুহুল আমিন। তিনি বলেন, দ্রুতই শহীদ মিনারটি সংষ্কার করা হবে। ভেঙে যাওয়ার একবছরেও কেন করেননি? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাজেট না থাকায় করা সম্ভব হয়নি। এই শহীদ দিবস পুষ্পমাল্য না দিয়ে অন্যভাবে পালন করা হবে।
এলাকাবাসীরা জানান, নিম্নমানের কাজ করায় গত বর্ষাকালে পিছনের সব ইট খুলে গিয়ে বেদীর নিচে ভরাটকৃত বালু সব বের হয়ে গেছে। দীর্ঘ দিনেও শহীদ মিনারটি মেরামতে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তার উপর সম্প্রতি শহীদ মিনারটির সামনেই ওয়াস ব্লক (পায়খানা) নির্মাণ করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও অপমানকর। এলাকার কারো সাথেই পরামর্শ না করে অপরিকল্পিতভাবে শহীদ মিনার ও ওয়াস ব্লক নির্মান করে এখন হুজুগ তোলা হয়েছে যে শহীদ মিনার সরিয়ে অন্যত্র নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এভাবে বার বার সরকারী অর্থ নষ্ট করা হচ্ছে। আবার নিজেদের পকেটও ভরছে।
এখন শহীদ মিনারটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। কুকুর ছাগল বেদীতে ও ভাঙা অংশে সচরাচর উঠে প্রসাব পায়খানা করে নোংরা করে ফেলেছে। ভাঙা অংশটি রাতের বেলা শিয়ালের আস্তানায় পরিনত হয়েছে। শিক্ষকরা বা পিয়ন-নৈশ্য প্রহরী কারও সেদিকে নজর নাই। তারা আক্ষেপ করে বলেন, দেখে বিশ্বাস হয়না যে ভাষার মাসেও একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনার এতটা অবহেলিত অবস্থায় থাকতে পারে। যেকোন দেশপ্রেমিক বাঙালী এদৃশ্য দেখলে কষ্ট পাবেন। অথব শিক্ষার ধারক বাহক ও মানুষ গড়ার কারিগররা নির্বিকার। তাহলে শিশুরা কি ধরণের শিক্ষা পাবে? শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনেই বা কতটা আন্তরিক হবে?
প্রতিষ্ঠানটির পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রথেরপুকুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের ছেলে সজিব বলে, প্রায় একবছর আগেই শহীদ মিনার ভেঙে গেছে। নৈশ প্রহরী মাসুদ হোসেনও একই কথা জানান। তারা জানায় এবার অন্য স্কুলে গিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া হবে। তাই ভাঙা অবস্থায়ই রাখা হয়েছে।