সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পায়ের হাটুর উপর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছিল কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামের অটোরিকশা চালক গোলবার হোসেনকে। দুর্ঘটনার কারণে বছর খানেক তাঁকে চিকিৎসা নিতে হয়েছিল। এতে তার জায়গা-জমি ও জমানো টাকা পয়সা শেষ হয়ে গিয়েছেল। এক পা না থাকায় অনেকে তাকে কাজেও নিতে চাইতেন না। স্ত্রী-সন্তান আর বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন গোলবার হোসেন। দুবেলা দুমুঠো খাবর জুটছিল না তাঁদের। কয়েক যুবক আর একটি সংগঠনের প্রচেষ্টায় বেঁচে থাকার অবলম্বন পেয়ে হাসি ফুটেছে গোলবার হোসেন ও তার পরিবারের মুখে।
গোলবার হোসেনের পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গত ১১ ও ১২ অক্টোবর দু’টি পোস্ট দেন উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কেদার গ্রামের দুই যুবক শহিদুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান। তাদের পোস্ট দেখে আরেক যুবক আলোকবর্তিকা যুব ও সমাজ উন্নয়ন সংস্থা ভূরুঙ্গামারীর সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান মুরাদ সেটি শেয়ার করে সহযোগিতার উপায় খুঁজতে থাকেন।
শহিদুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গোলবার হোসেনের দুরাবস্থার দেখে কেউ না কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে সেই প্রত্যাশা থেকেই তাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়া হয়েছিল।’ মতিয়ার রহমান মুরাদ বলেন, ‘গোলবার হোসেনকে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে দেয়া পোস্ট দেখে কয়েকটি সামাজিক সংগঠন ও কয়েকজন দাতা ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করি। তাদের মধ্য থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আশ্বাস দেন গোলবার হোসেনের জন্য কিছু একটা করবেন, তবে একটু সময় লাগবে।’ সম্প্রতি ওই ব্যক্তির সহযোগিতায় কেয়ার এন্ড শাইন ফাউন্ডেশন’র পক্ষ থেকে ৪০ হাজার টাকার মালামাল দিয়ে গোলবার হোসেনকে একটি মুদি দোকান চালু করে দেয়া হয়। এছাড়া বলদিয়া ইউনিয়নের সাধু মোড়ের নূরনবী ইসলাম নবী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বিনা জামানতে একটি ঘর গোলবার হোসেনকে ভাড়া দেন দোকান করার জন্য।
গোলবার হোসেন বলেন, ‘ঢাকায় অটোরিকশা চালাতাম। সেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পায়ে মারাত্মক আঘাত পাই। পরে পা-টি কেটে ফেলতে হয়েছে। চিকিৎসা চালাতে গিয়ে সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। দিন চলছিল না। লোকজনের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে একটি ভ্যান গাড়ি কিনে চালানোর চিন্তা করছিলাম। কেয়ার এন্ড শাইন ফাউন্ডেশন ৪০ হাজার টাকার মালামাল দিয়ে একটি মুদি দোকান করার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সকলের সহযোগিতায় এখন অনেক ভালো আছি।’
আমেরিকা ভিত্তিক অলাভজনক দাতব্য সংস্থা কেয়ার এন্ড শাইন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘সংস্থাটি বাংলাদেশে শিক্ষা বৃত্তি প্রদান, স্বাস্থ্য সহায়তা, খাদ্য ও বস্ত্র সহায়তা দান, পানীয় জলের সমস্যা দুর করা এবং হতদরিদ্রের টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে কাজ করে যাচ্ছে। স্বাবলম্বী প্রকল্পের আওতায় একটি দরিদ্র পরিবার যাতে স্বাবলম্বী হতে পারে সেই লক্ষ্যে গোলবার হোসেনকে সহায়তা করা হয়েছে।’