মাগুরার শালিখায় শীতের আগমনী বার্তার সঙ্গে গাছিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য খেজুর গাছ প্রস্তুতে।শীতের হিমেল হাওয়ায় গাছিরা রস আহরণের আনুসঙ্গিক কাজ শেষ করেছেন।আবহমানকাল থেকে গ্রামবাংলার আদি ঐতিহ্যের সঙ্গে খেজুরের রস ও শীতকাল একাকার হয়ে আসছে।
শীতের মূল উৎসবই হলো শীতের পিঠা।যার মূল উপাদান খেজুরের রস,তাল রস,ঝোলাগুড় ও পাটালী।শীতের সকালে রোদে বসে যেমন পিঠা খেতে শিশু থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ সকলের ভালো লাগে।তেমনই শীতের সকালে গাছ থেকে পেড়ে আনা খেজুরের কাচা রস খেতেও মজা কম নয়।
আবার গ্রামের ঘরে ঘরে পিঠা ও পায়েস তৈরির ধুম পড়ে যায়।শিশু,যুবক, বৃদ্ধ সবাই মেতে উঠে পিঠা খাওয়ার উৎসবে।তাই প্রতিবছর খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয় শীতের শুরুতেই।এ বছরও শালিখা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে খেজুরগাছ কাটার কাজ প্রায় শেষ করেছেন গাছিরা।
গাছের মাথায় অনেকখানি বাকল তুলে সেখানে হাঁড়ি বেঁধে এ রস সংগ্রহ করা হয়।উপজেলার অনেক গ্রামে মহাজনরা আগাম রসের জন্য গাছিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে থাকেন।সেই টাকায় অনেকে রস সংগ্রহের বিভিন্ন উপকরণ কিনে রস সংগ্রহ শুরু করেন।
উপজেলার কাদিরপাড়া গ্রামের গাছি মোঃ হাফিজুর রহমান জানান,অন্য মৌসুমে তিনি বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।কিন্তু শীত এলেই খেজুরগাছ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি।এ অঞ্চলে খেজুর রসের পর্যাপ্ত চাহিদা থাকায় ভালো আয় করেন তিনি।এছাড়া শীতের সময় ধনী-গরীব সকলের কাছে খেজুরের গুড়েরও বেশ কদরি আছে।
তিনি আরো জানান,তার নিজের কোন গাছ নেই।অন্যের গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতে হয় তাকে।তাই গাছের মালিককে রসের একটা অংশ দিতে হয় তার।তারপরেও প্রতিবছর তিনি রস ও গুড় বিক্রি করে লাভবান হয়ে থাকেন।তবে বেশি লাভবান হন কাচা রস বিক্রয় করে।আপনি কতগুলো খেজুর গাছ এবছর কেটেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন এবছর ১০০ থেকে ১২০ টি গাছ কেটেছি। আশা করি ভালই রস পাবো।
উপজেলার আড়পাড়া শরুশুনা,গঙ্গারামপুর,দীঘলগ্রাম,শতখালী,তালখড়িসহ আরো কয়েকটি গ্রামঘুরে জানা যায়,গাছিদের বাড়ির একপাশে স্তপ করা থাকে অসংখ্য ছোটবড় রসের হাঁড়ি।মহিলারা বাড়ির উঠানে উনুনে মস্ত পাত্রে রস জ্বাল দেয়ে থাকেন।আর সারাদিন ধরে চলে জ্বালাইয়ের মাধ্যমে রস শোধন প্রক্রিয়া।এর মাধ্যমে রসের মিষ্টি গুড় তৈরি হয়।এসময় পুরো এলাকা খেঁজুরের রসের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আলমগীর হোসেন জানান,প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে খেজুরগাছের ভূমিকা অপরিসীম।এ উপজেলায় এখনো ২৭ হাজার ৩০০ খেজুরগাছ আছে।খেজুরগাছ ও রসের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ক্রমশ তা হ্রাস পাচ্ছে।তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিক কোন গাছ আমাদের উপজেলায় নাই।