গতকাল বৃহস্পতিবারে সকালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কার্যালয় সামনে আলোচনা সভায় সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিক উদ্দিন ঠাকুর প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না আমার বিষয় সামাজিক যোগাযোগভিডিওর ব্যাপারে দুইজন গ্রেফতার হয়েছে এবং বাকি ঘটনাটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যাবে আপনার সামনে।
কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে একটি আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এই নিয়ে সরাইল উপজেলার বিভিন্ন মহলে মানুষের মাঝে আলোচনার ঝড় উঠেছে। ফেইসবুক থেকে গত সোমবার (২০ জুন) সন্ধ্যার পর থেকে এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ৩ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক উদ্দিন ঠাকুর এক নারীর সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত রয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই।
২১ জুন মঙ্গলবার এ ঘটনায় গণমাধ্যমে একটি বক্তব্য প্রকাশে উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিক উদ্দিন ঠাকুর মঙ্গলবার জানান, সামনে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। আমার জনপ্রিয়তাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের পারিবারিক ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল এ ব্যপারে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের বড় পুত্র সাইফুল ইসলাম ঠাকুর রাব্বি বাদি হয়ে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইনে সরাইল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে সরাইল উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার দ্বিতীয় স্ত্রীর আপত্তিকর ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে সরাইল থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলায় গ্রেফতার হলেন- সরাইল উপজেলা সদর ইউনিয়নের কুট্রাপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক শেখ আফরান আহমেদ আরিফ (১৯) এবং কুট্টাপাড়া এলাকার সুলতান মিয়ার ছেলে তরিকুল ইসলাম আপেল (২৯)। গ্রেফতারের বিষয়ে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের একটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় বুধবার রাতে উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে সাইফুল ইসলাম রাব্বি সরাইল থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে একটি মামলা করেন। এতে উল্লেখ্য করেছেন, তার বাবা ২০১৭ সালে পরিবারের সম্মতিতে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। সম্প্রতি তার বাবার সঙ্গে সৎ মায়ের একান্ত ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। মামলা দায়েরের পর কুট্টাপাড়া এলাকা থেকে বুধবার রাতে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় সাংবাদিকদের ওসি আসলাম হোসেন আরও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বিতীয় বিয়ের কাবিননামা আমাদের দিয়েছেন। গ্রেফতার আসামিরা মোবাইলে অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে সংরক্ষণ, প্রচার ও সরবরাহ করায় পর্নোগ্রাফি আইনের ৮ ধারায় অপরাধ করেছেন। তাদের মোবাইলে এসব আলামত থাকায় তা জব্দ করা হয়েছে। দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গোপনে ধারণকৃত পারিবারিক ঐ ভিডিওটি গত ২০ জুন থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি থেকে ভাইরাল করা হয়।
বিষয়টি ঐ পরিবারের দৃষ্টিগোচর হলে পরিবারের পক্ষ থেকে সরাইল থানায় একটি সাধারণ ডায়রী (জিডি) করা হয়। জিডি নং ১১৯৪। এদিকে পুলিশের কাছে ২০১৭ সালের ২ মার্চ তারিখে মরিয়ম বেগমের সাথে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের ইসলামী শরীয়া মোতাবেক পারিবারিকভাবে দ্বিতীয় বিয়ে হয়। তার নিকা নামা দেওয়া হয়েছে।দাম্পত্য জীবনের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের একটি ভিডিও সুপরিকল্পিতভাবে ধারণ করে একটি কুচক্রীমহল। তবে এই নিয়ে আলোচনা- সমালোচনা গণমাধ্যমে অনেকভাবে প্রকাশ করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। অনেকে প্রকাশ করেছেন,উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পারিবারিক ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল, আবার এমন করে প্রকাশ করেছে,
সরাইলে এক নারীর সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুরের আপত্তিকর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে চেয়ারম্যান শুরু থেকে দাবি করেছিলেন এই ভিডিও সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁকে সামাজিকওরাজনৈতিকভাবে হেয় করতে তাঁর মাথা লাগিয়ে এই ভিডিওটি তৈরি হয়েছে। ঘটনার তিন দিন পর এখন তিনি দাবি করছেন সেই নারী তাঁর বিবাহিত স্ত্রী। একটি কাবিননামাও তিনি সরাইল থানা- পুলিশের কাছে উপস্থাপন করেছেন। সেখানে পার্শ্ববর্তী আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা ইউনিয়নে কাজী অফিসে তাঁদের বিবাহ হয়েছে। এনিয়ে আছে মানুষের মাঝে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা। এ ব্যপারে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি একান্তই আমার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক।
আমার একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয়টি নিয়ে একটি কুচক্রী মহল পরিকল্পিতভাবে আমাকে অপমান, অপদস্থ করার উদ্দেশ্যে আমার পারিবারিক মানহানি ও সম্মান নষ্ট করার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। যারা এ ঘটনার অন্তরালে থেকে গোপনে ভিডিও ধারণ, ভিডিও প্রদর্শন, সংরক্ষন, প্রচার ও প্রকাশের সাথে জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আমি আইনানুগভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্থি দাবি করছি। এবং এ পর্যন্ত পুলিশ দুইজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে।আটকের কথা স্বীকার করে সরাইল থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি)মো.আসলাম হোসেন বলেন,এ মামলা দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অজ্ঞাত আসামীদের ব্যপারে তদন্ত চলছে।এদিকে গতকাল এ ব্যপারে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল-সার্কেল)এর এএসপি মো.আনিছুর রহমান তিনি সাংবাদিকদের বলেন,এ ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে পারিবারিক সম্মতিতে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন । ঐ ভদ্র মহিলাকে নিয়ে একটি ব্যক্তিগত মুহূর্তের ভিডিও ভাইরাল হয়। সরাইল থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। জিডিমূলে তাঁরা যাদেরকে সন্দেহ করেছিলেন তাদের মধ্যে দুইজনকে আমরা আটক করে তাদের মোবাইল সিজ করি। জব্দকৃত মোবাইল থেকে ভিডিওটি ভাইরালের পূর্বের তারিখে তাদের মোবাইলে ভিডিওটি পাওয়া যায়।
অতঃপর তাদের দুই জনকে গ্রেফতার করে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।এদিকে গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে আজ শুক্রবার (২৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় সরাইল উপজেলার পশ্চিম কুট্টাপাড়া এলাকায় আবুল কালাম এর নেতৃত্বে একটি ঝাড়ু মিছিল করেছে গ্রেফতার দুই যুবকের পরিবারের সদস্যরা ও স্থানীয় নারীরা অংশ নেন।