দেশের বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষক দূর্নীতিবাজ। বিশেষ করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ প্রধান শিক্ষক মনগড়া স্কুল চালাচ্ছে। নিজ সিন্ডিকেটের দুই চারজন শিক্ষককে সাথে নিয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির চোখকে ফাঁকি দিয়ে স্কুলে চালাচ্ছে হরিলুট। সারাদেশের গ্রাম্য এলাকার বেশিরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দূর্নীতি, নকল ও বিভিন্ন অনিয়মের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এরা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সার্টিফিকেট পরীক্ষার সময় টাকার বিনিময়ে নকল দেয়, খরচের হিসাবকে নয়ছয় করে হাতিয়ে নেয় স্কুল ফাণ্ডের মোটা অংকের টাকা। প্রধান বিভিন্ন ব্যাক্তিগত কারণে স্কুলে অনুপস্থিত থাকলেও উপস্থিতির খাতায় ঠিকই স্বাক্ষর করে।
তাও আবার সবার সম্মুখে নির্ভয়ে। তার নিজের সিন্ডিকেটের শিক্ষকদের জন্য থাকে সাত খুন মাপ। প্রধান শিক্ষকের পছন্দের শিক্ষকরা এমনকি এলাকায় প্রভাবশালী শিক্ষকরা স্কুলে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকলেও হাজিরা চলে। মাসে দুইদিন সরকারের নিয়ম অনুযায়ী অন্যান্য সহকারী শিক্ষকদের যেখানে ছুটি পেতে রীতিমত হিমসিম খেতে হয়, সেখানে এসব কথিত প্রভাবশালী শিক্ষক কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। তাদের লাগে না কোনো ছুটির আবেদন পত্রও! সিন্ডিকেটের শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষককে সাপোর্ট দিয়ে বহু অন্যায়কে ধামাচাপা দিতে কার্পণ্য করে না। বিনিময়ে এরা স্কুলে আর্থিক সহ অন্যান্য বিশেষ ধরনের সুবিধা গ্রহণ করে। প্রধান শিক্ষক এভাবেই বিশেষ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে তার নিজের সিন্ডিকেটের শিক্ষকদের। মেধাবী, সত্যবাদী ও পরিশ্রমী শিক্ষকরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। ম্যানেজিং কমিটিকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে সহকারী শিক্ষকদের কাগজপত্র, বিএড ও টাইম স্কেল আটকে দিয়ে এসব প্রধান শিক্ষকরা কায়েম করেছে রামরাজত্ব।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা গহীন সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। কোনো কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। নিজের সিন্ডিকেটের শিক্ষককে হাতে রেখে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যদের মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে নিজেদের ধোয়া তুলসী পাতা হিসেবে জাহির করছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের উচিত সরেজমিনে তদন্ত করে সত্য মিথ্যা যাছাই করে স্কুল পরিচালনা করা। আমি সারাদেশের সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিবর্গকে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ করছি। বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু শিক্ষক পরীক্ষা শুরুর ৬ মাস আগে থেকেই পরীক্ষার্থীদেরকে টাকার বিনিময়ে নকলের অফার দেয়। যার কারণে পরীক্ষা শুরুর আগেই ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়, ছুটে নকলের পেছনে।
পরীক্ষার্থীরা ৫০০/১০০০/২০০০ টাকার বিনিময়ে গোপনে নকলের জন্য ধরণা দেয় ওইসব অসাধু শিক্ষকদের কাছে। সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকও নকলের মত অসাধু কাজে পটু খারাপ শিক্ষকদের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। এ সুযোগে একদিকে যেমন এসব অসাধু শিক্ষকরা প্রতি পরীক্ষার সময় লক্ষ লক্ষ টাকা অবৈধভাবে আয় করছে, অপরদিকে দেশের আগামীর কর্ণধার কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরা নীরবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ। এই কাজে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যায়, তথাকথিত ভণ্ড ও দূর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক জড়িত। প্রধান শিক্ষক ঠিক হলে, একটা স্কুল ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগে না; অপরদিকে প্রধান শিক্ষক খারাপ, দূর্নীতিবাজ ও নকল নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্বাসী হলে এলাকার স্বপ্ন ও জ্ঞানের বাতিঘর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধীরে ধীরে ধ্বংসের খাদে নিপতিত হয়। প্রধান শিক্ষক হয়েও টাকার বিনিময়ে নকল দিচ্ছে! এটা আমাদের জন্য বড়ই দূর্ভাগ্যের ব্যাপার! এগুলো বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে চললেও হয়রানি হওয়ার ভয়ে কেউ মুখ খোলে না। এখন আর মুখ বন্ধ করার সময় নেই। কারণ এরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একেবারে শেষ করে দিচ্ছে।
এসব তথাকথিত ভণ্ড ও প্রতারক ধাঁচের প্রধান শিক্ষকগুলো বিভিন্ন কৌশলে তাদের অবৈধ অর্থনৈতিক দূর্নীতিকে বৈধতায় রূপ দিচ্ছে। শিক্ষার আলো বিতরণের নামে শিক্ষার আলো নিভিয়ে দেয়া এসব তথাকথিত শিক্ষকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানাচ্ছি। সদ্য প্রকাশিত হওয়া এসএসসি ফলাফল ভালো মনে হলেও আসল ঘটনা খুবই ভয়াবহ। নকলের বিনিময়ে ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসীকে বেশী পরিমাণ পাশ দেখিয়ে নিজেরা ভালো সাজলেও সত্যিকার অর্থে আমাদের আগামীর কর্ণধার কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সোনালী ভবিষ্যৎ শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের আগামীর কর্ণধারদের বাঁচাতে, এই সমাজ ও দেশকে বাঁচাতে সবাইকে সবার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ রইল। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, স্থানীয় সাংসদ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্কুল ম্যানেজিং কমিটি, এলাকার সচেতন জনগণ ও অভিভাবকরা সবাই সচেতন, সোচ্চার ও প্রতিবাদী হলেই কেবল এমন ভয়াল বিপর্যয় থেকে আমরা আমাদের আগামীর কর্ণধার প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের বাঁচাতে পারবো। বাঁচাতে পারব আমাদের দেশের সুন্দর, স্বপ্নীল ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।