একজন সফল জননেতার চারপাশে কিছু আগাছা থাকে। এরা নেতার ঘনিষ্ঠ বলে নিজেকে জাহির করে বিবিধ আকাম-কুকাম করে নেতার মহানুভবতা ও পুষ্পের মত নিষ্পাপ সুনামকে কলঙ্কিত করে। তাদের কারণেই দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা জননেতাদের আন্তরিক সহযোগিতা ও পরিচর্যা পায় না। ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দল। এরাই নিজেকে নেতার কাছে সাদা দুধের মত বিশুদ্ধ বলে দাবী করে। নেতা বা এমপির পিএস হয়ে নেতার চেয়েও বেশি ক্ষমতা দেখাতে দেখা যায়। কিছু কাউয়া কোনোরকমে নেতার সাথে একটা সেলফি উঠিয়ে এলাকায় দাপট দেখায়, মানুষকে জিম্মি করে।
এরা নেতার কাছে থাকার সুযোগ পাওয়ার কারণে মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করে। সেসব কথাকে সত্য ভেবে গুরুত্ব দেয় দায়িত্বশীল নেতারাও। যাছাই করে না সত্য-মিথ্যা। পরিণামে দলের একজন বিশ্বস্ত ও ত্যাগী কর্মী নেতার কাছে বেঈমান বলে চিহ্নিত হয়। অপরদিকে বেঈমানরা হয়ে উঠে বিশ্বস্ত ও ক্ষমতাসীন। দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে হয়ে উঠে টাকার কুমির। তখন তাদের থামাতে হিমসিম খেতে হয়। ততদিনে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে এরাই এলোমেলো করে দেয় ভোটের মাঠ, রাজনীতির পরিবেশ। কান কথায় জ্বলেপুড়ে অঙ্গার হয় সোনার বাংলা। কে নেতার পক্ষের লোক, কে বিপক্ষের— তা যাছাই করতে এক যুগ দুই যুগ সময় লেগে যায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। সারাদেশের ৩০০ জন এমপির উচিত হযরত ওমর (রাঃ) ‘র মত ঘুরে ঘুরে মানুষের সুখদুঃখ দেখে এলাকার উন্নয়ন ও জনসেবা করা।
নিজেকে মানুষের সেবক বলে জনসেবার বক্তব্যে দাবী করলেও আসল চিত্র ভয়াবহ। বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এলাকার বহু নিরপরাধ মানুষও শান্তির পরিবর্তে পায় মামলা, হামলা ও জেল-জুলুম। সাধারণ জনগণের খাদেম হয়ে ওরা জনগণকে সেবা দেয় না, বরং শোষণ করে। এই ধরণের শোষণ ও বঞ্চনা উপহার দিয়ে শত উন্নয়ন করলেও সাধারণ ভোটাররা এসব লোককে ভোট দেয় না। প্রয়োজন হয় কেন্দ্র দখলের। মানুষের শরীরে যাতনা আর মন মন্দিরে গভীর ক্ষত উপহার দিলে, ভোট পাওয়ার আশা দুরাশায় পতিত হয়। যার ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত নৌকা অপমানিত হয়, বিপুল ভোটে হেরে মোশতাকদের চতুর কৌশলে। মাঝখান দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে জয় তুলে নেয় বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। দলের জন্য, বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের জন্য যারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে, তারা জীবন দিয়ে হলেও নৌকাকে জিতিয়ে আনে। দল ও বঙ্গবন্ধু কন্যাকে উপহার দেয় বিজয়। আর যারা দল ও নেত্রীর আদেশ অমান্য করে মোশতাক সাজে, নৌকা ডুবিয়ে নিজে জিততে চায়, তারা আগেপরে কখনোই আওয়ামী লীগের ছিল না। তাদের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হুশিয়ারী। এরা ছাড় পাবে না। শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা আমি দিয়েছি, নৌকাকে সবাই মিলে পাশ করাতে হবে। সেই জায়গায় নৌকাকে হারাতে খুব কাছের মানুষগুলো যখন বেঈমানী করে, তখন বঙ্গবন্ধুর কথার সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়, সবাই পেয়েছে স্বর্ণের খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি।
এসব চোরের খনিগুলোকে দল থেকে ঘাড় মাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার জন্য স্বয়ং বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই বলে দিয়েছেন। শেখের বেটি আরো বলেন, এরা মামলার ভয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে মৌসুমী পাখির মত দলে আসে। এসেই দলের ত্যাগী ও দূর্দিনের কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা রটিয়ে, খুনাখুনি করে দলের মাঝে বিভাজন তৈরী করে। তাই তাদের থেকে সাবধান। এসব মৌসুম পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে দলে এলেও এরা দলের ক্ষতি ছাড়া উপকার করে না। এদের কাছে ক্ষতবিক্ষত হয় দল, নেত্রী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও জাতির পিতার সোনার বাংলার স্বপ্ন। সর্বোপরি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে ক্ষমতার প্রয়োগ। এলাকায় ক্ষমতার প্রয়োগ দায়িত্ব প্রাপ্ত সাংসদ বা ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমেই করা উচিত। যেখানে দলের জনপ্রতিনিধি নেই, সেখানে দলের প্রধান শেখ হাসিনার আদেশ ও নির্দেশগুলো, দলীয় কর্মসূচিগুলো দীর্ঘ সময় দলকে সময় দেয়া বিশ্বস্ত ও জনবান্ধব নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে প্রয়োগ করলে উপকৃত হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সারা দেশের সাধারণ জনগণ।
তার পাশাপাশি দলীয় প্রতীকের সমর্থন ও ভোট বাড়বে নীরবে। দলের ফাউন্ডেশন হবে মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী। দলের একজন অতি ক্ষুদ্র কর্মীও যেন প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন পায়, দলের সুবিধা পায়; তা নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় নির্বাচনের সময় রাতদিন নিবিড়ভাবে যে সকল কর্মীরা কাজ করে, তাদের মধ্যে অনেকেই আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায়— আমরা কাজ করেও কিছু পাই না। কিন্তু যারা নির্বাচনের সময় ঘরে বসে ছিল, তার বিভিন্ন পদপদবী পায়, টিআর/কাবিখা বা অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পায়। এখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুদিন চলছে।
দল তিন মেয়াদে ক্ষমতায় আছে। এমন সময়ও যখন দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মীরা আক্ষেপ করে এসব কথা বলে, তখন আশংকা মিশিয়ে বলতে হয়— এদের দুঃখ কবে ঘুচবে? কবে ওরা দলের সুবিধা পাবে। আরো একটা বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়, দলের সুবিধা যারা পায়, তারা বারবার পায়। আর যারা পায় না, তারা একবারও পায় না। এবিষয়ে নজর দেয়া জরুরী। নইলে দলীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ রয়েই যাবে। যার ফলে দল এগুবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে, সঠিক স্পিড পাবে না। আমার প্রশ্ন— এভাবে দল কতদূর এগুবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে দলের তৃণমূল পর্যন্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দকে বিনীতভাবে অনুরোধ করব এ বিষয়গুলোতে নজর দিন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন পূরণ করুন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।