বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও মুরগির দাম। এরকম চিত্রই দেখা গেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাজারগুলোতে।
উপজেলার সদর বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, হঠাৎ করেই ৪০ টাকা কেজি পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। একইভাবে ১১০ টাকা কেজি দরের ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম এখনও ২০০ থেকে ২২০ টাকার বেশি। মোটা চালের দাম এখনও ৫০ টাকা কেজি। আর চিকন চালের দাম ৭০ টাকা কেজি।
এদিকে, শীত শুরুর আগেই বাজারে এসেছে শীতকালীন সবজি। তবে অধিকাংশ সবজির দামই বেশি। দাম বেশি হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী সবজিও কিনতে পারছেন না সীমিত আয়ের মানুষেরা। শুধু তা-ই নয়, অধিকাংশ পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা গেছে।
উপজেলার সদর বাজারে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে আসা আনু মিয়া জানান, এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কারণ, অধিকাংশ পণ্যের দাম এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। অন্যথায় নিম্ন আয়ের লোকজন চরম সংকটে পড়ে যাবে।
বাজারের চিত্র বলছে, টানা কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়তে থাকা ব্রয়লার ও পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দাম নতুন করে আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহের তুলনায় বাজারগুলোতে কেজিতে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত। আর সোনালি মুরগির দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা।
রবিবার উপজেলার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা। আর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে ছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। এ হিসাবে মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে। আর আগস্টের শুরুতে বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকা কেজি দরে। মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্রয়লার মুরগির মতো পাকিস্তানি কক বা সোনালি মুরগির দামও দফায় দফায় বেড়েছে। সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া সোনালি মুরগির দাম কয়েক দফা বেড়ে এখন ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে এই মুরগির কেজি বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা।
দুই সপ্তাহ আগে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে এখন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এছাড়া বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহও কিছুটা কমেছে। সব মিলে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকা বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়েও বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ছিল সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০থেকে ৬৫ টাকায়।
বাজারের তথ্য বলছে, দেশি পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দামও বেড়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় পেঁয়াজের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৫ টাকা। এদিকে সবজির দামও চড়া। শীত শুরুর আগেই বাজারে এসে গেছে শীতকালীন সবজি। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্বস্তি মিলছে না দামে। বাজারে এখন বেশিরভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। শুধু আলু, কচুমুখী ও পেঁপের কেজি ৫০ টাকার নিচে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে আগাম শীতকালীন সবজি উঠছে। তাই দামও একটু বেশি। সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে গাজর। মানভেদে এক কেজি গাজর ১০০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
তবে শীতের আগাম সবজি শিমের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। এখন শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এর সঙ্গে কমেছে ঝিঙের দাম। এক সপ্তাহ আগে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ঝিঙের দাম কমে এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
শীতের অন্য আগাম সবজির মধ্যে ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। এছাড়া করলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। এছাড়া কাঁচকলার হালি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাকের আঁটি ১৫ থেকে ২০ টাকা, কলমি শাকের আঁটি ৫ থেকে ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
দেশি ছোট রসুনের কেজি ৬০ টাকা হলেও দেশি বড় রসুন ৮০ টাকা। ভারতীয় রসুনের দাম দেড়শ’ টাকা কেজি। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে সাত টাকার বেশি। অর্থাৎ দুই সপ্তাহ আগে যে ময়দা ৩৫ টাকা কেজি পাওয়া যেত, এখন সেই ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা কেজি দরে। দুই সপ্তাহ আগে যে চাল ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে, এই সপ্তাহে সেই চাল বিক্রি হয়েছে ৬৮ টাকা কেজি দরে। গরুর মাংস প্রতিকেজি ৫৬০ টাকা।
ভোক্তাদের দাবী,প্রশাসন যেনো বাজার মনিটরিংয়ের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখেন।