কি আর কমু গো ভাই? আমরা রূপগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরের বাসিন্দারা অনেক বিপদে আছি।আমাগো দেখার কেউ নেই।আমরা নিজ দেশে পরবাসীর মত।নদীতে পচা পানি।দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যায় না।মশার জ্বালার কথা আর কি কমু? দিনে দুপুরেই কামড়ায়।রাত হলে তো কথাই নাই।
একটু বাতাস ছুটলে বালির জ্বালায় ঘরে বাহিরে থাকা দায়।এরওপর নতুন আরো জ্বালা,দিনে কুকুরের জ্বালা আর রাতের বেলায় শিয়ালের খেলা/ উপদ্রব।আর ভাল লাগে না।আল্লাহ ছাড়া আমাগো আর কেউ নাই।এমনি করে মনের দুঃখে কথাগুলো বলছিলেন উপজেলার ভোক্তভুগী আবুল হোসেন।
দিনে কুকুর আর রাতে শিয়ালের উপদ্রবে অতিষ্ঠ নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জবাসী।জলাতঙ্ক প্রতিরোধে কুকুরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হলেও কুকুরের কামড়ে আহত হওয়ার শঙ্কায় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ।বেশি আতঙ্ক ছোট শিশুদের নিয়ে।ছোট্ট শিশু মাহির বলেন,কুকুরের ভয়ে দিনের বেলায় ঘর থেকে বের হতে পারি না।দলবেধে যেভাবে খা খা করে এগিয়ে আসে ভয়েই সামনে দিয়ে যাওয়া যায় না।
আরেকজন হামিম বলেন,বেওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।কি কারণে জানি না দলবদ্ধ কুকুর ভয়ঙ্কর আচরন করছে।বিগত ১ মাসে ২০ জনকে কামড়েছে এ কুকুর।উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ১২ টি ছাগলকেও কামড়ে দিয়েছে ভয়ঙ্কর কুকুরদল।এ তো গেল দিনের চিত্র,রাতের চিত্র ভিন্ন।
উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের নানী দাদীরা ছোট শিশুদের ঘুম পাড়াতে রাক্ষস-খোক্কস,দৈত্য-দানবের গল্প না বলে শেয়ালের গল্প বলছে।শুধু গল্প নয়,শঙ্কাও আছে। এখানে সন্ধ্যা নামলেই শিয়ালের উপদ্রব বেড়ে যায়।দল বেঁধে শেয়াল বাড়ি-ঘরের আনাচে কানাচে ঘোরাফেরা শুরু করে।
এতে হাঁস,মুরগী,গরু,ছাগল এমনকি ছোট শিশুদের নিয়েও ভয়ে আছে বাসিন্দারা।সন্ধ্যার আগেই গবাদিপশু ও ছোট শিশুদের নিয়ে ঘরে চলে আসতে হয়।শেয়াল-কুকুরের উপদ্রব নিয়ে ফজল মিয়া বলেন,কী আর করমু ভাই,দিনের বেলা কুত্তা আর রাইতে হিয়ালের (শিয়াল) তা-বে আমরা আছি বড়ই যন্ত্রণায়।
এসবের কারণে পশু-পাখিসহ বাচ্চাদের নিয়ে সারা দিন দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়।উপজেলার তালাশকুট এলাকার সারমিন আক্তার নামের এক গৃহবধূ বলেন,ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে ভয়ে থাকি।যে পরিমাণ শেয়াল-কুকুর বেড়েছে এলাকায়,না জানি কখন কাকে কামড়ে দেয়!সন্ধ্যার পর শেয়াল বেড়ে যায়।বেশ কিছু দিন আগে উপজেলার খামারপাড়া এলাকার এক মাদ্রাসার ছাত্র শিয়ালের কামড়ে ভোগে অবশেষে মৃত্যুবরণ করে।
রূপগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকাগুলোতে কুকুর বেশি থাকলেও শেয়াল তেমন একটা নেই।তবে উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের খামারপাড়া,নগরপাড়া,কামসাইর,দেইলপাড়া,বাঘবাড়ী,পিরুলিয়া,ছনেরটেক, কায়েতপাড়া সহ বিভিন্ন গ্রামে শেয়াল-কুকুরের উপদ্রব বেশি।
এব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রিগেন মোল্লা বলেন,ভাদ্র মাসে কুকুরের উপদ্রব একটু বেড়ে যায়।মানুষকেও কামড়ে দেয়।তাই আমরা উপজেলার প্রতিটি এলাকায় কুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়েছি।ভয়ের কিছু নেই।সচেতন থাকতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ নুশরাত জাহান বলেন,শেয়াল কুকুরের উপদ্রব বৃদ্ধি সত্যিই আতঙ্কের বিষয়।বিশেষ করে শিশুরা অনেক ভয়ে থাকে।প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে বিষয়টি সমাধানে কথা বলব।তবে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।সর্বক্ষেত্রেই সচেতনতার বিকল্প নেই।