ফরিদপুরের বোয়ালমারীর মাঝকান্দী ও গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের সাতৈর রেলগেট এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকাজের ভবিষ্যৎ এখন নিরেট অন্ধকারে। কাজ শুরু হয়েও দৃশ্যমান অগ্রগতির আগেই হঠাৎ স্থগিত হয়ে গেছে ওভারপাস নির্মাণ। অন্যদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের স্বার্থে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা বাইপাস সড়কটি এখন যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত। গ্রীষ্মকালে ধূলিদূষণ আর বর্ষায় জল-কাদার ভয়ানক পরিস্থিতিতে দিশেহারা পথচারী-জনসাধারণ। মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা এ প্রকল্প নিয়ে ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন, কবে হবে রেলওয়ে ওভারপাস? কবে মানুষ মুক্তি পাবে এই যন্ত্রণা থেকে?
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চার বছর আগে শুরু হওয়া ওভারপাস নির্মাণকাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। নির্মাণকাজের সুবিধার্থে পাশ ঘেঁষে তৈরি করা বাইপাস সড়কটিরও বেহাল দশা। এই বাইপাস সড়ক দিয়েই প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ছোট-বড় গাড়ি চলাচল করে। বর্ষা মৌসুমে এই বাইপাসের প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। আর এসব খানাখন্দে প্রায়শই ভারী যানবাহন আটকে যায়। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি ভারী যানবাহন উল্টে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণকল্পে বিকল্প হিসেবে অস্থায়ীভাবে তৈরি করা রাস্তাটুকু সংস্কার না করলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের। সেজন্য তারা অস্থায়ী বাইপাস সড়কটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার জোর দাবি জানিয়েছেন। এলাকাবাসী আক্ষেপ করে বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমানের চেষ্টায় বর্তমান সরকারের অবদানে এই মহাসড়ক। তবে এখন সংশ্লিষ্ট কারও মহাসড়কটি নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
ফরিদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার সহস্রাইল-আলফাডাঙ্গা সংযোগ সড়কের উন্নয়নসহ মাঝকান্দী-ভাটিয়াপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ ২০১৬ সালে একনেকে অনুমোদন পায়। এতে বরাদ্দ ছিল ২৩৯.৬৪ কোটি টাকা। প্রকল্প শুরুর তারিখ ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল। প্রকল্পের কাজ শেষ করার মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। তবে আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ সমাপ্ত হয় ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বরের আগে। মহাসড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ৪৪ কিলোমিটার। তার মধ্যে ফরিদপুর অংশ হচ্ছে ৩৫.৫৯ কিলোমিটার। আর সাতৈর রেলওয়ে ওভারপাসের (উড়াল সেতু) স্থানটি ১৫ কিলোমিটারের স্থানে। এই প্রকল্পেই ওভারপাসটি নির্মাণ হওয়ার কথা। কিন্তু এক তৃতীয়াংশের কাজেই থমকে আছে ওভারপাসটি নির্মাণের কাজ।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. নাসির উদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন কাজ না করে এভাবে ফেলে রেখে মানুষ ও যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত এর সমাধান চাই।এ ব্যাপারে সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) আব্দুল আলিম বলেন, এত সুন্দর রাস্তা সামান্য এইটুকুর জন্য মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই। মানুষের কষ্ট কাকে বলে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়। দ্রুত আমরা এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।এ বিষয়ে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের (সওজ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কর্মকার বলেন, সাতৈর রেলওয়ে ওভারপাসের (উড়াল সেতু) দৈর্ঘ্য ৪৩৪.৫ মিটার (প্রায় অর্ধকিলোমিটার)। যার ব্যয় ধরা হয় ৩৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটির মূল ঠিকাদার হচ্ছে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। কিন্তু কাজটি জয়েন্ট বেঞ্চারে (জেবি) নিয়ে নেয় মেসার্স এমএস প্রকৌশলী নির্মাণ বিশারদ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান।
সুমন কর্মকার আরও জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান গত ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত ৩৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। তবে বারবার তাদের কাজ করার কথা বললেও নানা অজুহাতে ফেলে রেখেছে। এখন পর্যন্ত যে কাজ বাকি আছে তা করতেও কমপক্ষে এক বছর সময় লাগবে।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান ফারহান সুমেল বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। লিখিতভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা কাজ করবে, করছি বলে দীর্ঘদিন কাজ না করে ফেলে রেখেছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে তাদের বাদ দেয়া হবে। নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে আরেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাকি কাজ করা হবে। তবে এটা দ্রুতই করা হবে।ফরিদপুর সওজে এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড ও মেসার্স এমএস প্রকৌশলী নির্মাণ বিশারদের সঙ্গে যোগাযোগের ফোন নম্বর চাইলেও পাওয়া যায়নি। নির্মাণ এলাকায়ও খোঁজ মেলেনি তাদের কোনো কর্মী বা প্রতিনিধির।