কি করমু ভাই লকডাউনে কি আর পেটের দায়ে ঘরে বইয়া থাহন যায়। আমাদের ও তো পেট আছে, স্ত্রী, পোলাপািন আছে। বেঁচে থাহার জন্য একটা কিছু তো কইরা বাঁচতে অইবো। বউয়ের কানের আট আনা স্বর্ণের দুল ছিলো তা বেইছা গত কয়েক মাসে কোন রহম চলছি। অনেকদিন ধইরা লকডাউন চলছে, তাই কারখানা বন্ধ থাকায় গত দুইদিন ধইরা নিজেই ফুটপাতে কাজে নামছি। এতে এক দেড়শ যা পাই তা দিয়া কোনরহম দিন পার করছি।
কথাগুলো বলছিলেন চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার হরিসভা এলাকার জুতা সেলাই ও মেরামতকারী (মুচি) হরিকমল দাস। লকডাউনে তার জুতা তৈরির কারখানা বন্ধ থাকায় পরিবার, পরিজন নিয়ে বহুকষ্টে বেঁচে আছেন। সে এতদিন চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার নাইম সুজ নামের একটি জুতার কারখানায় কাজ করছিলেন। লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকায় জীবিকা নির্বাহ করতে সুই, সুতা, আর চামড়া সহ প্রয়োজনীয় হাতিয়ার নিয়ে নিজেই রাস্তায় নেমেছেন।
৩ আগস্ট বিকেলে তাকে চাঁদপুর শহরের মিশন রোড রেলক্রসিংয়ে ছোট্ট চটি বিছিয়ে জুতা সেলাই করতে দেখা যায়। হরিকমল আরো বলেন, কি করমু ভাই, লকডাউনে, কোন কাজকর্ম না থাকায় অভাব-অনটনে বড় অসহায় অইয়া পড়ছি। অনেকে বিভিন্ন ভাবে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা পায়। কিন্তু আমি এত অসহায় থাইইক্কাও ব্যক্তিগতভাবে কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনা। গত কয়েক মাস বউয়ের কানের ৮ আনা ওজনের দুল বন্ধক রাইখা চলছি। করোনার দ্বিতীয় ধাপে এসে, এই লকডাউনে ওই জিনিস গুলা ২৩ হাজার ২,শ টাকায় বেইচ্ছা দিছি। এরমধ্যে ঋণের ৩ হাজার টাকা সুদ পরিশোধ কইরা, বাকি টাকা দিয়ে এতদিন কোনরহম চলছে। এহন দেয়ালে পিঠ ঠেইক্কা গেছে ভাই, আর পারছিনা। তাই কারখানার কাজের আশায় না থাইক্কা আজ দুই দিন ধইরা নিজেই ফুটপাতে কাজ করার জন্য নামছি। রাস্তাঘাটে তেমন মানুষজন নাই, তাই তেমন কোনো কাজকর্মও হয়নি। হারাদিন কাজ করে এক দেড়,শ টাকা যা-ই,পাই তা দিয়া কোনরহম দিন পার করছি।
এই কাজ ছাড়া আমাদের অন্য কোন উপায় নেই। আমরা যদি সরকারিভাবে কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইতাম তাইলে হয়তো জীবনডা বাঁইচ্ছা রাখতে অনেকটা সহযোগিতা হইতো। হরিকমল চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার হরিসভা এলাকার হরিদাসের ছেলে। সে দীর্ঘদিন যাবৎ ওই হরিসভা এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে ভাড়া বাসায় থেকে বসবাস করে আসছেন। প্রতিমাসে তার ৩ হাজার টাকা ঘরভাড়া পরিশোধ করতে হয়। করোনাকালীন এই লকডাউনে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই জুতা মেরামত কারী হরিকমলের মতো আরো অনেক মুচি বড় অসহায় হয়ে পড়েছেন। এই কঠোর লকডাউনে বেঁচে থাকার জন্য তাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।