দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মালচিং পদ্ধতিতে উন্নতজাত ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ পরীক্ষামূলক চাষ করে সফল হয়েছেন কৃষক আব্দুল হামিদ। উপজেলার আলাদীপুর ইউনিয়নের ভিমলপুর গ্রামে ২০ শতক জমিতে এ চাষ করেছেন তিনি। আব্দুল হামিদ ওই গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের ছেলে। জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দিনাজপুর অঞ্চলে টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় খরিফ-১ ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ
পরীক্ষামূলকভাবে ১২ মার্চ রোপণ করেন আব্দুল হামিদ। মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় চাষ করেন তিনি। এ পদ্ধতি মূলত চীন ও জাপানের বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার কারণে হলুদ, সবুজ ও কালো রংয়ের ফলন হচ্ছে ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনায় পরিচর্যা করছেন আব্দুল হামিদ।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারিদিকে ধানের মাঠ। মাঝখানে দেখা যাচ্ছে সবুজের ঝোঁপ। কাছে যেতেই দেখা মিলে অন্যরকম চাষ পদ্ধতি। মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছেন কৃষক আব্দুল হামিদ। তখন ঘড়িতে সন্ধ্যা ৬টা। তবুও আব্দুল হামিদ ক্ষেতে। নীবিড় পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা মাচার নিচে ঝুলছে হরেকরকম তরমুজ। কোনোটি হলুদ, কোনটি কালো আবার কোনোটি সবুজ। সেগুলো জালি ব্যাগে ঝুলে আছে মাচায়। প্রতিটির ওজন এখন প্রায় আধা কেজি থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত।
এদিকে সোমবার (২০ মে) বিকাল সাড়ে ৫টায় এ তরমুজ ক্ষেত প্রদর্শনী করা হয়। প্রদর্শনী শেষে আয়োজিত মাঠ দিবসে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার। এতে অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা শাহানুর ইসলামের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর অঞ্চল টেকসই কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. জাফর ইকবাল, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপ প্রকল্প পরিচালক রাকিবুজ্জামান, মনিটরিং ও ইভালেশন কর্মকর্তা মশিউর রহমান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সঞ্চিতা রানী রায় প্রমুখ।
কৃষক মো. আব্দুল হামিদ বলেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে মালচিং পদ্ধতিতে ২০ শতক জমিতে ব্লাক বেবি ও তৃপ্তি জাতের তরমুজের বীজ বপন করেছি। বপনের কিছুদিন বাদেই তরমুজের চারাগুলো পরিপূর্ণভাবে বেড়ে ওঠে। এরপর নানা পরিচর্যায় গাছগুলোতে ফুল আসতে শুরু করে। মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা তরমুজ ৬৫ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। তরমুজের ওজন ২-৩ কেজি হবে। স্থানীয় বাজারে বারোমাসি তরমুজের ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতি কেজি তরমুজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। এতে ধান ও সবজি চাষের প্রায় দ্বিগুণ লাভ হতে পারে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল হিসাবে বর্ষাকালীন তরমুজ চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফরোমন ফাঁদ ও মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করায় ফলন হবে বিষমুক্ত। ধান ও সবজি ক্ষেতের চেয়ে কম খরচে তরমুজ চাষে কৃষকেরা বেশি লাভবান হয়। মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় তরমুজ চাষ এ এলাকায় আরো সম্প্রসারিত হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, বর্ষাকালীন তরমুজ চাষে সাফল্য পাওয়া গেছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের বিনামূল্যে সার ও বীজ দেয়া হয়েছে। উপজেলার কৃষক আব্দুল হামিদ পরীক্ষামূলকভাবে মালচিং পদ্ধতিতে ২০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। কৃষি অফিসের মাঠ কর্মীরা তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। তরমুজ চাষের এ প্রযুক্তি আগামীতে আরো সম্প্রসারিত হবে বলে প্রত্যাশা করছি। এ তরমুজ প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৩৫ টন তরমুজ উৎপাদন হবে।
তিনি আরো বলেন, সোমবার (২০ মে) আব্দুল হামিদের তরমুজ ক্ষেত প্রদর্শনী করা হয়েছে। এসময় জেলা কর্মকর্তাদ্বয় উপস্থিত ছিলেন।