ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে কুমিল্লায় খামারিদের দুশ্চিন্তা ততই বাড়ছে করানোর করণে। প্রতি বছরের মতো এবারও জেলায় দুই লাখ ৩৮ হাজার ৩৪৫ গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। চলমান বিধিনিষেধে এসব পশু বিক্রি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
চলমান কঠোর বিধিনিষেধে জেলার সব পশুর হাট বন্ধ রয়েছে। কবে উন্মুক্ত হবে সেটিও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলার ৩০ হাজার ১৮৮ জন খামারি।খামারিরা বলছেন, করোনার কারণে এবারও যদি পশু বিক্রি করতে না পারেন তাহলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার খামারি একেবারেই পথে বসবেন। করোনার কারণে শেষ পর্যন্ত পশুর হাট চালু না হলে এ বছরও অর্ধেকেরও বেশি পশু অবিক্রীত থেকে যাবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন খামারে এক লাখ ৮১ হাজার ১৬৮ টি ষাঁড়, ৪০ হাজার ৭৪১টি ছাগল ও তিন হাজার ৪৪৯টি ভেড়া রয়েছে। এছাড়া সাধারণ কৃষকদের লালনপালনে রয়েছে ১২ হাজার ৯৮৭ টি গবাদি পশু। গত বছর এর সংখ্যা ছিল দুই লাখ ৪৭ হাজার ৭২৮টি পশু। কোনো প্রকার মেডিসিন ছাড়াই কৃত্রিম উপায়ে এসব গরু মোটাতাজা করায় দেশব্যাপী এ অঞ্চলের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশী।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার দিশাবন্দ গ্রামের রামিশা ক্যাটেল ফার্মের পরিচালক সবুর আহমেদ বলেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ৩০টি গরু প্রস্তুত করেছি। বেশিরভাগ গরুই বড় আকৃতির। গায়ের রঙ দেখতে চমৎকার। গত বছরের অবিক্রীত গরু রয়েছে এ ফার্মে। এখানে সর্বোচ্চ চার লাখ টাকা মূল্যের গরু আছে ১৮টি। বাকিগুলো দেড় লাখ টাকা মূল্যের।
গত কোরবানির ঈদে সঠিক দাম না পাওয়ায় বেশ কয়েকটি গরু তিনি বিক্রি না করে এ বছরের জন্য রেখে দিয়েছেন। কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দামে গরুটি বিক্রি করতে পারবেন কি না এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সবুর আহমেদ।
তার মতো কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ফাজর এগ্রোমেট্রিক্স ফার্মে ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান। তার ফার্মে ৩৯টি গরু মোটা তাজা করা হয়েছে। ঈদের বাকি আর মাত্র ১১ দিন। কোথায়ও বাজার না বসার কারণে বিক্রি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধিমেনে হলেও যেন বাজারে তুলে পশু বিক্রির অনুমতি প্রদান করা হয়। ঈদের আগে গরু বিক্রি করতে না পারলে ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক কালজয়ীকে বলেন, করোনা সংক্রমণের হার কমে এলে ১৪ জুলাইয়ের পর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জেলায় ৩৬৩টি অস্থায়ী হাট বসার কথা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পশুর হাট বন্ধ থাকায় জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে খামারিদের ‘অনলাইন পশুর হাট কুমিল্লা’ নামে একটি অ্যাপস্ তৈরি করে তথ্য আপলোডের কাজ চলছে। আশা করি ক্রেতারা অ্যাপসটি ব্যবহার করে গরু ক্রয় করতে পারবেন।এ বিষয়ে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, লকডাউন শেষে সরকারি নিদের্শনা অনুসারে অস্থায়ী হাটের বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত ‘অনলাইন পশুর হাট কুমিল্লা’ অ্যাপস ডাউনলোড করে ক্রয়ের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।