বাঙালি মধ্য বয়সী অনেক নারী-পুরুষের একটি ‘মনভরা’ খাবারের নাম পান! পেট না ভরলেও মনের ক্ষুধা মেটাতে পানের চাহিদা দেশজুড়ে। বিশেষ করে এদেশের মধ্য বয়সীরা দুপুরের খাবারের পর জর্দা, চুন আর সুপারি দিয়ে একটা পান মুখে পুরবেনই।
এরপর আয়েশ করে দীর্ঘ সময় ধরে চিবিয়ে ধীরে ধীরে শেষ করবেন। এছাড়া বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠানের খাওয়া-দাওয়া শেষে পান-চুন আর সুপারি থাকতেই হবে। পান খেয়ে ঠোঁট লাল করার শখ বাঙালি তরুণীদেরও কম নয়। সাধারণ পানের পাশাপাশি নানা মশলাযুক্ত মিষ্টি পানের চাহিদাও বেশ।
মাদারীপুর জেলার শিবচরের উৎরাইল নয়াবাজার নামের একটি গ্রাম্য বাজারের ছোট্ট একটি দোকানে বসে পান বিক্রি করে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন স্থানীয় এক যুবক। এসেছে স্বচ্ছলতাও। ‘শামীম ভাইয়ের শত মশলার মিষ্টিপান’ খেতে দূর-দূরান্ত থেকেও অনেকে ছুটে আসেন মো. শামীম হোসেন নামে এ যুবকের দোকানে। দীর্ঘদিন ধরে দোকানে পান বিক্রি করলেও পানের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের মশলা যুক্ত করে পানকে সুস্বাদু করতে নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শামীম।
তিনি পানে মশলাসহ প্রায় দেড়শ’ ধরনের উপাদান ব্যবহার করেন। কোন মশলা কী পরিমাণ দিলে পানের স্বাদ ঠিক থাকবে, তা রপ্ত করতে পেরেই পান বিক্রিতে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় শিবচরের বিভিন্ন এলাকা এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গাসহ আশেপাশের এলাকা থেকে বিভিন্ন বয়সীরা চলে আসেন তার দোকানে। পান খেয়ে বন্ধু-স্বজনদের জন্য নিয়েও যান তারা।
জানা গেছে, প্রথম দিকে সাধারণভাবে পান বিক্রি করলেও দিন দিন মশলার ব্যবহার বাড়িয়ে চলেছেন তিনি। একটি পানে কমপক্ষে দেড় শতাধিক উপাদান ব্যবহার করেন। মশলার পরিমাণ ভেদে বেড়ে যায় পানের দামও। সব ধরনের মশলার মিশ্রণে একটি পানের দাম পড়ে দুইশ’ টাকা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন বয়সীরা এসে এই পান খেয়ে থাকেন। তবে ইদানিং ‘ফায়ার পান’ নামের একটি পান বেশ বিক্রি হচ্ছে। পানের বিভিন্ন আইটেমে এটি নতুন সংযোজন। নানা মশলার মিশেলে এ পান মুখে দেওয়ার আগে মশলার একটি উপাদানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে তিনি জানান। মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন নিভে গিয়ে ভিন্ন একটি স্মোকি স্বাদ নিয়ে আসে বলে জানান তিনি। ৫০ টাকা দামের এ পানের চাহিদা যুবকদের মধ্যে বেশি।
আলাপচারিতায় পান বিক্রেতা মো. শামীম হোসেন জানান, পানের অসংখ্য মশলার সঙ্গে পেস্তাবাদাম, কাজুবাদাম, জস্টিমধু, নারকেল, চেরিফল, মৌরি (গুয়োমুড়ি) চালকুমড়ার মোরব্বা, কিছমিছ, মধু ও কালোজিরা ব্যবহার করা হয়। পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে দুইশ’ টাকা পর্যন্ত দামের পান রয়েছে। এর মধ্যে ২০ টাকা এবং ৫০ টাকা দামের পান বেশি বিক্রি হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচশ’টি পান বিক্রি করেন তিনি।
মো. সাইদুল নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, শামীম ভাইয়ের পানের পরিচিত অনেক। প্রতিদিন সন্ধ্যায় দোকানের সামনে মোটরসাইকেলের ভিড় তৈরি হয়। অনেকেই দূর থেকে আসেন পান কিনতে। অনেকের বাড়িতে আবার ঘরোয়া কোনো অনুষ্ঠান হলে এখান থেকে মশলাদার পান নিয়ে যাওয়া হয়।
ফরিদপুরের সদরপুর থেকে আসা তরুণ মো. পারভেজ বলেন, বিকেলে ঘুরতে এসেছিলাম ভাঙ্গা চৌরাস্তায়। সেখান থেকে এখানে এসেছি। আমার পরিচিত একজন এ পানের তথ্য দিয়েছিলেন। এরপর থেকে মাঝে মধ্যেই সুযোগ পেলে চলে আসি। বাড়ির জন্য চার/পাঁচটি স্পেশাল পান নিয়ে যাই।
বিক্রেতা শামীম হোসেন বলেন, পানের স্বাদ বাড়াতে সব সময় চেষ্টা করি। নতুন কোনো মশলার ব্যবহার করে নিজে খেয়ে দেখি। লোক মারফত কলকাতা থেকেও পান মশলা আনার চেষ্টা করি। এ এলাকার প্রবাসীরা বিদেশে যাওয়ার সময় এক সঙ্গে অনেকগুলো করে পান নিয়ে যান। পরিচিতরাও আসার সময় আমার পান নিয়ে যেতে বলেন। সব সময় ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি ক্রেতাদের। আগামীতে নতুন নতুনভাবে পান পরিবেশন করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে পান বিক্রি করে ‘ভালো’ আছি।