ফরিদপুরের নগরকান্দায় তিন মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি চয়ন কুমার মণ্ডলকে সদ্য ঘোষিত নগরকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।চয়ন কুমার মণ্ডলের নামে নগরকান্দা থানায় চুরি,অগ্নিসংযোগ,মারধর,নাশকতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন পাটোয়ারীকে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অন্তত তিনটি মামলা রয়েছে।
এসব মামলায় তিনি চার্জশিটভুক্ত আসামী।মামলাগুলোর অভিযোগপত্র ফরিদপুর ১ নম্বর আমলি আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।এদিকে একাধিক মামলা থাকা সত্ত্বেও চয়ন কুমার মণ্ডল উপজেলা ছাত্রলীগের মতো দায়িত্বশীল পদে আসায় সমালোচনা চলছে।এ ঘটনায় নগরকান্দা উপজেলায় সক্রিয় ও ত্যাগী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনা চলছে।ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়,গত ৩১ জুলাই নগরকান্দা উপজেলা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয় ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ।ঘোষিত ওই কমিটিতে সভাপতি,সহ-সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নিয়ে মোট ১২টি পদ রয়েছে।
দলীয় প্যাডে স্বাক্ষর দিয়ে এ কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ।ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে রয়েছে চয়ন কুমার মণ্ডলের নাম।চয়ন কুমার মণ্ডল ভাঙ্গা সরকারি কে এম কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।তিনি উপজেলার মানিকদী গ্রামের নিরঞ্জন কুমার মণ্ডলের ছেলে।
অভিযোগ রয়েছে,২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মনিরুজ্জামান সরদারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এলাকায় ব্যাপক জনসংযোগ চালান তিনি।এমনকি প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার তালমা এলাকায় স্থানীয় লোকদের মারধর,বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটের একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া তালমার মোড় এলাকায় আওয়ামী লীগের মিছিলে অগ্নিসংযোগ,লাঠিপেটা ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে দীর্ঘদিন উপজেলাব্যাপী আলোচনায় ছিলেন চয়ন কুমার মণ্ডল।চয়নের বিরুদ্ধে নৌকার বিভিন্ন মিটিং-মিছিলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং নানাভাবে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে।চয়নের বিরুদ্ধে এক মামলার বাদী মজনু পাটোয়ারী।
তিনি বলেন,চয়ন আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন পাটোয়ারীকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে।আমি কি এর বিচার পাব না? শুনেছি তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়েছে।এখন বিচারের অপেক্ষায় আছি।আমি এর সঠিক বিচার চাই।এ বিষয়ে জানতে চেয়ে অভিযুক্ত চয়ন কুমার মণ্ডলের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি বলেন,জানামতে আমার নামে কোনো মামলা নেই।
মামলার বিষয়টি আমি এই প্রথম শুনলাম।তিনি আরও বলেন,আসলে ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পরে আমার বিরোধী কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মামলা আছে বলে গুজব ছড়াচ্ছে।মামলার বিষয়টি ভিত্তিহীন ও অসত্য।মামলার সত্যতা যাচাই করতে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বিপ্লবকে ফোন দেয়া হলে তিনি মামলার কপি দেখে মন্তব্য করবেন বলে জানান।
পরে মামলার একাধিক কপি তার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে বলেন।এরপর কপিগুলো পাঠানো হলে তিনি সিন করেও কোনো জবাব দেননি।পরে তার মন্তব্য জানতে চেয়ে একাধিকবার তার মোবাইলে কল করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সিনিয়র এএসপি (নগরকান্দা-সালথা) সার্কেল মো. সমিনুর রহমান বলেন,মামলা থাকলেই তো চার্জশিট হয়।
মামলা না থাকলে কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া সম্ভব নয়।বর্তমানে কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট হলে তার নামে মামলা নেই,এটা বলার সুযোগ নেই।অভিযুক্ত যদি এটা বলে তাহলে তা সঠিক বলেনি।কারণ ডিজিটাল যুগে সবই অনলাইনে পাওয়া যায়।এটা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।
চয়নকে সভাপতি করার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ তামজিদুল রশিদ চৌধুরী রিয়ান বলেন,চয়নের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ড ও মামলার বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না।অনেকটা চাপে পড়ে তাকে কমিটির সভাপতি করতে বাধ্য হয়েছি।তবে কিসের চাপ,তা তিনি স্পষ্ট করে বলতে রাজি হননি।