ফরিদপুরে ৫৭টি স্কুল খোলা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।ফরিদপুরে নয়টি উপজেলার মধ্যে পাঁচটি উপজেলার ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এবং পাঁচটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে এখনও বন্যার পানি রয়েছে।এছাড়া সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গি এলাকায় অবস্থিত পদ্মারচর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কামারডাঙ্গি এলাকায় অবস্থিত ফেরদৌসী মোহন মিয়া জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেও পানি জমে রয়েছে।এ পরিস্থিতিতে আসন্ন ১২ সেপ্টেম্বর ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ফরিদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম জানান,ফরিদপুরের সদর,ভাঙ্গা,সদরপুর,চরভদ্রাসন, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলায় ৪৫ টি বিদ্যালয়ের মাঠে বৃষ্টি ও বন্যার পানি জমে রয়েছে।পাঁচটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি রয়েছে।এছাড়া সদর,চরভদ্রাসন ও আলফাডাঙ্গা উপজেলায় পাঁচটি বিদ্যালয় মারাত্মক ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।এমন অবস্থায় ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ওই সব বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
বন্যার পানি যদি কমেও যায় তা ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে শ্রেণী কক্ষগুলো ক্লাস করার উপযোগী করতে সময় লাগবে।তাতে নির্দিষ্ট ওই দিনে স্কুল খোলা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।এদিকে ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।স্কুলগুলো থেকে নদীর দূরত্ব একেবারেই সন্নিকটে।যে কোন মুহূর্তে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
পদ্মা ও মধুমতীর ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা স্কুল পাঁচটি হচ্ছে,আলফাডাঙ্গা উপজেলার পাঁচুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,বাজরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পশ্চিম চর নারাণদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।এছাড়া চরভদ্রাসন উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গী গ্রামের বালিয়াডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরহরিরামপুর ইউনিয়নের সবুল্লাহ শিকদারের ডাঙ্গী গ্রামের সবুল্লাহ শিকদারের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে দেখা যায়,ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের গদাধরডাঙ্গি গ্রামের পদ্মা নদী সংলগ্ন গদাধরডাঙ্গি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটু পানি জমে আছে।বড় রাস্তা থেকে স্কুলে যাওয়ার পথটিও পানিতে প্লাবিত।পাশের একটি ভবনে প্রধানশিক্ষক নাজমুন নাহার লাবনীসহ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট জমা নিচ্ছেন।অনেক শিক্ষার্থীরা পানিতে বুক পর্যন্ত ভিজে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে আসছে।
ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক নাজমুন নাহার লাবনী জানান,আমাদের স্কুলটি পদ্মা নদী তীর সংলগ্ন।ফলে বন্যা শুরু হতে না হতেই স্কুলে পানি ঢুকে পড়ে।পানিতে ভিজে আমরা পাঁচজন শিক্ষক ও ১৬৩ জন শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাই।শুধু তাই নয়।পাশের কমিউনিটি ক্লিনিক ও সেন্টারটিও পানি প্লাবিত।এতে ওই পথে শিশুরা ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ও স্কুলে যাতায়াত করে।আমরা শিক্ষকরাও পানিতে ভিজে স্কুলে যাই।কিন্তু বর্তমানে স্কুল মাঠ ও সিঁড়িতে পানি থাকায় আমরা স্কুলে যেতে পারছি না।
এ অবস্থায় ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলা একেবারেই অসম্ভব।পানির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে শিশুদের ক্লাসে আসতে বলতে পারি না।চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী জানান,এ ইউনিয়নের রমেশবালাডাঙ্গি গ্রামে অবস্থিত মন্ডলডাঙ্গি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে পানি উঠেছে।পানি না কমলে ওই স্কুলে ক্লাস শুরু করা সম্ভব হবে না।
ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান জানান,ইউনিয়নের দুটি স্কুল পদ্মারচর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কামারডাঙ্গি এলাকায় অবস্থিত ফেরদৌসী মোহন মিয়া জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠেও পানি জমে রয়েছে।এ অবস্থায় সেখানে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হবে না।পানি নেমে গেলে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন,পানিবন্দি স্কুলগুলোর অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।যেহেতু বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে,অল্প কিছু দিনের মধ্যে স্কুলগুলো থেকে পানি নেমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্কুলগুলোতে ক্লাশ শুরুর উপযোগী করতে ইতোমধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।