বঙ্গবন্ধুর খুঁনী খন্দকার মোশতাকের ছেলে খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বাবুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়েছে, মঙ্গলবার কুমিল্লার আদালত থেকে প্রতারণার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ইশতিয়াতের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়। পলাতক থেকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা, জাল জালিয়াতি করে পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তি বিক্রিসহ নানা ধরনের প্রতারণার অভিযোগে ওই খুঁনী পুত্রের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হয়।
মঙ্গলবার ( ২৪ আগষ্ট ) বিকেলে কুমিল্লার ৩নং আমলী আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: গোলাম মাহবুব খাঁন ওই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন। এ সময় আদালত ইশতিয়াককে গ্রেফতার করতে দাউদকান্দি থানা পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন। এলাকাবাসী জানায়, খুঁনী মোশতাকের পিতা হযরত খন্দকার কবির উদ্দিন আহামেদসহ পুর্ব পুরুষেরা ছিলেন আলেম ও হাক্কানী পীর। খন্দকার কবির উদ্দিনের পাঁচ ছেলে এবং পাঁচ মেয়ে। মৃত্যুকালে কবির উদ্দিন বিশাল সম্পত্তি রেখে গেছেন।
পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কবির উদ্দিনের কিছু সম্পত্তি কল্যান মুলক কাজের জন্য ট্রাস্ট্রের নামে লিখে দেয়া হয়। এ ছাড়া ওয়ারিশান সুত্রে বংশের সকল সদস্যরা বাকি সম্পত্তির মালিক হলেও কবির উদ্দিনের সপ্তম সন্তান খুঁনী মোশতাকের একমাত্র ছেলে খন্দকার ইশতিয়াক আহম্মেদ বাবু বংশের সকল সদস্যদের সম্পত্তি জোরপুর্বক বেদখল করে রেখেছেন।
শুধু তাই নয় খন্দকার কবির উদ্দিনের নামে ট্রাষ্টের স্বঘোষিত চেয়ারম্যান হয়ে বাবু ওই স্টেটের কার্যালয়ে নিজের এবং স্ত্রী সন্তানদের ছবি টানিয়ে রেখেছেন। কিন্তু কবির উদ্দিনের অন্যসব ওয়ারিশগনকে ওই সম্পত্তি এবং বাড়ীসহ মাজারে প্রবেশ করতে দেয়না ওই খুঁনীর সন্তান বাবু। ট্রাস্ট এবং দাদার সম্পত্তি দখলে রাখতে মোশতাক পুত্র এলাকায় একটি বাহিনী গঠন করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কানাডায় বসে ওই বাহিনী নিয়ন্ত্রন করছেন তিনি।
এরই মাঝে বেশ কিছু সম্পত্তি জাল দলিল এবং ভূয়া স্বাক্ষরে বিক্রয় করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সম্পতির ন্যায্য হিস্যা এবং স্টেটের উত্তরাধিকারীর অংশিদারিত্ব পেতে কবির উদ্দিনের ওয়ারিশ খন্দকার জাবির আহাম্মেদ সারোয়ার গত বছরের শেষের দিকে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এতে মোশতাকপুত্র ইশতিয়াক, নাতি ইফতেখার আহমেদ শাদসহ অভিযুক্ত কেয়ার টেকার নিজামুদ্দিনকে আসামী করা হয়। এতে মোশতাক পুত্রের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়।
মামলার বাদী খন্দকার জাবির আহাম্মেদ সারোয়ার অভিযোগ করে বলেন, খুঁনী মোশতাকের ছেলে খন্দকার ইশতিয়াক আমাদেরকে ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করছেন। তিনি কানাডায় বসে দশপাড়া এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ন্ত্রন করছেন। আমাদের ওয়ারিশদের স্বাক্ষর জাল করে বেশ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করেছেন। এছাড়া আরো কিছু সম্পত্তি বিক্রির পায়তারা করছে। তার নির্দেশে এসব জালিয়াতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন মোশতাকের বাড়ীর কেয়ারটেকার নিজামুদ্দিন।
তিনি বলেন, কেয়ার টেকার নিজামুদ্দিনই মোশতাক পুত্রের সকল নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে থাকেন। কানাডায় বসে ওই কেয়ার টেকারের মাধ্যমেই বাহিনী নিয়ন্ত্রনসহ এলাকার আধিপত্য ধরে রেখেছেন মোশতাক পুত্র ইশতিয়াক। কাজী রেহা কবির বলেন, খুঁনী মোশতাক আমার নানার পরিবারের সদস্য হলেও আমরা তাকে প্রানভরে ঘৃনা করি।
সবশেষ গত বছর মাকে নিয়ে হযরত খন্দকার কবির উদ্দিনের মাজার শরীফ জিয়ারত করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে মোশতাক পুত্রের কেয়ার টেকারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আমাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়নি। ওয়ারিশান সুত্রে আমরা এই স্টেটের উত্তরাধিকারী হলেও আমাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
গায়ের জোরে মোশতাক পুত্র স্টেটের চেয়ারম্যান বনে নিজের এবং স্ত্রী সন্তানদের ছবি টানিয়ে রেখেছেন। এখন যেহেতু তার বিরুদ্ধে আদালতে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছে অবিলম্বে তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার করে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন রেহা কবির।
এ বিষয়ে দাউদকান্দি থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা যতটুকু জানি মামলায় অভিযুক্ত আসামী খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ বাবু বিদেশে পালাতক আছেন। তার পরেও গ্রেফতারী পরোয়ানার কপি হাতে পেলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শক্রমে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।