নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নে নির্বাচনের তফশীল ঘোষনার পর থেকে এবং নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিজয়ী মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ও পরাজিত প্রার্থী আলতাজ উদ্দিনের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে থেমে থেমে চলছে হামলা, মারপিট, ভাংচুরসহ একের পর এক সহিংস ঘটনা। এসব ঘটনায় মান্দা থানায় একাধিক অভিযোগের পাশাপাশি নওগাঁর আদালতে এবং থানায় পৃথক দুটি মামলা রেকর্ড হয়েছে।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে ইউপি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া আলতাজ উদ্দিনের দাবী নির্বাচনের সময়ে এবং নির্বাচন পরবর্তীতে মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের নেতৃত্বে তার কর্মী বাহিনীর এসব তান্ডবলীলায় ভারশোঁ ইউনিয়নের পাকুরিয়া, নিচ মহানগর, বাঁকাপুর, ভারশোঁ, দেলুয়াবাড়ী, বালিচসহ বিভিন্ন গ্রামে তার শতাধিক নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বসতঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে।
এসব কারনে তার অনেক নেতা-কর্মী-সমর্থক প্রাণ ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বেশ কিছু নেতা-কর্মী গুরুতর জখম অবস্থায় মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এসব মামলার আসামী এবং চিহ্নিত একাধিক মাদক মামলার আসামীরা প্রকাশ্য দিবালকে এইসব ঘটনা অব্যহত রেখেছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষনার পরে গত ৭নভেম্বর সন্ধ্যায় ইউনিয়নের পাকুরিয়া শহীদ বাজারে আলতাজ উদ্দিনের কিছু কর্মী সমর্থকের উপরে হামলা চালায় মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের নেতা কর্মীরা। এই হামলায় আলতাজের কর্মী হায়াত আলীর দুটি হাত ভেঙ্গে গুরুতর জখম করা হয় এবং এসময় তার বেশ কিছু নেতা কর্মী আহত হন। এঘটনায় আহত হায়াত আলীর ছেলে মাসুদ রানা বাদী হয়ে ১৫জনকে আসামী করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি এফআইআর আকারে নিতে মান্দা থানাকে নির্দেশ প্রদান করেন। মূলত এখান থেকে সহিংসতার শুরু যা অব্যাহত রয়েছে। পাকুরিয়া গ্রামের আইনালের স্ত্রী রুপজান বলেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের লোকজন আমার বাড়িঘর ভাংচুর-লুটপাট করেছে। হামলার সময় ভয়ে পরিবারের শিশুদের নিয়ে বাড়ির পাশে একটি খেতের মধ্যে লুকিয়ে ছিলাম। না
হলে হয়তো প্রাণে মেরে ফেলতো। আমরা প্রাণ নিয়ে কোনমতে বোনের বাড়ি পালিয়ে এসেছি।’
হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের গৃহবধূ নিচ মহানগর গ্রামের রুবেল স্ত্রী ফুলবানু বলেন, ‘বিজয় মিছিল নিয়ে সুমনের লোকজন তাদের দোকানে হামলা করে সবকিছু ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। হামলাকারীরা নগদ কয়েক লাখ টাকা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালা-মাল লুট করে নিয়ে গেছে। তারা আমাদের ডিপটিউবয়েলসহ চাষের সব জমি দখল করে নিয়েছে। আমার স্বামী
এখন জীবনের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।’
মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। বরং আলতাজের লোকজন আমার বেশকিছু নেতা কর্মীদের মারপিট, খুন-জখম করেছে। এখন পর্যন্ত মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২জন এবং রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও কয়েকজন নেতা-কর্মী চিকিৎসাধীন রয়েছে। ’মান্দা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহিনুর রহমান বলেন, ‘নির্বাচনের বিরোধকে কেন্দ্র করে কিছু ঘটনা ঘটেছে।
এসব ঘটনায় থানায় এবং কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। আসামীদের ধরার জন্য চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। তবে আসামীরা পলাতক থাকায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।