1. bpdemon@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
  2. ratulmizan085@gmail.com : Daily Kaljoyi : Daily Kaljoyi
ফেলে দেয়া মাছের আঁশে সুখ ফিরেছে জেলের ঘরে
বাংলাদেশ । বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ফেলে দেয়া মাছের আঁশে সুখ ফিরেছে জেলের ঘরে

শাহজাহান আলী মনন:
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১ মার্চ, ২০২২
  • ৫৩৪ বার পড়েছে

ফেলনা জিনিসই হয়ে উঠেছে আয়ের অন্যতম উপকরণ। রুপালী সেই উপকরণ সংগ্রহ করে শুকিয়ে বিক্রি করার মাধ্যমে মিলেছে বাড়তি উপার্জন। কেটেছে অভাব অনটন। তা আর কিছু নয় মাছ কেটে রান্নার উপযোগী করতে ফেলে দেয়া উচ্ছিষ্ট আঁশ। এতদিন যা ছিল ময়লা-আবর্জনা। আজ তাই সুখ ফিরিয়ে এনেছে জেলেপাড়ার কয়েকটি ঘরে।

এই মাছের আঁশে দিন ফিরানোর গল্প মূলতঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের আইসঢাল জেলে পাড়ার। এখানকার জয়া রাণী, নমিতা রানী, অমল চন্দ্র দাস, সবুজ চন্দ্র দাস নিজেদের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি মাছের আঁশের ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়িয়েছেন নতুন করে। দেখছেন স্বাবলম্বী হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের সাথে সগোত্রীয় অন্যদেরও ভাগ্য উন্নয়নের স্বপ্ন।

অমল চন্দ্র দাস জানান, আমরা এই পাড়ার সকলেই বংশগতভাবে জেলে। নদী, খাল, বিল, ডোবা, নালায় মাছ ধরে বিক্রি করে জীবীকা নির্বাহ করাই আমাদের পেশা। কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে এসব প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ মাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ফলে অনেকেই আদি পেশা ছেড়ে অন্যকাজে নিয়োজিত হয়ে কোন রকমে বেঁচে আছে।

আবার সামর্থ্যবান কয়েকজন স্থানীয় চিকলী বাজারে মাছ ব্যবসায় করছে। আমিও তাদের একজন। শহরের মাছ আড়ত বা গ্রামের পুকুর মালিকদের কাছ থেকে মাছ কিনে এনে বিক্রি করি। এতে কষ্টে সৃষ্টে দিন চলে যায়। কিন্তু পরিবারের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। জেলেপাড়ার সিংহভাগ পরিবারেরই এমন অবস্থা। এভাবেই টানাপোড়নে চলছিন আমাদের জীবন।

এরই মাঝে জানতে পারি মাছের আঁশ বিক্রি করা যায় এবং এর বেশ দাম। পরে অনলাইনের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে আরও বিস্তারিত জানার পর উপজেলা মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করি। তাদের মাধ্যমে একজন ক্রেতার সাথে পরিচয় হয় এবং আঁশ প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি শিখে নেই। তাঁর উৎসাহেই মাছের আঁশ নিয়ে কাজ শুরু করি।

প্রথম দিকে নিজের বিক্রিত মাছের আঁশ ও চিকলী বাজারের অন্য মাছ ব্যবসায়ীদের ফেলে দেয়াগুলো জমিয়ে প্রসেস করি। কিন্তু এর পরিমান ছিল খুবই কম। তাই প্রতিবেশী সবুজ চন্দ্র দাসকে কাজে লাগিয়ে উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার থেকে আঁশ সংগ্রহ করা শুরু করি। এর ফলে এখন প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১৫ কেজি আঁশ জোগাড় হয়। তিনি আরও বলেন, সংগৃহীত কাঁচা আঁশ পরিষ্কার করে ২-৩ দিন রোদে শুকাতে হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে পুরোদিন প্রখর রোদ পাওয়া গেলে ১ একদিনেও শুকানো যায়। একাজে সহযোগীতা করেন জয়া রাণী ও নমিতা রানী।

শুকনো আঁশ প্রতি কেজি ৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়। মাসে দুই একবার ঢাকা থেকে মহাজন এসে সব আঁশ নিয়ে যায়। এতে বাড়তি উপার্জনের সুন্দর একটা সুযোগ তৈরী হয়েছে। ফলে চারটি পরিবার মাস শেষে ভালো আয় করছি। এই আয় দিয়ে সংসারের প্রয়োজন মিটিয়েও সঞ্চয় করা সম্ভব হচ্ছে। আগের অভাব অনটন কাটিয়ে সুখের মুখ দেখতে পাচ্ছি।

তাই আমরা আশা করছি পাড়ার অন্যদেরও এই কাজে নিয়জিত করে সৈয়দপুরের বাইরের অন্য উপজেলার হাট বাজার থেকেও মাছের আঁশ সংগ্রহ করবো। এতে ব্যবসা বাড়ানোর মাধ্যমে তাদেরও বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে পাড়ার ভবিষ্যৎ উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছি আমরা।

ব্যাবসা প্রসঙ্গে অমল চন্দ্র দাস আরও বলেন, মহাজনের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, এই মাছের আঁশ অনেক পুষ্টিগুন থাকায় বিদেশীরা স্যুপের সাথে এর পাউডার মিশিয়ে খায়। তাছাড়া চীন ও জাপানে এর দ্বারা বাইয়োফিজো ইলেকট্রিক ন্যানো জেনারেটর তৈরী করে রিচার্জেবল ব্যাটারীতে চার্জ দেয়া হয়।

কৃত্রিম চোখের কর্ণিয়া ও কৃত্রিম হাড় তৈরীতেও আঁশের পাউডার ব্যবহৃত হয়। এমনকি কসমেটিক পন্যের উজ্জ্বলতা ও স্থায়ীত্ব বৃদ্ধির জন্য এবং মেকআপ ও ব্রাশ তৈরীর উপাদানও এটি। একারণে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমান মাছের আঁশ বিদেশে রপ্তানী হয়। এজন্য এর অনেক চাহিদা রয়েছে। ফলে এটা এখন শিল্পে রুপ নিয়েছে। তাই এর ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। (ছবি আছে)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

Archive Calendar

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
প্রকাশক কর্তৃক জেম প্রিন্টিং এন্ড পাবলিকেশন্স, ৩৭৪/৩ ঝাউতলা থেকে প্রকাশিত এবং মুদ্রিত।
প্রযুক্তি সহায়তায় Hi-Tech IT BD