শরণখোলায় সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ৬ বিয়ে করা প্রতারক গ্রেফতার মারুফ শেখ (৪০) হাতিয়ে নিয়েছেন অর্ধকোটি টাকা। নিজেকে কখনো র্যাব আবার কখনো সেনা কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন তিনি। বিজিবি’র সদস্য পদ থেকে চাকরিচ্যুত হন ২০১৪ সালে। এর পর থেকে শুরু করেন প্রতারণা। আর এই প্রতারণার জন্য নিরাপদ এলাকা হিসেবে বেছে নেন শরণখোলাকে। এখানকার প্রত্যন্ত গ্রামের সহজ-সরল পরিবারে কৌশলে ঢুকে ভূঁয়া কর্মকর্তার পরিচয়ে এই পর্যন্ত ছয়টি বিয়ে করেছেন।যৌতুক এবং ওই সব পরিবারের আত্মীয়-স্বজনের সন্তানদের সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন অর্ধ কোটি টাকারও বেশি।
তার এই প্রতারণা এলাকাবাসী কিছুটা আঁছ করতে পারায় আত্মগোপনে চলে যান তিনি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন প্রতারক মারুফ শেখ। খুলনার ফুলতলা থানার দামুদার এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শরণখোলা থানা পুলিশের একটি দল অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করতে সক্ষম হন। জিজ্ঞাসাবাদের পর শুক্রবার (৯জুলাই) তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রতারক মারুফ শেখ বাগেরহাট সদর থানার শ্রীঘাট এলাকার মৃত রমজান আরী শেখের ছেলে।
শরণখোলা থানা সুত্রে জানাগেছে, ১৯৯৫ সালে দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বাংলাদেশ রাইফেলসে (বিডিআর) নিয়োগ পাওয়ার পর রংপুরে যোগদান করেন মারুফ। ২০০৪ সালে খুলনার ফুলতলার দামুদার এলাকার সালাম সরদারের মেয়ে নূপুর বেগমকে বিয়ে করেন। সেই ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহনের পর তালাক দেন নূপুরকে। এর পর ২০১৪ সালে নেত্রকোনা থাকা অবস্থায় চাকরিচ্যুত হন। চাকরি হারানোর পর থেকেই প্রতারণা পথ বেছে নেন।
প্রতারণার মাধ্যমে সে ২০১৮ সালে সুন্দরবন সংলগ্ন শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের তাফালবাড়ী গ্রামে একটি, ২০১৯ সালে সোনাতলা গ্রামে একটি এবং ২০২০ সালে খুড়িয়াখালী গ্রামে একটি ও উত্তর তাফালবাড়ী গ্রামে একটিসহ পাঁচটি বিয়ে করেন। সর্বশেষ প্রতারক মারুফ নাম পরিবর্তন করে নিজেকে জাকারিয়া নামে আরো একটি বিয়ে করেন। এই শশুর বাড়ি থেকে ৪ লাখ ৩০হাজার টাকা এবং ৭৫ হাজার টাকা স্বর্ণালঙ্কার যৌতুক নিয়ে ২০/১২/২০২০ তারিখ পালিয়ে যান।
এরপর সেই স্ত্রী (২৬) বিভিন্ন স্থানে খুঁজে কোথাও স্বামীর সন্ধান না পেয়ে এবছরের ১৫জুন শরণখোলা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। এই মামলার সূত্র ধরে তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় পুলিশ ওই প্রতারককে আটক করে।
শরণখোলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইদুর রহমান প্রতারক মারুফ শেখকে ফুলতলা থানা পুলিশের সহযোগিতায় খুলনার দামুদার এলাকার একটি বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আটক করা হয়।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে ভূঁয়া সেনাবাহিনীর মেজর, র্যাব গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তা ও বড়মাপের ব্যক্তি পরিচয় দিয়ে শরণখোলায় ছয়টি বিয়ে করেছে। প্রত্যেক স্ত্রীর পরিবার থেকে যৌতুক হিসেবে এবং তাদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনের সন্তানদের সেনাবাহিনীতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে এপর্যন্ত স্বর্ণালঙ্কারসহ ৫৪লাখ পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।