কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি, কাশি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পচন্ড গরম ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সব বয়সী মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমনিয়া ও জ্বরে। তবে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে এ রোগের প্রবণতা দেখা দিয়েছে বেশি। করোনা সংক্রমণও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতেও ভর্তি হচ্ছে এই সকল রোগীরা। এছাড়াও রোগীরা ভিড় জমাচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালের বহিঃ বিভাগ ও চিকিৎসকদের চেম্বারে। চিকিৎসকরা বলছেন আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে সৃষ্ট ভাইরাসজনিত জ্বর, তবে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যপারেও জোর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
এদিকে মৌসুমি এসব রোগ শিশু আর বৃদ্ধদের বেশি হলেও এতে আক্রান্ত রোগী ও অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরে জানা যায়, প্রতিদিন মৌসুমি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃ বিভাগ থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন বয়সের শত শত লোক।
আনেকেই আবার ভালো চিকিৎসা সেবা পেতে ভর্তি হচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃ বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার দুলালপুর গ্রামের জেসমিন আক্তার বলেন, তিনদিন যাবত তার জ্বর, সর্দি, কাশি ও শরীরে পচন্ড ব্যাথায় ভুগছেন তিনি। এতোদিন এলাকার ঔষুধ দোকান থেকে ঔষুধ কিনে খেয়েছেন। এতে তিনি সুস্থ্য না হওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহিঃ বিভাগে চিকিৎসা কর্মকর্তাদের মরামর্শ নিয়েছেন।
আন্তঃ বিভাগ থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় কথায় হয় শিদলাই গ্রামের সরুজ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, আমার মেয়ে নুসরাত (১০) জ্বরে আক্রন্ত হয়ে অনেক অসুস্থ হয়ে পরে। তখন আমরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে আসলে চিকিৎসা কর্মকর্তা তাকে আন্তঃ বিভাগে ভর্তি দেন এবং সেখানে তাকে রেখে চিকিৎসা সেবা নিতে আমাদের পরামর্শ দেন। আজ তিনদিন পর সে অনেকটাই সুস্থ্য হওয়ায় আমরা তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন বললেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে এখন সব বয়সের মানুষ ঠান্ডাজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাইরাস জনিত জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। সম্প্রতি চারপাশে ভাইরাস জ্বরের ছড়াছড়ি। ভাইরাস জ্বর এখন জটিল আকার ধারণ করছে। তবে ভাইরাস জ্বর হলে অনেকে বুঝতে পারেন না। ভাইরাস জ্বরের প্রথম লক্ষণ স্বাভাবিক জ্বরের মতোই। ভাইরাস জ্বরে সাধারণত প্রথমেই জ্বর অনেক বেশি আসে। প্রথম থেকে দেখা যায় জ্বরটা শুরু হয়। জ্বরের মাত্রা থাকে অনেক। প্রায় ১০৩ থেকে ১০৪-এ উঠে যায়। এই ক্ষেত্রে জ্বর নামাতে সাধারণ প্যারাসিটামল খাবে রোগিরা। অনেক সময় দেখা যায় জ্বর তিন দিনেও কমে না। রোগীর স্বাভাবিক অবস্থারও অবনতি হতে থাকে। ভাইরাজ জ্বরে মাথাব্যথা থাকতে পারে। নাক দিয়ে পানি ঝরতে পারে, কাশি হতে পারে।
কখনো কখনো শ্বাসতন্ত্রকে যুক্ত করে। দীর্ঘ সময় ধরে জ্বরটা একই রকমভাবে চলছে। ভাইরাস জ্বরের সঙ্গে অন্য অনেক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন ব্যথা, মাংসে বা জয়েন্টে হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে গায়ের মধ্যে র্যাশ বা লুনতি দেখা দিচ্ছে। ভাইরাস জ্বর আট-দশটি সাধারণ জ্বরের মতো নয়। রোগী অনেক বেশি ল্যাথার্জিক হয়ে যায় ও নেতিয়ে পড়ছে। জ্বরের মাত্রার তুলনায় রোগীর স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি অনেক বেশি। মৌসুমি জ্বররের রোগী বমি করতে পারে। যখন দেখবেন রোগী অনেক বেশি বমি করছে, রোগী খাচ্ছে না।
তখন একটু সতর্ক হতে হবে। জ্বর হলেই রোগীর শরীর থেকে যথেষ্ঠ পরিমাণ পানি বের হয়ে যায়। রোগী যথেষ্ট পরিমাণ পানি, ওরস্যালাইন খেতে হবে। অর্থাৎ তার শরীরের পানি যেন ঠিক থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সব শেষে তিনি, এ অবস্থায় সকলকে ঘরে থাকতে এবং জরুরী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হতে বলেন। এছাড়াও, জ্বরনাশক প্যারাসিটামল ওষুধগুলো ছাড়া রোগীকে অন্য কোনো উচ্চ মাত্রার ওষুধ সেবন না করার আহবান জানান।