ঢাকায় আন্তজার্তিক বাণিজ্য মেলায় স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দুরত্ব, আইনশৃঙ্খলা, নিয়মনীতি ও ভোক্তা সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়নে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। স্টলের খাবারের মান, মূল্য তালিকা প্রদর্শন, মোড়কে পণ্যের ওজন, উৎপাদন ও মেয়াদ উর্ত্তীণের তারিখ, ক্রেতা-বিক্রেতা, দর্শনার্থীদের মাস্ক ব্যবহার, নিরাপত্তা ও নিয়মনীতি বাস্তবায়নে নিয়োজিত পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আনসার, স্বেচ্ছাসেবক, মেলা আয়োজক ও ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কাজ করছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে তারা সক্রিয় রয়েছে। নিয়মনীতি অমান্য করলেই ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এসকল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মেলার শুরু থেকে গতকাল ২৫ জানুয়ারি মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমান আদালত বিভিন্ন অনিয়মে ৫২ টি মামলা দায়ের করেছেন। এসকল মামলায় অনিয়মকারীকে নগদ জরিমানা আদার করে তাৎক্ষণিক ভাবে মামলা নিস্পত্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে মাস্ক না পরা, খাদ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা ও পণ্যের দাম বেশি রাখা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্য।
বাণিজ্য মেলা সুষ্ঠু ও নিয়মনীতির মধ্যে পরিচালনা করার জন্য প্রশাসন তৎপর রয়েছে। রূপগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া ও রূপগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মশিউর রহমান তারেকের নের্তৃত্বে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামীলীগ, যুব মহিলা আওয়ামীলীগ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। গতকাল ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গনে কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। থানায় জিডি কিংবা কোন মামলা হয়নি। আয়োজক, পুলিশ, প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মেলা পরিচালনা করছেন। স্টল মালিক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, ক্রেতা, বিক্রেতারা মাস্ক ব্যবহার করেই পণ্য কেনা বেচা করছেন। মেলা পরিদর্শনকারীরা স্বাস্থ্যবিধি মানছে। কোন ব্যক্তি না মানলেই ভ্রাম্যমান আদালতের নজরে আসছেন। জরিমানা দিতেও বাধ্য হচ্ছেন।
মিরপুর থেকে আসা গৃহবধূ আম্বিয়া আক্তার বলেন, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবে করোনাভাইরাস প্রসারিত হচ্ছে। দিনদিন মানুষ আক্রান্তও হচ্ছে। প্রত্যেকেই নিয়মিত মাস্ক পড়া উচিৎ। বাণিজ্য মেলায় মাস্ক না পরে অনেকেই ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা দিচ্ছেন। সচেতন হলেই করোনা ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব। গতকাল ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল হাসান নুর মেলা প্রাঙ্গনে অভিযান চালিয়ে ৯টি মামলা তাৎক্ষণিকভাবে নিস্পত্তি করেন। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনে দুই স্টলকে ২ হাজার টাকা করে ও মাস্ক না পরায় সাত জনের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে জরিমানা আদার করা হয়।
গত ২৩ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা আক্তার মেলা প্রাঙ্গনে অভিযান চালিয়ে ৭টি মামলা তাৎক্ষণিকভাবে নিস্পত্তি করেন। এদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে মাস্ক না পরায় ৫জনকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করা হয়। ভোক্তা-অধিকার আইনে সংরক্ষণ মামলায় দুই স্টল থেকে ১৭ হাজার ১শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। গত ১২ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল মতিন খান মেলা প্রাঙ্গনে অভিযান চালিয়ে ১১টি মামলা তাৎক্ষণিকভাবে নিস্পত্তি করেন। এদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে মাস্ক না পরায় ১১ জনের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে জরিমানা আদায় করা হয়।
গত ১০ জানুয়ারি রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম মেলা প্রাঙ্গনে অভিযান চালিয়ে দু’টি মামলা তাৎক্ষণিক ভাবে নিস্পত্তি করেন। এদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে মাস্ক না পরায় ২ জনকে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়। এছাড়া খাদ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনে একটি খাবার দোকানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
মেলার দর্শনার্থী জামালপুরের রাকিবুল ইসলাম বলেন, শ্বাসকষ্টের কারণে তিনি সব সময় মাস্ক পরতে পারেন না। মেলায় এসে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালতের নজরে পরেন। তাতে ৫শ’ টাকা জরিমানা প্রদান করতে হয়। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক প্রনব কুমার প্রামানিক বলেন, মেলার শুরু থেকে গতকাল ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাণিজ্য মেলার বিভিন্ন স্টল ও প্রাঙ্গনে অভিযান চালিয়ে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনে ২৩ টি মামলা তাৎক্ষণিক নিস্পত্তি করা হয়। এসব মামলায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, স্টল থেকে ৮১ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার উৎপাদন, প্রদর্শন, বিক্রি, পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, পণ্যের মোড়কে ওজন, উৎপাদন ও মেয়াদ উর্ত্তীণ্যের তারিখ না থাকায়, অবৈধ প্রক্রিয়ায় খাদ্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন অনিয়মে এ অর্থ আদায় করা হয়।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, গতকাল ২৫ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গনে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। সাধারণ ডায়রি কিংবা মামলা হয়নি। বাণিজ্য মেলার আয়োজক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধূরী বলেন, করোনাভাইরাস জনিত সরকারের আরোপিত বিধি-নিষেধ কঠোরভাবে মেনেই বাণিজ্য মেলা চলছে। মেলার ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক ছাড়া কাউকেই মেলায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনের আওতায় সকলকে ব্যবসা বাণিজ্য করতে হবে। অন্যথায় ভ্রাম্যমান আদালত মামলা করছে। করোনায় স্বাস্থ্যবিধি নীতিমালা মানতে আমরা সচেষ্ট।