গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে ঘরে ও বাইরে জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। তাপমাত্রা প্রতিদিনই ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাঁটা স্পর্শ করছে। এই তীব্র গরমে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ছুটছেন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিক্স পণ্যের শোরুমগুলোতে। কিনছেন এয়ার কন্ডিশনার, এয়ার কুলার, টেবিল ফ্যান, দেয়াল ফ্যান, রিচার্জেবল ফ্যানের মতো রুম ঠান্ডা রাখার অ্যাপ্লায়েন্সেস। সেই সঙ্গে অস্বাভাবিক গরমে তৃষ্ণা মেটাতে ঠান্ডা পানির জন্য ব্যাপক বিক্রি হচ্ছে ফ্রিজ।
তীব্র তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের কারণে রূপগঞ্জে এসি, রিচার্জেবল ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। এসব পণ্য কিনতে সাধারণ মানুষ ভিড় করছেন ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানগুলোতে। ক্রেতার চাহিদা বাড়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে অধিক মুনাফা লুটছেন। ফলে প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে দেশী-বিদেশী ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ডের শোরুমে ক্রেতা উপস্থিতি বেড়েছে চোখে পড়ার মতো। পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট ইলেকট্রনিক্সের দোকানে ক্রেতা সমাগম হচ্ছে ব্যাপক। সেই সঙ্গে চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট পণ্যের বিক্রেতারা।
উষ্ণতা বাড়ার সাথে সাথে প্রথাগত নিয়মে বাড়ছে এসি-ফ্যান-কুলারের মতো শীতলীকরণ যন্ত্রের।স্বাভাবিক নিয়মে নিম্ন-মধ্যবিত্তরা চোখ রাখছেন বৈদ্যুতিক পাখার দিকে। উচ্চবিত্তরা কিনছেন এয়ার কন্ডিশনার (এসি)। সাথে রয়েছে লেটেস্ট ফ্রিজের চাহিদাও।
ফ্যান বিক্রেতা মঞ্জু ভুইয়া বলেন, লোডশেডিংয়ে আর প্রচন্ড গরমে বিক্রি বেেড়ছে ভালই। কিন্তু এ অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে মানুষ মরে যাবে। এসি বিক্রেতা হাসান মিয়া বলেন, শীতে বেচাকিনি তেমন একটা না হলেও এখন ভালই হচ্ছে। এমনিতে গরমে বেচাবিক্রি ভালই হয়। তারওপর এবার তাপদাহ আর লোডশেডিংয়ে চাহিদা আরো বেড়েছে।
উপজেলার মার্কেট, ও বিভিন্ন শোরুমগুলো ঘুরে দেখা গেছে, চার্জার ফ্যানের দিকেই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। ধনী-গরিব কমবেশি সবাই ঘরে এক-দুটি চার্জার ফ্যান কিনছেন। বিভিন্ন আকার ও বৈশিষ্ট্যের এসব ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকায়। ফিয়াট, ডিফেন্ডার, ওসাকা, নোভা, কেনেডি, সানকা, সিবেক, কোনিওন, ওয়ালটনসহ নানা ব্র্যান্ডের ফ্যান বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের দাবি, একবার চার্জ দিলে এক নাগাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা চলবে এইসব ফ্যান।
তবে অপেক্ষাকৃত ধনীরা অবশ্য সমানে ছুটছেন এসির দোকানে। এসি বিক্রি হয় ওজনের হিসাবে, ব্র্যান্ডভেদে দামও ভিন্ন ভিন্ন হয়। কত ওজনের এসি লাগাতে হবে তা নির্ভর করে ঘরে বা রুমের ক্ষেত্রফল বা আয়তনের ওপর। ১৫০ বর্গফুট ক্ষেত্রফল পর্যন্ত ঘরে একটন এসি দিয়ে দিব্যি আরামে থাকা যায়। এসব এসির দাম পড়বে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। ২০০ বর্গফুটের ঘরে দেড় টনের এসি লাগাতে হবে, যার দাম পড়বে ৬০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। দুই টনের এসির দাম পড়বে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্যানাসোনিক, জেনারেল, ওয়ালটন, এলজি, র্যাগস, স্যামসাং নানা নামী ব্র্যান্ডের এসি বেশি বিক্রি হচ্ছে।
এ দুঃসহ গরমে অপেক্ষাকৃত নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সহায় সিলিং ও টেবিল ফ্যান। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টেবিল ফ্যান এক হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে প্যানাসনিক ও কেডিকের মতো ব্র্যান্ডের ফ্যানের দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়। এক্ষেত্রে কেবি, হ্যাভেলসের মতো বিদেশি ফ্যানের দিকেই ক্রেতারা বেশি ঝুঁকছেন।
বেশি বাতাস না হলে যাদের শরীর ঠা-া হয় না, তারা কিনছেন বিভিন্ন সাইজের স্ট্যান্ড ফ্যান। এর মধ্যে জিএফসির বেশ নাম ডাক। আকার ভেদে এসব ফ্যানের দাম সাড়ে তিনহাজার থেকে সাত হাজার পর্যন্ত। এছাড়া দেয়ালে টাঙ্গানো যায় এমন ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের ডা. আইভী ফেরদৌস বলেন, এসি বা ফ্যানের বাতাস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রকৃতিতে দাবদাহ চলছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাহিরে না যাওয়াই ভাল। ডিলেডালা জামা পরিধান করা ভাল। প্রচুর পানি পান করতে হবে।।