পৃথিবীতে মায়াময়ী এক মুখ হলো বাবা।বাবা মানেই পরম প্রশান্তির স্থান,বাবা যেন বটবৃক্ষের ছায়া।বাবা মানেই শক্তি ও নির্ভরতার নাম।অনেক দম্পত্তি সন্তানের মুখ দেখার জন্য বছরের পর বছর তপৎস্যা করে থাকেন।ঈশ্বরের কৃপায় কারো নিজের ঔরসজাত সন্তানের মুখ দেখার সৌভাগ্য হয়।আবার কেউ পালক সন্তান নিয়ে থাকেন।সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের ভালোবাসা চিরকালের।
তবে আছে মুদ্রার উল্টা পিঠও।বাবা-মা তাদের সন্তানকে খেয়ে না খেয়ে বুকে-পিঠে লালন পালন করে থাকেন।এক সময় সেই সন্তানরা বাবা-মা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।এক মুঠো খাবারের আশায় সন্তানের বিরুদ্ধে থানা ও আদালত পর্যন্ত যেতে হয় বাবা- মাকে।ঠিক এমনই এক করুন ঘটনা ঘটেছে নওগাঁর নিয়ামতপুরে।
বৃদ্ধ বাবা খাবারের কষ্ঠ সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে শুধু দু’মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার আশায় ছেলে ও পুত্রবধুর বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ময়েজ উদ্দীন (৮০) নামে এক অসহায় বাবা।তিনি উপজেলার পাঁড়ইল ইউনিয়নের দিঘীপাড়া (পশ্চিম পাহাড়) গ্রামের বাসিন্দা এবং বার্ধক্যজনিত কারণে বর্তমানে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।আজ সকালে নিয়ামতপুর থানায় বৃদ্ধ তার ছেলে মুনছের আলী (৩৫) ও পুত্রবধু সুলতানা বেগমের (৩০) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,বৃদ্ধ ময়েজ উদ্দীনের স্ত্রী অনেক আগেই মারা গেছেন।তার ছেলে কৃষি কাজ করে সংসার চালান।স্ত্রী মারা যাওয়ার পর নিজেই রান্না করে খেতেন।কিন্তু বার্ধক্যজনিত ও বয়সের ভারে বর্তমানে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।একমাত্র ছেলে ভরণপোষণ দেন না।শুধু বাঁচার তাগিদে নিজেকেই নিজের খাবার রান্না করে খেতে হয়।অনেক সময় রান্না করে খেতে না পেরে উপোষ থাকতে হয়।
স্থানীয় সাবেরা বেগম বলেন,এগুলো কথা বলতে গেলে অনেক কথায় এসে যাবে।এখন বুঝে নিন কেন বৃদ্ধ বয়সে থানায় অভিযোগ করলো নিজ সন্তান এর নামে।যে বাবা কষ্ট করে সন্তানকে লালন-পালন করে বড় করে তোলে সেই বাবার এই হাল।মানুষ কতই নিষ্টুর হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল হোসেন বলেন,ছেলে মুনছের আলী তার বাবার প্রতি খুবই উদাসীন।কোনো খোঁজখবর রাখে না।মাঝেমধ্যেই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বাবার সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করে।
বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার প্রতিবেশীরা মুনছেরকে বুঝানোর পরও কোন প্রতিকার হয়নি।অবশেষে নিরুপায় হয়ে ভরণপোষণের দাবিতে ছেলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন বৃদ্ধ।ভুক্তভোগী বাবা ময়েজ উদ্দীন বলেন,মেলা দিন থ্যাকা হামি একাই ভাত রান্দা খাই বাপো।মেলা বয়স হছে হামার তাই তেমন কাজ-কাজও করবার পারিনা।হামার একমাত্র ছোল থাকার পরও হামাক ঠিকমত দেকেনা।খোঁজ নেয়না হামার।
ছেলের বউডাও আগে খোঁজখবর লিতো।কিন্তু এখন আর লেওনা।একই এক ঘরোত রান্তা খাওয়া লাগে।যেদিন রানবার পারিনা সেদিন না খাইয়া থাকা লাগে।আশে পাশের লোকজনকে লজ্জায় কবারও পারিনা সব সময় খাবারের কথা।২/৩বছর ধরা এমন কষ্ঠ হামার।আর সহ্য করবার পারিচ্ছিনা।লিজের সন্তান যদি ভাত না দেয়,ঠিক মত খোঁজ না নেয়।তয় এর চেয়ে আর দুঃখ- কষ্টের কি হবার পারে।তাই বাধ্য হইয়া থানাত অভিযোগ করিছি।জানিনা অভিযোগ করা সন্তারের ছোখের বিষ হনু কিনা উল্টা।খুব কষ্ট লাগে বাপো কি আর কমু কও।
বৃদ্ধর ছেলে মুনছের আলী বলেন,দেখুন আমার বাবার বয়স হয়েছে।সব সময় হয়ত তার চাহিদা পুরন করতে পারিনা।বাবা যে অভিযোগ করেছেন তা ঠিক না।যদি অভিযোগ সঠিক না হয় তাহলে কেন থানায় অভিযোগ করলো এমন প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর দিতে পারেনি মুনছের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়ামতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ হুমায়ন কবীর অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,ময়েজ উদ্দীন ছেলের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করেছেন থানায়।আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।আর ময়েজ উদ্দিন এর যেন খাবার সমস্যা না হয় আপাদত সেই ব্যবস্থা করবো।অভিযোগ যদি সত্য হয় তবে আইন অনুযায়ী ছেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।