বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় শরণখোলায় গত দুই দিন ধরে টানা ভারি বৃষ্টিপাতে ফসলের মাঠ, রাস্তা-ঘাট, পুকুর, মাছের ঘেরসহ শতশত বাড়ি ঘর তলিয়ে গেছে। মঙ্গলবার ভোররাত থেকে শুরু বৃষ্টির সঙ্গে অবিরাম দমকা বাতাস বইছে। বৃষ্টিপাতের ফলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় অর্ধশত পরিবারসহ উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ১০হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া, বৃষ্টির পানিতে আউশ ও আমনের বীজতলার ৮০ভাগই পানিতে ডুবে রয়েছে। শাক-সবজিসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসলও তলিয়ে গেছে । ঘের ও পুকুর তলিয়ে ভেসে গেছে প্রায় অর্ধকোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির চাষের মাছ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাউথখালী ইউনিয়নের উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর, উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের পুরাতন পোস্ট অফিস, টিএন্ডটি, খাদ্যগুদাম এলাকা, উত্তর কদমতলা এবং সাউথখালী ইউনিয়নের বগী, চালিতাবুনিয়া, খুড়িয়াখালী এলাকার শতশত পরিবার পানি বন্ধি হয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে। ঘরের মধ্যে পানি উঠে যাওয়ায় এসব পরিবারে রান্নাবান্না বন্ধ রয়েছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের বগী এলাকার নির্মানাধীন বেড়িবাঁধের মধ্যে দুই শতাধিক পরিবার এবং খুড়িয়াখালী গ্রামের মূল বাঁধের বাইরে আরো প্রায় তিন শত পরিবার চরম কষ্টে আছে। পানি নামার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। রায়েন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান মিলন জানান, উপজেলা সদরসহ তার ইউনিয়নে প্রায় তিন সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি তিনি নিজেও এসব পরিবারের খোঁজ নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ওয়াসিম উদ্দিন জানান, বৃষ্টির পানিতে ৭৩০ হেক্টর আমন ও ৯৫০ হেক্টর আউশের বীজতলা সম্পূর্ণ পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া, ১০০হেক্টর সবজি, ১০ হেক্টর পানসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসলেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে বীজ তলার তেমন ক্ষতি হবে না। কিন্তু শাক-সবজি নষ্ট হবে।
উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ জানান, উপজেলার তুলনামূলক নিচু এলাকার ২৫৪টি ঘের ও পুকুরের সমস্ত মাছ ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমান ৪৫ লাখ টাকা।
শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাতুনে জান্নাত বলেন, পানিবন্দি বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শ করা হয়েছে। চরম দুর্ভোগে রয়েছে বহু পরিবার। কিছু কিছু এলাকায় শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা চলছে। সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।