শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলাতে ফসলের মাঠে বাঁশ দিয়ে তৈরি করা ফাঁসির মঞ্চ থেকে সফি উদ্দিন (৬০) নামের এক কৃষকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে নালিতাবাড়ী থানার পুলিশ। বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাদলাকুড়া এলাকার ফসলের মাঠ থেকে ওই কৃষকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত সফি উদ্দিন পার্শ্ববর্তী মানিকচাঁদ পাড়া গ্রামের হাছেন আলীর ছেলে। নিজে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করে আত্মহত্যার ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী উপজেলার মানিকচাঁদ পাড়া গ্রামের আহাম্মদ আলী নামের এক কৃষক চলতি বোরো আবাদের জন্য বিএডিসি থেকে একটি সেচ পাম্প স্থাপনের অনুমোদন পায়। একই গ্রামের নিহত সফি উদ্দিনও বিএডিসি কর্তৃপক্ষের কাছে নতুন সেচ পাম্প স্থাপনে অনুমোদন পাওয়ার জন্য আবেদন করেন এবং পাশের বাদলাকুড়া ফসলের মাঠে বড়িং করেন।
এদিকে একই মাঠে দু’টি সেচ পাম্প স্থাপন নিয়ে সফি উদ্দিন ও আহাম্মদ আলীর মাঝে বিরোধ বাঁধে। বিরোধের এক পর্য়ায়ে সুরাহা করার লক্ষে স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবর রহমান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে এক সালিশী বৈঠক হয়। এতে সফি উদ্দিনের বড়িং খরচ বাবদ ২০ হাজার টাকা আহাম্মদ আলী দিয়ে দেন ও সফি উদ্দিন সেচ পাম্প আর চালাবে না। এছাড়া ফসলের মাঠ আহাম্মদ আলীকে ছেড়ে দিবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। নিজস্ব জমি না থাকায় আহাম্মদ আলী পাশের জমিতে নিজ অনুমোদিত সেচ পাম্প স্থাপনের উদ্যোগ নিলে সফি উদ্দিন এতে বাদী হয়। সালিশের সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করায় ইউপি সদস্য মজিবর রহমান ও আহাম্মদ আলী ক্ষিপ্ত হয়ে সফি উদ্দিনের কাছে দেওয়া ২০ হাজার টাকা ফেরত চায় এবং চাপ প্রয়োগ করে। পরে চাপ সইতে না পেরে রাগে ক্ষোভে মঙ্গলবার রাতের আধারে বাঁশ দিয়ে ফাঁসির মঞ্চ তৈরি করে আত্মহত্যা করে সফি উদ্দিন।
পরে রাতে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুজি করে তাকে পায়নি। বুধবার সকালে পাশের বাদলাকুড়া এলাকার ফসলের মাঠে সফি উদ্দিনের ঝুলন্ত লাশ দেখে পুলিশে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থল গিয়ে সফি উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে। নিহতের স্ত্রী আবেদা বেগম জানান, আহাম্মদ আলীর সাথে সেচ পাম্প নিয়ে প্রায় এক মাস ধরে আমাদের দ্বন্দ্ব চলে আসছে। আমার স্বামী আমাদেরকে মোবাইলে ফোনে জানিয়েছে তার মৃত্যুর জন্য আহাম্মদ আলী ও তার সঙ্গীয় একজন দায়ী।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বছির আহমেদ বাদল বলেন, নিহত সফি উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য শেরপুর জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। সেই সাথে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও তিনি জানান।