সময়ের সাথে সাথে প্রতারকরা প্রতারণার ধরন পরিবর্তন করে সহজ সরল মানুষদের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ০৬ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে র্যাব-১১, সিপিসি-২, কুমিল্লা বরাবর জনৈক ভুক্তভোগী ভিন্নধর্মী এক প্রতারক ভুয়া ডাক্তার হিসেবে পরিচয় প্রদান এবং পরবর্তীতে বিশ্বাস অর্জন করে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেওয়া মর্মে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যেখানে সে উল্লেখ করেন, প্রতারক আব্দুস সালাম (৩৫), পিতা- মোঃ মোশারফ বিশ্বাস, মাতা-মৃত রোকেয়া বেগম, সাং-বাজদিয়া, থানা-জীবননগর, জেলা- চুয়াডাঙ্গা নিজেকে ভুয়া ডাক্তার হিসেবে পরিচয় প্রদান করে।
জনৈক ভিকটিম কুমিল্লায় একটি শো-রুম পরিচালনাকারী। ঘটনার সূত্রপাতে জানা যায়, গত ২৪/০২/২০২২ ইং তারিখ লাকসাম থেকে কুমিল্লা আসার সময় প্রতারক আব্দুস সালামের সাথে তার বাসের মধ্যে পরিচয় হয়। কথাপ্রসঙ্গে নিজেদের মধ্যে পরিচয় জানাজানি হয় এবং আলাপচারিতার এক পর্যায়ে প্রতারক আব্দুস সালাম ভিকটিমের ঠিকানা, কর্মস্থল ও অন্যান্য তথ্য জানতে চাইলে ভিকটিম জানায় কুমিল্লায় তিনি একটি ছোট-খাট শো-রুম পরিচালনা করেন।
পরবর্তীতে প্রতারক ভুক্তভোগীর নিকট হতে শো-রুমের ঠিকানা নিয়ে হঠাৎ একদিন ভিকটিমের শো-রুমে আসে এবং তার দোকানের ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা ও অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে খোজ-খবরসহ ভিকটিমের মোবাইল নম্বর নেয়। এরপর প্রতারক আব্দুস সালাম প্রায়ই ভিকটিমের দোকানে যাওয়া-আসা শুরু করে। ইতিমধ্যে সে ভিকটিমের নিকট নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় প্রদান করে এবং ডাক্তার পরিচয় প্রদানের বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য সে দুইটি ভুয়া আইডি কার্ড তৈরী করে ও ভিকটিমকে তা দেখায়। প্রতারক আব্দুস সালাম বিভিন্নভাবে ভিকটিমকে ডাক্তারী ক্ষেত্রে বিনিয়োগে অধিক মুনাফা অর্জনের প্রলোভন দেখিয়ে তার নিকট হতে প্রাথমিকভাবে ৭০,০০০/- টাকা গ্রহণ করে।
পরবর্তীতে প্রতারক আব্দুস সালাম ডাক্তারী যন্ত্রপাতি ক্রয়হেতু ডাক্তারী ব্যবসা প্রসারসহ অধিক লাভের কথা বলে ভিকটিমের নিকট আরো টাকা দাবী করে। ভিকটিম আব্দুস সালামের ডাক্তারী ব্যবসার সত্যতা যাচায়ের জন্য তার নিকট প্রমাণ চাইলে প্রতারক আব্দুস সালাম তার স্ত্রীর কর্মস্থল মনোহরগঞ্জ সরকারী হাসপাতালে গিয়ে চেম্বারের ভিতরে তোলা ছবি, চেয়ারে বসা অবস্থায় তোলা ছবি, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমকে প্রদান করে।
পরবর্তীতে ভিকটিম আরো সত্যতা যাচায়ের জন্য নিজে তার চেম্বার দেখার জন্য নিজে যেতে চাইলে প্রতারক আব্দুস সালাম বিভিন্ন তাল-বাহানা শুরু করতে থাকে এবং তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। ইতিমধ্যেই ভিকটিম পুরো বিষয়টি বুঝতে পারে এবং কোন দিক দিশা না পেয়ে প্রদানকৃত অর্থ ফেরত পাবার আশায় হয়ে র্যাব-১১, কুমিল্লা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
উক্ত অভিযোগের সত্যতা যাচাইপূর্বক র্যাব-১১, সিপিসি-২ গোয়েন্দা নজরদারী ও মাঠ পর্যায়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা সূত্র হতে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক আব্দুস সালামকে গত ১০ জানুয়ারী ২০২৩ইং তারিখ রাতে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী মডেল থানাধীন মনোহরপুর এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকালে তার নিকট হতে দুইটি ভুয়া ডাক্তারী আইডি কার্ড ও তার নিজস্ব ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর দেয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, সে বিভিন্ন সময় একই পন্থা অবলম্বন করে সাভার, গাজীপুর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ সহ বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের প্রতারণা চালিয়ে আসছিল বলে স্বীকার করে এবং এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ইতিমধ্যে সে কয়েকজনের নিকট হতে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানায়। উক্ত বিষয়ে গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী মডেল থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।