২০০১ সালের ১অক্টোবর নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট জয়লাভ করার পরের দিন সকাল সাড়ে ৯টার সময় সাবেক ছাত্র শিবিরের প্রভাবশালী নেতা প্রভাষক কামরুল ইসলাম কলেজে প্রবেশ করে সরাসরি অধ্যক্ষের কক্ষে চলে যান। ঢুকেই বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবির দিকে ইশারা করে বলেন, এই দুইটা এখনো এখানে কেনো? ধমকের সুরে পিয়ন আফজালকে ডেকে ছবি দুটি নামানোর নির্দেশ দেন।
আফজাল ছবি দুটি নামিয়ে তার (কামরুলের) হাতে দিলে তিনি সজোরে মেঝেতে ফেলে দেন। এর পর কলেজের পেছনের লেকে ফেলে দিতে বলেন পিয়নকে। এভাবেই শরণখোলার মৃতভাষা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষ থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে ভেঙে ফেলা হয়েছিল চরম অপমানজনকভাবে।
তৎকালীন সেই শিবির নেতা (বর্তমানে জামায়াতের সক্রিয় সদস্য) কামরুল ইসলাম জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ওই কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ারে চলতি দায়িত্বে আসিন। চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি থেকে প্রায় সাত মাস অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার মাথার ওপরেও এখন শোভা পাচ্ছে সেই বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার ছবি। তবে, তা শ্রদ্ধাভরে নয়, তাচ্ছিল্লের সঙ্গে। ছবি দুটি দেড় ফুট ফাকা রেখে জানালার পর্দার পাইপের সঙ্গে রসি দিয়ে ঝোলানো অবস্থায় রয়েছে। অথচ আওয়ামীলীগ সরকারের এই সময় কিভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেলেন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এর পরও তাকে চলতি দায়িত্ব থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে দেওয়ারও পায়তারা করছেন স্থানীয় জামায়াতপন্থীরা।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রধান অফিস সহকারী রেজাউল ইসলাম নান্নু বলেন, সেদিন শিবির নেতা কামরুল ইসলাম ছবি দুটি নামানোর পরে তা ভেঙ্গে যখন পিয়নকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ছবি দুটি কলেজের পেছনের লেকে ফেলে দিতে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসাবে জাতির পিতার ছবির অপমান সইতে খুব কষ্ট হচ্ছিল সেদিন। তখন কৌশল করে গোপনে আমি পিয়নের কাছ থেকে ছবি দুটি উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। সেই ভাঙা ছবি দুটি স্ব-যত্নে তার ঘরে বেধে রেখেছেন আজও।
স্থানীয় ৫ নম্বর বড়পরি-ধানসাগর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বলেন, জামায়াত নেতা প্রভাষক কামরুল বিএনপির আমলে জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির অবমাননা করে সেই কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার কোনো অধিকার রাখে না। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে আমরা সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করবো।
শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন বলেন, জামায়াত নেতা কামরুল ইসলাম বিএনপি আমলে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুর করার পরেও অধ্যক্ষের দায়িত্ব পাওয়াটা অনভিপ্রেত। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।কলেজের সভাপিত মোঃ আব্দুল হক হায়দার বলেন, ছবি অবমাননার বিষয়টি আমি বিভিন্ন মহল থেকে শুনেছি। মূলত ১৫ জানুয়ারি অধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম অবসরে যাওয়ার সময় কামরুল ইসলামকে চলতি দায়িত্ব দিয়ে যান। তবে খুব শিগ্রই ম্যানেজিং কমিটির সভা করে জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুর্নাঙ্গ অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হবে।
জানতে চাইলে মাতৃভাষা কলেজের চলতি দায়িত্বে থাকা অধ্যক্ষ মোঃ কামরুল ইসলাম ছবি ভাংচুরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি যাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব না পাই সেজন্য একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।